সাঈদ চৌধুরী
মূল্যবোধ সম্পন্ন লেখক কবি আলিফ উদ্দিন কিছু দিন থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে হাল রয়্যাল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে রয়েছেন। বেশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদের। আমাদের প্রিয় ভাইটির রোগমুক্তির জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী কামনা করছি। আপনারা সকলের কাছেও দোওয়ার আবেদন জানাই।
কিছুদিন আগে কবি আলিফ উদ্দিনের নতুন গ্রন্থ ‘কুরআনের ছবি’ ডাকযোগে উপহার পেয়েছি। এটি বাংলা একাডেমির বই মেলা উপলক্ষে ঢাকার অরুণালোক প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে। লেখক কুরআন ও হাদিসের আলোকে শতাধিক বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। জীবন জ্ঞিাসার অনেক জবাব বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। সুন্দর হার্ডব্যাক বাঁধাই করা ১৮০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের দাম চারশ টাকা মাত্র। প্রবাসে ১০পাউণ্ড ।
কবি আলিফ উদ্দিন বিলেতের অত্যন্ত প্রিয় মুখ। তিনি সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের নির্বাহী সদস্য। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ-নিবন্ধে মনের কথা সহজ ভাষায় তুলে ধরেন। লেখকের ভাবনা ও জ্ঞিাসার পরিধি বিচিত্র ও ব্যাপক। কুরআনের ছবি গ্রন্থেও তার জিজ্ঞাসা ছুঁয়েছে পাঠক হৃদয়। যেটা তাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে অথবা মৃত্যুর দিকেও। পরকালের শান্তির অন্বেষায় তিনি লিখেছেন। আবার সমসাময়িক বিষয়, প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা, এমনকি হতাশাও মূর্ত হয়ে উঠেছে বইটিতে।
লেখক আলিফ উদ্দিনের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছ- চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন গুলো (প্রবন্ধ, ১৯৯০), মনের মনিকোটায় মক্কা (ভ্রমণ কাহিনী, ১৯৯০), একটি বিপ্লব চাই (উপন্যাস, ১৯৯৬), বৃটিশ সিটিজেন (উপন্যাস, ১৯৯৬), প্রথম ভালোবাসার প্রথম উপহার (গল্প, ২০০০), হুদয় ছুয়েছে ডায়েরী (কবিতা, ২০০৮), মরমী কবি আরফুল উল্লাহর জীবন ও কর্ম (জীবনী, ২০০৮), বিশ্বনবী মুহাম্মদ স. (জীবনী, ২০১১), সোনার পালংক (উপন্যাস, ২০১১), কুরআনের ছায়াতলে (রচনা সমগ্র, ২০১৪), জীবনযুদ্ধের স্মৃতি (আত্মজীবনী, ২০১৫), ছায়াবৃক্ষ (কবিতা, ২০১৯), নজরুল কাব্যে ইসলাম (প্রবন্ধ, ২০১৯), লন্ডন বাংলার চিঠি (পত্রালাপ, ২০১৯), কুরআনের ছবি (ধর্মীয় বিশ্লেষণ, ২০২১), এক আল্লাহ জিন্দাবাদ (কবিতা, ২০২৩) ।
কবি আলিফ উদ্দিনের লেখায় পুরোনো ও নতুনের মেলবন্ধনে অতীতকে মাথায় রেখেই ভবিষ্যৎ সাজানোর ঐতিহ্য চিন্তা পরিষ্কার ভাবে পাওয়া যায়। মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের পেছনে ধর্মীয় ব্যাখ্যাসমূহ তুলে ধরেছেন। কেন ধর্মীয় চেতনা মানব জীবনে প্রয়োজন? সেটা বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন। সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরতে পরতে নিয়ে যাওয়া তার অনুসন্ধান পাঠককে হয়ত রোমাঞ্চের মুখোমুখি করবে। ছোট ছোট বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় আধুনিক বিজ্ঞানের পাশাপাশি চিরাচরিত মৌলিক প্রশ্ন আলোচিত হয়েছে। কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য আমরা মানুষ, আর কিভাবে মানুষের স্রষ্টাকে বুঝতে সক্ষম হব- এসব জিজ্ঞাসার কিছুটা হদিস দিতে চেষ্টা করেছেন তিনি।
আলিফ উদ্দিন বিলাতে অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, গ্রীস, ফ্রান্স-সহ বহু দেশ ও শহর সফর করেছেন। ২০০০ সালে কোলকাতায় একটি সাহিত্য সম্মেলনে তিনি অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন সময় স্বীকৃতি ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দারুল কুরআন একাডেমী সম্মাননা-২০০১, ইনাতগন্জ একাডেমী সম্মাননা ২০০৭, রেনেসাঁ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৮ এবং আল কুরআন একামী লন্ডন কর্তৃক লেখক স্বীকৃতি ২০১৪।
কবি আলিফ উদ্দিন সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন কসবা গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হাল শহরে বসবাস করছেন। পিতা হাজি উয়াছিক উল্লাহ ও মাতা লুচন বিবি। পারিবারিক জীবনে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।
একান্ত আলাপচারিতায় লেখক বললেন, জ্ঞানের পিপাসা মিটাতে এ পর্যন্ত গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী-সহ অসংখ্য বই পড়েছি। কিন্তু জানার আগ্রহ শেষ হয় না। কুরআনের অনুবাদ বার বার পড়ছি। বিশ্বখ্যাত লেখকদের তাফসির পড়েছি। ছহিহ বুখারী, রাহে আমল, রিয়াদুস সালেহীন, এন্তেখাব-সহ অনেক হাদিস গ্রন্থ পড়ার চেষ্টা করেছি। ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
এসব পুস্তক পড়ার পূর্বে ধর্ম-কর্ম এবং পরিবার ও সমাজ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলনা। আমি জানতাম নামাজ রোজা পালন করলেই বেহেস্তে যাওয়া যাবে। কিন্তু পড়ার পরিধি যত বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে শুধু নামাজ রোজা করলেই বেহেস্তে যাওয়া সম্ভব না। দুনিয়ার শান্তি এবং পরকালের মুক্তি পেতে হলে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামকে জানা ও বুঝার চেষ্টা করতে হবে। সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে জ্ঞানের বিকল্প নেই।
লেখকের মতে, জ্ঞানের মাধ্যমে ও নৈতিক মানদণ্ড অর্জনের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ের ভারসাম্যপূর্ণ বিধান প্রণীত হয়েছে এ গ্রন্থে। তাই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্য কুরআনের শিক্ষা অপরিহার্য। আর এ শিক্ষাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশু-কিশোরদেরকে সঠিক জীবন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের কারিগর হিসেবে তৈরি করতে পারে। তাই তিনি এখন সাহিত্যে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘কুরআনের ছবি’ সে লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদী।