অনুগল্প ‘বিবেক’ ।। মুসতাক আহমদ

শিল্প-সংস্কৃতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ছোট বেলায় ছেলেটি বিবেক নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রখর হিতাহিত জ্ঞানের অধিকারী সে। ন্যায়-অন্যায় নিরসনে বন্ধুরা মান্য করতো। নফসে আম্মারা তাকে কখনো বিপথে নিয়ে যেতে পারেনি।

হঠাৎ এক রূপসীর প্রেমে পড়ে সে। নাম লাবনী। এই তরুণীর লাবণ্য প্রাণকাড়া। বন্ধুদের অনেকেই তার সৌন্দর্যে ডুবে ডুবে জল খেয়েছে।

সস্তা প্রেমে সে বিশ্বাসী নয় লাবনী। তবুও বিবেকের প্রতি কেন এতটা সহজেই আকৃষ্ট হয়েছে, তা নিয়ে মাঝে মধ্যে চিন্তা করে ।

লাবনী এক প্রতিবেশির মাধ্যমে ছেলেটিকে বিবেক বলেই জেনেছে। ঘনিষ্ট হবার অনেক পরে মারুফ নামের সাথে পরিচিত হয়।

প্রখর বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি সম্পন্ন ছেলের প্রেমে পড়ে লাবনী নিজেকে নিয়ে খানিকটা গর্ব করে। অল্পদিনেই তাদের প্রেম পরিণয়ে রূপ নেয়।

মারুফ জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমায়। খুবই পরিশ্রমের কাজ হলেও অর্থনৈতিক সাফল্য আসে দ্রুত। লাবনীর জন্য বাহারি উপহার পাঠাতে সে কোন রকম কার্পণ্য করেনি।

তারা একে অপরকে প্রচন্ড মিস করে। টেলিফোনে হামেশা আলাপ হয় ভালোবাসার কত কথা। মারুফ বার্ষিক ছুটিতে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য স্ত্রীকে জানায়নি।

লাবনী অনেক দিন থেকে এক বিশেষ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিনের দূষণ, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি কারণে হতে পারে। মুখের মৃত কোষ ত্বকের উপরে জমে গেছে। তার চেহারার লাবণ্য হারিয়ে দ্রুত কদাকার হয়ে ওঠেছে।

কোনভাবেই ভালোবাসার মানুষকে হতাস করতে চায়না লাবনী। সে জানে নিজের ত্বক সেনসিটিভ। অ্যালোভেরা জেল, গ্রিন টি ইত্যাদি ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই মুখের প্রদাহ কমেনি।

মারুফ টেলিফোনে প্রায়শ লাবনীকে স্বাস্থ্য সচেতনতার পরামর্শ দেয়। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম ও ঘুমের অভাবে অপুষ্টি জনিত সমস্যা থেকে সতর্ক করে। এতে আরো দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয় লাবনী। কিন্তু স্বামীকে তা জানতে দেয়নি।

মারুফ অবশ্য জেনে যায় বন্ধু ও প্রতিবেশীর মাধ্যমে। লাবনীকে টেলিফোনে বলে, একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সে চোখে-মুখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। এক ধরণের অন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকার কথাও জানায়।

মারুফের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাবার কথা শুনেও লাবনী তেমন ব্যথাতুর হয়না। নিজের অবস্থা বিবেচনায় ভালোবাসা ধরে রাখার সম্ভাবনায় স্বস্তি অনুভব করে।

দেশে ফিরে মারুফ প্রচন্ড মমতায় স্ত্রীকে আগলে রাখে সবসময়। লাবনী মনে করে চোখের কারণে হয়ত তার কদাকার চেহারা সে অবলোকন করতে পারছেনা। এভাবে চলতে থাকে তাদের ভালোবাসার সংসার।

মারুফের বন্ধুরা লাবনীর ফ্যাকাশে অবস্থায় আরেকটি বিয়ের কথা বলে। একজন সফল প্রবাসী হিসেবে এমন ম্লান ও বিবর্ণ স্ত্রী নিয়ে কেমনে তার জীবন চলবে? ভবিষ্যতের কথা ভাবার পরামর্শ দেয়।

বন্ধুদের নানা কথার জবাবে মারুফ তাদের বলে, লাবনীকে সে জানিয়েছে, এক সড়ক দূর্ঘনায় দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে গেছে। এতে করে লাবনী কোন রকম সংকোচন ছাড়াই তার সাথে সংসার করছে।

একজন সুন্দর মনের লাবনীকে কেবল চেহারা দেখে ভালোবাসেনি। তাই মনের মানুষের স্বস্তির জন্য অন্ধের অভিনয় করে চলেছে বলে জানায় মারুফ।

বন্ধুরা এমন নিখাদ ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তাকে জাপটে ধরে। বলে, এজন্য সবাই তোমাকে ‘বিবেক’ বলে ডাকে!

* মুসতাক আহমদ ব্যারিস্টার অ্যাট ল, লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কাউন্সিলর এবং ওভারভিউ ও স্ক্রুটিনি কমিটির চেয়ারম্যান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *