নগরীর সাগরদিঘিরপাড়ে সরকারি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার অনুসারী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার জুমআর পর থেকে দফায় দফায় ২ থেকে আড়াইঘন্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ। এসময় ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। এছাড়া ৪টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সাগরদিঘীরপাড় এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে একটি প্রকল্পের নাম দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করছিলেন বিএনপি নামধারী কয়েকজন নেতাকর্মী। ঐ স্থানেই বিগত দিনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে কোপানো হয় ও জিম্মি করে আদায় করা হয় মুক্তিপণ। ঐখানে একজন নারীকে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনায় ২ জনকে আটকও করে পুলিশ। সম্প্রতি ঐ স্থানে বিএনপি নেতা লল্লিক আহমদ চৌধুরী ও বহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জামাল আহমদ খানের নেতৃতে ‘ড্রীম সিটি’ নামে ভবন নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়। ঐখানে একটি এক তলা এবং একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। ‘ড্রীম সিটি’ নামে ভবন নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে একটি এক তলা এবং একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। তবে ওই দুটি ঘরে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হতো এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার ঐ স্থানে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জামাল আহমদ খানের নেতৃত্বে বেশকিছু দলীয় নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ককটেল নিয়ে মহড়া দিতে যান। এই খবর স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা ঐ দুটি ঘরের বাউন্ডারীর সামনে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ করেন। তখন বাউন্ডারির ভেতর থেকে জনতার উপর ককটেল ছুড়া হলে সর্বত্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী তখন তাদের উপর চড়াও হলে ঐ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তার অনুসারীদের নিয়ে পালিয়ে যান। উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা তখন তাদের রেখে যাওয়া ৪টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। একই সাথে সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন তারা। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া এসময় উভয়পক্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মূলত ওই জায়গাটি মৎস অধিদপ্তরের। কিন্তু যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তার দলের মানুষজন ওই জায়গাটি দখলে নেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসটিএস গ্রুপ নামে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঐ সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছিলো। দখলবাজরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে জানা যায়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল জামাল আহমদ খানের বিরুদ্ধে। পরে সেখানে তিনি ‘ড্রিম সিটি’ নাম দিয়ে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ শুরু করেন। এর আড়ালে চলতে থাকে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ। ফলে ঐ দখলবাজদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ফুসে উঠতে থাকেন। এর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে শুক্রবার। সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাজা কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে ঐ জায়গা দখলে নিতে এই হামলা হয়েছে এবং এর জন্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম বাবুলকে দায়ী করছেন বিএনপি নামধারী দখলদার পক্ষ। এর আগে জামাল আহমদ খান সকালে ফেইসবুকে জাপা নেতা বাবুলকে ইঙ্গিত করে ফেইসবুকে পোষ্টও দেন।
এ বিষয়ে বৃহত্তর সাগরদিঘীরপার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এর সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ কিংবা সম্পর্ক নেই। আগে আওয়ামী লীগের বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষের লোকজন দখলে রেখেছিল। তবে কোন স্থাপনা নির্মাণ করেনি। শুধুমাত্র সিকিউরিটি রেখেছিল। তাই এলাকাবাসী তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক বহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জামাল আহমদ খান ও বিএনপি নেতা লল্লিক আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানটি দখলের পর অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। ফলে এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে আজ প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু তাদের উপরও হামলা করা হয়েছে। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফিজাতেও হামলা করা হয়েছে। আমি মামলার দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে এসএমপির মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন- দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। এখন সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো পক্ষ অভিযোগ বা মামলা দায়ের করলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ঐ জায়গাটি মূলত সরকারি। আগে এক পক্ষ দখলে রেখেছিল, এখন অপরপক্ষ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এখানে একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে এলাকাবাসী এক হয়ে অবৈধ স্থাপনাটি ভাঙ্গতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এর সাথে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই। এর সাথে যদি কোন নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র: জালালাবাদ