ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাব পাস

আন্তর্জাতিক মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাব পাস হয়েছে। গাজা উপত্যকায় সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়ে গৃহীত প্রস্তাবের পাশাপাশি দেশটির কাছে সমস্ত অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

শুক্রবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ যেতে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবে। এছাড়া এতে গাজার দক্ষিণের রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

এই প্রস্তাব পাসের মধ্য দিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে এবারই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিল মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পর্ষদ। একই সঙ্গে গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি নিয়ে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রুলের কথাও উল্লেখ রয়েছে প্রস্তাবে। তাতে বলা হয়েছে, গাজায় নতুন করে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে এই আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাবটি তুলেছিল পাকিস্তান। পরিষদের ৪৭ সদস্যদেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ৬টি দেশ। আর ভারত, ফ্রান্সসহ ১৩টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। এতে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ যেতে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে। এতে বলা হয়েছে, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে মানবাধিকার পরিষদ।

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির অর্ধেকের বেশি রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। গাজার দক্ষিণের রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে প্রস্তাবে। ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, স্থানান্তর ও অন্য কোনোভাবে না পাঠাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।

জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের দপ্তরে প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম মোহাম্মদ খারাইশি। প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটের আগে তিনি বলেন, ‘এই গণহত্যা বন্ধে আপনাদের সবার জেগে ওঠা প্রয়োজন। এটা এমন এক গণহত্যা, যেটা টেলিভিশনের পর্দায় পুরো পৃথিবী দেখছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রস্তাব পাস হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল গাজায় ‘গণহত্যা’র সতর্কতা তুলে ধরে ইসরায়েলের কাছে সব ধরেণর অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বানকে সমর্থন করে।

জাতিসংঘের শীর্ষ অধিকার সংস্থাটি প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধের বিষয়ে একটি অবস্থান নিয়েছে, যে সংঘাতে ৩৩ হাজারের বেশি লোককে হত্যা হত্যা করা হয়েছে, যেটি “গণহত্যা”র শামিল। বিশ্ব আদালত মার্চ মাসে সর্বসম্মতিক্রমে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, ভূখণ্ডে দেরি না করে মৌলিক খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য, ফিলিস্তিনিরা খারাপ অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে এবং দুর্ভিক্ষ ও অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে। সুত্র: আল জাজিরা, এএফপি ও বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *