দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আবারও আহ্বান জানিয়ে বলবো পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন।’
এ সময় জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্যথায় পতিত স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘ আশা করি, সরকার খুব শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে এবং লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে।’
দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক রীতিনীতি ও ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি বলে মত দেন তারেক রহমান। একারণে তিনি ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘এখনই সময় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে কোনো একনায়ক বা ফ্যাসিস্ট জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে।’ তবে এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা ও সক্ষমতার ঘাটতি ইতোমধ্যে জনমনে হতাশা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক।
তার ভাষ্যে, ‘একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আশায় জনবান্ধব রাজনৈতিক দলগুলো এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি রোড ম্যাপ ঘোষণা আহ্বান জানিয়েছে আসছে। সব কিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই, সরকার সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বরং তারা নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাকে ছোট-বড় সংস্কারের নতুন শর্তের ফাঁদে ফেলছে।’
জনগণের কাছে সরকারের পরিকল্পনা ও মনোভাব পরিষ্কার না হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন দেখছি কোনো না কোনো দাবি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কিন্তু এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’
‘জনআকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। আমরা মনে করি অস্থিরতা এভাবে বাড়তে থাকলে সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কোনো অভিজাত ক্লাব বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি সম্পর্ক থাকা উচিত।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ব্যবস্থাগুলো উপেক্ষিত হয় এবং ডিপলিটিকাইজেশনকে (অরাজনীতিকরণ) উৎসাহিত করা হয়, তাহলে সাময়িকভাবে কিছু ব্যক্তি উপকৃত হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রপন্থী জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ সময় রোহিঙ্গা সংকটে রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ খোলার পরিকল্পনা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডোর কিংবা বন্দর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়। এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের সরকার। বর্তমান সরকারের আইনগত ও রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন নেই। তবে এই সরকার কোনোভাবেই জনগণের কাছে জবাবদিহি মূলক সরকার নয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে এবং জুলাই আন্দোলনে হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি রচিত হয়েছে। অথচ জুলাই আগস্টের আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছে কতজন আহত হয়েছেন, দশ মাসেও কিন্তু সরকার শহীদদের তালিকা ও সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, এখন যদি জুলাই আগস্টের শহীদদের হতাহতদের তথ্য কেউ জানতে চান তাহলে কী নির্দিষ্ট সেই তথ্য পাওয়া যাবে? এ ব্যাপারে কিন্তু বিরাট সন্দেহ বা প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দশ মাসেও যদি জুলাই আগস্টের শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারে, তাহলে সেটা সরকারের সক্ষমতা বহন করে কিনা এই প্রশ্নটি রেখে যাচ্ছি।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন এসে যায় সরকার কী হতাহতদের ব্যাপারে উদাসীন নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? এটিই এখন দেশের বহু মানুষের বড় জিজ্ঞাসা। ইউএনবি