রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ৬২ বছর বয়সী ইয়েভজেনি প্রিগোশিন বলেছেন, তাঁর বাহিনী এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়ার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। এক অডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমাদের এ চলার পথে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তার সবকিছুকে ধ্বংস করে দেব।’
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনে ট্যাংক, সাঁজোয়া যুদ্ধযান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে অবরোধ করতে দেখা গেছে দেশটির বেসরকারি সামরিক সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ওয়াগনার প্রধান ইভগেনি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে ‘সশস্ত্র অভ্যুত্থানের চেষ্টা’র অভিযোগ ওঠার পরে এমন চিত্র দেখা গেলো। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি বলছে, শনিবার (২৪ জুন) সকালে প্রকাশিত একটি ক্লিপে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন সৈন্যের সঙ্গে একটি চৌরাস্তায় দুটি ট্যাংক দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে একটি সামরিক ট্রাক ও সাঁজোয়া যুদ্ধযান দেখা যায়। ভিডিওটি রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক জেলার সদর দপ্তরের কাছে ধারণ করা হয়েছে।
আরেকটি ভিডিওতে রাস্তায় একটি রুশ যুদ্ধ ট্যাংক, বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যুদ্ধযান, জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম বোঝাই পিকআপ দেখা গেছে। রোস্তভ-অন-ডন শহরের আরও বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সামরিক ইউনিফর্ম পরা সশস্ত্র ব্যক্তিরা রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং একটি পিকআপ ট্রাক রাস্তা অবরোধ করছে।
এসব সৈন্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিল। ওয়াগনার বা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সদস্য কি না জানতে চাইলেও তারা তা জানায়নি। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল বলছে, ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইভগেনি প্রিগোজিনের বলেছেন, তাদের ২৫ হাজার সৈন্য রাশিয়ার ‘দুষ্ট সামরিক প্রধানদের’ সেনাবাহিনী থেকে বের করে দিতে মস্কোতে পদযাত্রা করবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তাদের পথে কেউ বাধা দিলে তার বাহিনী তাদের ধ্বংস করবেন। তারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না। তিনি বলেছেন, ইভগেনি প্রিগোজিন গৃহযুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ এনেছে মস্কো।
এর আগে শুক্রবার (২৩ জুন) ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন ঘোষণা করেন, তার ২৫ হাজার সদস্যের শক্তিশালী বাহিনী রোস্তোভ-অন-ডন শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারা বিনা বাধায় সেখানে যেতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা এখানে এসেছি। আমরা চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সোইগুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। যতক্ষণ তারা না আসছেন, আমরা এখানে থাকব, আমরা রোস্তোভ অবরুদ্ধ করব এবং মস্কোর দিকে এগিয়ে যাব। ’
প্রিগোজিনের দাবি, তার বাহিনী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। যদিও এর সপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।
প্রসঙ্গত, ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন তার লোকদের উপর রুশ সৈন্যদের মিসাইল হামলার অভিযোগ তোলেন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মস্কোতে সামরিক পদযাত্রার ঘোষণা দেন। তাদের ওপর হামলা চালানো ‘দুষ্টু প্রতিরক্ষা প্রধানদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মস্কোতে পদযাত্রা করতে চান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মিসাইল হামলার কথা অস্বীকার করেছে। সেইসঙ্গে ওয়াগনার প্রধানকে সবরকম ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধের আহ্বান জানায়।
সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস। ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির বাহিনীকে প্রিগোজিনের আদেশ উপেক্ষা করে তাকে গ্রেফতার করার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
তার এই হুমকির পর রোস্তভের সব বাসিন্দাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। মস্কোর দক্ষিণে লিপেটস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্টামনভ বলেছেন, অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলছি।