সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গণজোয়ার সৃষ্টি করে মজলুম গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান ইউকে জমিয়তের

প্রবাসী বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইউকে জমিয়তের প্রতিবাদ সমাবেশে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে মজলুম গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়ানো আহবান জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেছেন সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গণজোয়ার সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনের অসহায় গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ গ্রহন করেন। ইউকে জমিয়তের সভাপতি ডক্টর মাওলানা শুয়াইব আহমদের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাফিজ মাসরুরুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ। বিশেষ বক্তা হিসেবে সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী, সাবেক এমপি পদপ্রার্থী ও ফিলিস্তিনীদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আজমল মাসরুর, দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী, ইউকে জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট মিডিয়া ভাষ্যকার মুফতি আবদুল মুনতাকিম, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ইমদাদুর রাহমান আলমাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শায়খ ফয়েজ আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বক্তাগন বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় মজলুম মানুষের উপর পরিচালিত নৃশংস গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী পাশবিকতা পৃথিবীতে বর্বরতার জঘন্য নজির স্থাপন করেছে। সাম্রাজ্যবাদের যোগসাজশে চরমপন্থী ইহুদিবাদী শক্তি যেভাবে জাতিগত মুসলিম নির্মূলাভিযান অব্যাহত রেখেছে, তার দ্রুত প্রতিকারে এগিয়ে আসা সমগ্র মানবজাতির আবশ্যিক দায়িত্ব। শতাব্দীর সবচেয়ে বীভৎস এ গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলীকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন না করলে মুসলিম ও মুমিন হিসেবে আমরাও জবাবদিহি করতে হবে।

বক্তার বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নরপশুদের হিংস্র উল্লাস ইতিহাসে সকল সীমা অতিক্রম করেছে। সকল আদীমতা হার মেনেছে এই নির্মমতার কাছে। ক্ষতবিক্ষত, ছিন্নভিন্ন ও অগ্নিদগ্ধ গাজার ভয়াল বিনাশ যজ্ঞের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কার্যকর প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা সকল মুসলিমের উপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ দায়িত্ব।

ইসরায়েলকে একটি ভয়ঙ্কর কলোনি ষ্টেট উল্লেখ করে বক্তার বলেণ, অবৈধ দখলদারিত্ব ও অন্যায় উচ্ছেদাভিযানই তার মূল ভিত্তি এবং মৌলনীতি। সমগ্র মানবজাতি এই উপনিবেশ রাষ্ট্রের কারণে মারাত্মক ভাবে বিপন্ন। সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী হয়ে আরব দেশগুলো এক ধরনের নিরব ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় জমিয়তের নির্বাহী সদস্য ও ইউকে জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল করিম মামরখানী, ইউকে জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শামসুল আলম কিয়ামপুরী, আল্লামা হবিগঞ্জী রহমাতুল্লাহি আলাইহির জামাতা মাওলানা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মুফতি শাহিদুর রহমান মাহমুদাবাদী, বিশিষ্ট আইনজীবী লিয়াকত সরকার, কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী, ইউকে জমিয়তের ট্রেজারার হাফিজ রশিদ আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মইন উদ্দিন খান, ইউকে জমিয়তের লন্ডন মহানগর শাখার সেক্রেটারি মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, ইউকে জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী প্রমুখ।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা আরো বলেন, যুক্তরাঝ্যের প্রতিটি এলাকায়, মুসলিম দেশ সমূহ এমনকি বিশ্বের সর্বত্র প্রতিবাদ- সংগ্রামের ঝড় তুলে সকল সরকার গুলোকে গণহত্যা রোধের উপায় অবলম্বনের জন্য সফল ভূমিকা পালনে বাধ্য করতে হবে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠারজন্য আন্তর্জাতিক জনমতক গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা-সহ সর্বাত্মক সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেহেতু ফিলিস্তিনের বিক্ষোভ করে চলেছেন, পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন, এজন্য ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে সরকারের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। পাঠ্য বই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে ইসরাইলের সহযোগী সকল প্রকার পন্যের স্বতঃস্ফূর্ত বয়কটের অঙ্গীকার করতে হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে প্রস্তাবাবলী পাঠ করে শোনান মুফতি আবদুল মুনতাকিম ও মজলুম ফিলিস্তিনীদের জন্য সম্মিলিত মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রধান অতিথি মাওলানা হাফিজ মাসরুরুল হক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *