ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে শাহবাজের সাথে জারদারির তীব্র বিরোধ

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইমরান খানকে সরিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর এবার তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার। আর এর ফলে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা গঠন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হতে পারেনি।

ক্ষমতাসীন জোটের সূত্রগুলো জানায়, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) হলো মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর পর জোটের সবচেয়ে বড় শরিক। তারা নতুন ব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদ লাভের ব্যাপারে অনড় রয়েছে। বিষয়টি সোমবার পিপিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে অবগতও করেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি নতুন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি, সিনেট চেয়ারম্যান, জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও সিনেট নেতার পদগুলো দাবি করেছেন।

সূত্রটি জানায়, আসিফ আলি জারদারি রাষ্ট্রপতি হতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। বরং তিনি আগামী নির্বাচনে তার ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে সহায়তা করতে চান। এ কারণে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পদে তার দলের ফারিয়াল তালপুরকে চাচ্ছেন। আর দলের ইউসুফ রাজা গিলানিকে সিনেট চেয়ারম্যান, সিনেট হাউস নেতা হিসেবে শেরি রহমান এবং জাতীয় পরিষদের স্পিকার হিসেবে নাভিদ কামার বা রাজা পারভেজকে চাচ্ছেন তারা।

সূত্র জানায়, পিপিপি জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের এই দাবিগুলো মানা হলেই কেবল মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করবে বা মন্ত্রিসভার অংশ হবে।

শাহবাজের শপথ অনুষ্ঠানে যাদের অনুপস্থিতি নানা প্রশ্ন তুলেছে
এদিকে কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার পর সোমবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। সোমবার রাতে তার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট ভবনে ওই শপথ অনুষ্ঠান হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

শপথ অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগেই প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি অসুস্থ বোধ করছেন এবং তার চিকিৎসকরা কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। ফলে সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজারানি তাকে শপথ পড়ান।

বিবিসি উর্দু বিভাগ জানিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে আরেকজন ব্যক্তির অনুপস্থিতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

কোনো কোনো সূত্রের খবরে জানানো হয় যে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। সামরিক মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিতও করেননি বা নাকচও করেননি। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তাকে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান।

পিএমএল-এন-এর সকল সদস্য, পিপিপির বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিসহ শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে ছিলেন না আসিফ আলি জারদারিও।

নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে ইমরান খানের দল
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জং ডট কম জানিয়েছে, সোমবার পিটিআই রাজনৈতিক কমিটি একটি বৈঠক করেছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, এখন থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি।

পাকিস্তান ইনসাফ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেছেন, তিনি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাই সেখানে আর যাবেন না। বরং পিটিআই এখন তৃণমূল পর্যায় থেকে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে। এভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার সমর্থন অর্জন করতে চাচ্ছেন তারা।

সোমবার দিনে ও রাতে পিটিআইয়ের সমর্থকরা ইমরান খানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করার প্রতিবাদ জানাতে সমর্থকদের পথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইমরান খান। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানে তিনি কোনো পুতুল সরকার মেনে নেবেন না। পিটিআই জানিয়েছে, পাকিস্তানের অন্তত ৪০টি স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানে সরকার বদলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, ‘পাকিস্তানে এক সরকারের বদলে আরেক সরকার আসবে-যাবে, সেটা আমাদের চাওয়া নয়। আমরা চাই দেশটিতে সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘একটি সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, এখানে ক্ষমতায় যেই থাকুন না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’

‘চীন পাকিস্তানের পুরনো বন্ধু’
নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানের বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য বন্ধু হচ্ছে চীন। চীন সবসময়ই আমাদের বন্ধু ছিল, চিরদিন থাকবে। কেউ চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বে চিড় ধরাতে পারবে না। নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক পরিচালিত হবে। ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করার তো কোনো অর্থ নেই’ – বলেছেন শাহবাজ শরিফ। সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *