রাত-দিনের বিভিন্ন সময়ে বোমার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ ও অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্পট সেন্টমার্টিন। আর এতে চরম আতঙ্কে আছেন দ্বীপবাসী। পাশাপাশি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে নাফ নদী ঘেষা টেকনাফ এলাকাজুড়েও।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দিনে-রাতে টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ভেসে আসে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের জলসীমায় যুদ্ধ জাহাজ দেখে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ সীমান্তজুড়ে তীব্র আতংক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের বিপরীতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সিমান্তে প্রতিদিন মিয়ানমার নৌবাহিনীর ৫/৬ টি যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, জাহাজগুলো দিনের বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার জলসীমায় সমুদ্রের একদিক থেকে আরেকদিকে টহল দিচ্ছে। সূত্রমতে, গত ১৩ জুন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে জাহাজগুলো দেশটির জলসীমায় অবস্থান করছে।
এই বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমার জলসীমায় কয়েকটি জাহাজ গত দুদিন ধরে অবস্থান করছে। শুক্রবার সকালেও সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে স্থানীয়রা এসব জাহাজ সাগরে দেখতে পান। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার জলসীমায় একাধিক যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান করার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার ঘটনায় দ্বীপবাসীর মধ্যে চরম আতংক সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে সেন্টমার্টিনের বিশিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবদুল মালেক তার ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওটি ধারণ করা হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি থেকে।
এই বিষয়ে আবদুল মালেক বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানমারে চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তাতে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। এমনকি তাদের দেশ ধ্বংস হয়ে গেলেও কিছু যায় আসেনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, নফ নদী দিয়ে আমাদের ট্রলার যাতায়াত করার সময় টার্গেট করে গুলি ছুড়ছে মিয়ানমার বর্ডার থেকে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ অশান্ত করে তুলছে তারাই। যার ফলে দীর্ঘ ১০ দিন ধরে ভয়ে চলছেনা কোনো নৌযান। তাই খাদ্য সংকটে পড়েছি আমরা দ্বীপবাসী ১০ হাজার মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? নাকি টনক নড়বে সেদিন যেদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ট্রলার ধরে নিয়ে যাবে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করবে মানুষজন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হবে অসংখ্য মানুষ। সেদিন হয়তো কর্তাবাবুদের ঘুম ভাঙবে।
▶️ ভিডিওতে দেখুন মিয়ানমার জলসীমায় অবস্থিত যুদ্ধ জাহাজ।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছে। এদিকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফের উখিয়ায় এসে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এসকল কারণে মিয়ানমারে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও যুদ্ধ চলছে।
ছবিঃ আবদুল মালেক, সেন্টমার্টিন।