সাঈদ চৌধুরী
মাতৃভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য এই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নির্মমভাবে গূলি চালিয়ে শত শত তাজা প্রাণের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছে খুনি হাসিনা সরকার। শহীদের রক্তমাখা বাংলায় মানবতা বিরোধী সরকারের ঠাই নেই। এই রক্ত বৃথা যেতে পারেনা। তাই এই জালিম সরকারের পদত্যাগই শেষ কথা নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলার মাটিতে এদের বিচার হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যা ৭টায় ইস্ট লন্ডনের বারাকা ইটারিতে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ইউকের সভাপতি ব্যারিস্টার আবুল মনসুর শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ।
চলমান কোটা আন্দোলনের আগে গত ১৫ ও ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কিভাবে সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে সিনিয়র আইনজীবী, মহিলা আইনজীবী-সহ সর্বস্তরের আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটানো হয়েছে সেই নির্মম ঘটনা তুলে ধরা হয়। সেদিন পুলিশের পাহারায় একতরফা ভোট গ্রহনের নীল নকশার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্যানেলকে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। সারা দেশের, সব নির্বাচনের মত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনও তাদের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের নির্লজ্জ ভোট চুরির নমুনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দেখা গেছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
বিগত কয়েক বছরে সরকারী দলের বর্বর কর্মকান্ড তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমান ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক সরকারের নিষ্ঠুর ও পাশবিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, পাঁচ পাঁচটি আসনে যিনি বার বার নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় জেল দণ্ড দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকার গৃহবন্দী করে রেখেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সুচিকিৎসার অভাবে বেগম জিয়া শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেক চেষ্টা-তদবীর করেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন বর্তমান দুর্নীতিবাজ সরকার অগ্রাহ্য করে চলেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে মধ্যরাতের সরকার আখ্যায়িত করে বলেন, এরা মধ্যযুগীয় কায়দায় জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশে চরম দূঃশাসন চলছে। গণতন্ত্রহীনতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট দিন দিন ব্যাপকতা লাভ করেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। বিচারহীনতা সহ সব ধরণের অব্যবস্থাপনা চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানসমূহে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বাধাঁর ফলে জনগণ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ভুগছে। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ এখন দুর্নীতি, মানবাধিকার লংঘন ও অবিচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
বক্তারা দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর ছাড়া আর কারো জীবন নিরাপদ নয়। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার তাদের অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। কেউ এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করলে বা কথা বললে তাদেরকে তখন সব ধরনের হয়রানি জেল-জুলুম, অপহরণ-সহ জীবনহানি এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এই সরকারের একতরফা নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়, বিগত ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করেছিল। বাংলাদেশের জনগণ মনে করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বহু অভিযোগ দায়ের করেছিল। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেন,অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত মিত্যা অভিযোগগুলো বহাল রাখেন। শুধু তাই নয়, এই অবৈধ সরকার বাংলাদেশ বিচার বিভাগ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে তারা স্বাধীন ও ন্যায়পরায়নতার সাথে কোন কাজ করতে পারছে না। এই সরকার বেগম খালেদা জিয়া সহ অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন ও হয়রানি বাড়িয়েছে। তাছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলায় শাস্তি দিয়ে, জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে দেশে ফিরতে বাঁধার সৃষ্টি করেছে।
অনুষ্ঠানে সরকারের নানা ফ্যাসিবাদী আচরণের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এই একনায়কতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক কোটা আন্দোলনের মত ন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবহার, জনগণের বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র আইনের শাসনের ক্ষেত্রে নগ্ন হস্তক্ষেপ বলেই সবাই মনে করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, ভোটের ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত, স্বাস্থ্য সেবা, বাকস্বাধীনতা সহ সর্বোপরি দেশ বিনির্মাণের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ সকল বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ প্রদান ও একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থার মাধ্যমে সুখী, সমৃদ্ধশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দেওয়া সম্ভব বলে তারা দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সকল দেশ প্রেমিক ও মুক্তিকামী জনগণকে দেশ নায়ক তারেক রহমানের আহবান “টেইক ব্যাক বাংলাদেশ” স্লোগানকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক।