সরকারের বিরুদ্ধে রোববারও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করছেন প্রতিবাদকারীরা৷ বিভিন্ন স্থানে সরকার পক্ষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ আটজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷
পাবনায় তিনজন, মুন্সীগঞ্জে দুইজন, বগুড়ায় দুইজন, মাগুরায় একজন ও রংপুরে দুইজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বাংলাদেশের ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনাররা৷
বাংলাদেশের সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রোববারও সারাদেশে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা৷ আজ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷
অন্যদিকে রোববার প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি পালন করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা। মুন্সীগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, মাগুরা, খুলনা, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷
পাবনায় নিহত ৩
পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন৷ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হলের কাছে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে৷ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷ পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন আরও দুজন। কমপক্ষে ৩২ জন চিকিৎসাধীন আছেন৷’’
মুন্সীগঞ্জে নিহত ২
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত দুইজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল নিহতের বিষয়টি ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের নামপরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি৷ জরুরি বিভাগে ২০ জনের বেশি আহত মানুষ এসেছেন৷” নিহত দুইজনই পুরুষ এবং পেশায় শ্রমিক৷ তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে৷ মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসান বলেন, ‘‘হতাহতের সংখ্যা এখনো বলতে পারছি না৷ তবে, পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি৷”
বগুড়ায় সংঘাতে নিহত ২
সকাল থেকে বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে হাজারো বিক্ষোভকারী৷ ১১টার পরে বগুড়া সদর থানা ও দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হয়েছে বলে বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান ডেইলি স্টারকে জানান৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হলে পুলিশ সেখানে গুলি ছোড়ে৷ গুলিতে অনেকে আহত হন৷ দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান৷ তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে৷ মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন৷ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়৷ তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন কি না এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
উত্তাল ঢাকা
এদিকে প্রতিবাদকারী ও সরকার পক্ষের অবস্থানে উত্তাল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা৷ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শহাবাগে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন বলে জানিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো৷
বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন৷ সকাল সাড়ে ১০টার পরে তাঁরা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন৷ প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ তবে পুরান ঢাকার দিক থেকে আসা মিছিল থেকে তাঁদের ধাওয়া দেওয়া হয়৷ তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান৷ সেখান থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল৷
তখন বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন৷ এ সময় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ২০টি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ১৫টির মতো মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়৷ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়৷”
সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা৷ তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন৷ শাহবাগ-সহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা৷ এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যানবাহনের চাপ কম৷
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ অন্তত ২০
দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ২০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ প্রায় ২০ জনকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়৷
জেলার নিউমার্কেট এলাকায় একই সময়ে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়৷
ডেইলি স্টার জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচির আন্দোলনকারীরা শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বাসভবনে হামলার পর থেকে চট্টগ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
বহদ্দারহাট এলাকায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানোর পর পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে মোট চারজন আহত হন এবং তাদের মধ্যে পশ্চিম বাকালিয়া ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম শহীদ একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান৷
এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেনসহ চার বিএনপি নেতার বাসায় ভাঙচুর চালায়। – ডয়চে ভেলে