ইসলামী প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

আকাশ হাসান

বলা হয়, ইউরোপীয় রেনেসাঁকালীন ইটালীতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) ১৪৯৫ সালের কাছাকাছি একটি হিউম্যনোয়েড রোবটের পরিকল্পনা করেছিলেন। যেটাকে রোবটের প্রাথমিক ধারণা সম্পর্কে বিবেচনা করা হয়। তবে আমরা অনেকেই জানিনা, ভিঞ্চি’র থেকে ২৮৯ বছর আগেও একজন মুসলিম মনীষী রোবটের প্রাথমিক ধারণা দিয়েছিলেন। তার নাম আল-জাজারী।

আল-জাজারী সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানা যায় না। তবে যতটুকু জানা যায়, তার সম্পূর্ণ নাম বাদি’ আয-জামান আবুল-‘ইয ইবনে ইসমাইল ইবনে আর-রাজাজ আল-জাজারী। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম বহুবিদ্যাবিশারদ, আলিম, আবিষ্কারক, যন্ত্রপ্রকৌশলী, কারিগর, শিল্পী ও গণিতবিদ। তিনি মেসোপটেমিয়ার জাযিরায় মতান্তরে তুরস্কের থর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১২০৬ সালে উদ্ভাবনী যান্ত্রিক আবিষ্কারগুলোর জ্ঞানের বই কিতাব ফি মা’রিফাত আল-হিয়্যাল আল-হানদাসিয়্যাহ, (অনুবাদ ‘প্রকৌশলী কৌশলগুলোর জ্ঞানে বই’) রচনার জন্যে সর্বাধিক পরিচিত। যাতে তিনি ১০০টি যান্ত্রিক আবিষ্কার বর্ণনা করেছেন।

আল- জাজারীকে ফ্লাশ টয়লেট ও হাতিঘড়ি আবিষ্কারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইদানিংকালে তাঁকে রোবটিক্স এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রোবটিক্স হলো প্রযুক্তির একটি শাখা- যেটি রোবট সমূহের ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। পরবর্তীকালে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে রোবটিক্সের জনক বলে খ্যাত জর্জ চার্লস ডেবল (১৯১২-২০১১) সর্বপ্রথম ডিজিটাল ও প্রোগ্রামেবল রোবট ১৯৫৪ সালে আবিষ্কার করেন।

স্বয়ংক্রিয় (Automaton) যন্ত্র বলতে কোন নির্দেশ ছাড়াই নিজের থেকে কাজ করতে পারে এমন যন্ত্রকে বোঝায়। ইংরেজী Automaton শব্দটি কখনো কখনো রোবট অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

আল জাজারী ছিলেন ইসলামী স্বর্ণযুগের একজন মেকানিক্যাল প্রতিভা। যিনি ইসলামী প্রযুক্তিকে ১০০০ বছর পূর্বে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ১১৩৬ সনে জন্মগ্রহন করেন। ১২ শতকে তার যান্ত্রিক সৃষ্টিগুলোকে ইসলামী স্বর্ণযুগের সবচেয়ে আশ্চর্যান্বিত করা যান্ত্রিক সৃষ্টি হিসাবে গণনা করা হয়। তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারগুলো ছিল পানি দ্বারা চালিত ঘড়ি, হাত- ধোয়ার যন্ত্র যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটির ব্যবহারকারিকে সাবান এবং তোয়ালে সরবরাহ করত। এছাড়া তার আর একটি আবিষ্কার যেটিকে প্রাচীনকালের রোবট হিসেবে গন্য করা হয়। সেটি ছিল ওয়াইন সরবরাহকারী একটি মেয়ে রোবট।

১২০৬ সনে তিনি তার সকল সৃষ্টিকর্মগুলো একটি গ্রন্থ (কিতাব ফি মারিফাত আল হিয়াল আল হানদা সিয়াল) আকারে সংকলন করেন। গ্রন্থটি ছিলো তার সকল আবিষ্কার- এর তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। ১২০৬ সনে ৭০ বছর বয়সে এই মহান মুসলিম মনীষীর জীবনাবসান ঘটে।

বৃটিশ প্রকৌশলী এবং ইসলামিক ঐতিহাসিক ডোনাল্ড আর হিল (১৯২২-১৯৯৪) আল- জাজারী’র বইটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন: আল-জাজারী’র সৃষ্টিকর্মগুলো বাদ দিয়ে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যার ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।

কিতাব ফি মারিফাত আল হিয়াল আল হানদা সিয়াল গ্রন্থটি প্রকৌশলবিদ্যার এক ঐতিহাসিক সংযোজন। বইটিতে আল-জাজারী’র উদ্ভাবিত পঞ্চাশটি ডিভাইসের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। লণ্ডন বিজ্ঞান জাদুঘর আল-জাজারী’র পানিঘড়ি পুনরায় সফলভাবে নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। যেটি ১৯৭৬ সনে ইংল্যান্ডের এক ইসলামী মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *