অধিকাংশ মানুষই তরমুজ খেতে বেশ পছন্দ করেন। তরমুজ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। তরমুজের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় সকলের কাছে প্রিয় ফল। তরমুজে শতকরা প্রায় ৯২ ভাগ পানি রয়েছে। যা আমাদের দেহের পানির চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। তরমুজে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-২ থাকায় শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এখান থেকে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফল হওয়ায় এটি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে।
তরমুজের পুষ্টিগুণ: তরমুজের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিম্নে তরমুজের পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো-
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, ০.২ গ্রাম আঁশ, ০.৫ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম ক্যালোরি, ১০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭.৯ মি.গ্রাম আয়রণ, ৩.৫ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ০.২ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.২ মিলিগ্রাম নিয়াসিন।
তরমুজের উপকারিতা: সকলের কাছে প্রিয় ফল তরমুজ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর উপকারিতাও অনেক। গ্রীষ্মকালে নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। নিম্নে তরমুজের উপকারিতাগুলো দেওয়া হলো-
১. শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে: যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসাবে খুব ভাল কাজ করে। এই ফল শারীরিক শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়লে শরীরের শক্তি হ্রাস পায়, তাই মৌসুমে বেশী করে তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
২. পানিশূন্যতা দূর করে: তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি আছে। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।
৩. ত্বক সজীব রাখে: তরমুজে বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বককে সজীব রাখে। পাশাপাশি ত্বকের যে কোন সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায্য করে। লাইকোপিনসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে মুখে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না।
৪. চোখ ভাল রাখে: তরমুজে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিনয়েড। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভাল থাকে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যারা রাতকানা রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করলে মূল্যবান চোখ দীর্ঘদিন ভাল থাকবে।৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: তরমুজে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
৬. কিডনি সুস্থ রাখে: তরমুজের রস কিডনির বর্জ্য মুক্ত করে। তাই কিডনিতে পাথর হ’লে চিকিৎসকগণ ডাবের পানির পাশাপাশি নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় কিডনি সচল রাখতে তরমুজ ভাল ভূমিকা পালন করে।
৭. শরীরের চর্বি কমায়: তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড, যা শরীরের কোলেস্টরেল ও চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া তরমুজে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের জমে থাকা কোলেস্টরেল কমাতে সহায়তা করে।
৮. ব্যথা নিরাময় ও শরীরের টিস্যু সুরক্ষা: ব্যথা নিরাময় ও শরীরের টিস্যু সুরক্ষায় তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনি সি, যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত, ব্যথা নিরাময়ে এবং ত্বক, দাঁত ও মাংসপেশীর সুরক্ষায় প্রতিষেধক। ভিটামিন সি শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন। এই ভিটামিন মানব দেহে জমা থাকে না। তাই নিয়মিত তরমুজ খেয়ে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা যায়।
৯. স্নায়ু ও মাংসপেশী সুরক্ষায়: তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ইলেকট্রো পাওয়ার তৈরি করে, যা শরীরের মাংসপেশী ও স্নায়ু সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।
১০. হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন: সঠিকভাবে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজ হৃদযন্ত্রে সঠিকভাবে রক্তপ্রবাহে সহায়তা করে। ফলে হৃদযন্ত্রে ব্লক হওয়ার প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পেয়ে থাকে।
১১. হাড় মযবূত করে: তরমুজ লাইকোপিনো নামক লাল উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তাই তরমুজ হাড় গঠন ও মযবূত করতে অত্যন্ত সহায়ক।
এছাড়াও তরমুজের খোসায় রয়েছে দারুণ পুষ্টিগুণ।
অনেকেই হয়তো জানেন না, শুধু তরমুজে নয়, এর খোসাতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। তরমুজ খেতে গিয়ে অনেক সময়ে ভুল করে তরমুজের সাদা অংশ পেটে চলে যায়।
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলেন, তরমুজের বাকি অংশের তুলনায় খোসার সাদা অংশ অনেক বেশি উপকারী। এতে ফাইবারের পরিমাণ বাকি তরমুজের তুলনায় অনেক বেশি। এতে সুগারের মাত্রাও কম। স্বাদ নেই বলে তরমুজের যে সাদা অংশটি সবাই ফেলে দেয় ওটাই আসলে সবচেয়ে বেশি উপকারী।
ফেলে না দিয়ে যে কারনে খাবেন তরমুজের খোসা:
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে: তরমুজের খোসায় ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার বিপাকক্রিয়াতেও দারুণ সাহায্য করে। যারা ওজন কমাতে চাইছেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন তরমুজের খোসা। তবে খোসার সাদা অংশটি শুধু খাওয়ার উপযোগী। বাইরের সবুজ অংশটি নয়। ভুল করে সবুজ অংশটি খেয়ে ফেললে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: তরমুজের খোসায় রয়েছে ভিটামিন সি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। ভাইরাসজনিত রোগের সঙ্গে লড়তে খেতে পারেন তরমুজের খোসার সাদা অংশ।
৩. ত্বকের যত্নে: বয়স বাড়লে ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। বিভিন্ন দাগছোপ দেখা দেয়। তরমুজের খোসায় রয়েছে লাইকোপেন, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান। ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত উপকারী।
৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে: তরমুজের খোসায় রয়েছে ‘সাইট্রুলিন’ নামক এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।