সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান গতকাল ইন্তেকাল গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ৭৩ বছর বয়সী শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবিরও শাসক ছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী, এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম দেশটির অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বর্তমানে দুবাইয়ের শাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাতটি আমিরাত রয়েছে। এই আমিরাতগুলোর শাসকদের নিয়ে গঠিত ফেডারেল কাউন্সিল ৩০ দিনের মধ্যে বসে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে।
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের বাবা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৯৭১ সালে আমিরাতগুলো নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হয়। তখন থেকেই দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসা জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর মারা যান। পরদিন দেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ আমিরাত আবুধাবির শাসক ও দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি ছিলেন আবুধাবির ষোড়শ শাসক।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তার পিতার অনুসৃত নীতিমালার আলোকে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত প্রায় দু’ দশকে দেশটিকে আরো ব্যাপকভাবে রূপ দিয়েছেন সবুজের আঙ্গিনায় অট্টালিকায় সাজানো এক স্বপ্নের রাজ্যে। উন্নয়নে দেশটি এখন বিশ্বের উন্নত দেশের প্রথম সারিতে এবং বিশ্বের বসবাসযোগ্য নিরাপদ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়ও। প্রেসিডেন্ট শেখ খালিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানও ছিলেন তার পিতা মরহুম প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের মতোই মানবরূপী এক রহমতের ছায়া।
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের জন্ম ১৯৪৮ সালে। ২০১৪ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে তেমন জনসমক্ষে আসতেন না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের অসুস্থতার পর থেকে কার্যত তার সৎভাই যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের এ মিত্রদেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এখন তিনিই আবুধাবির শাসক হতে পারেন।
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খলিজ টাইমস জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান কেন্দ্রীয় ও আবুধাবি সরকার উভয়েরই একটি বড় পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেন। তার আমলে দেশটিতে উন্নয়ন নতুন গতি পায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান প্রথম যে কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন, তার কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়ন। ওই পরিকল্পনায় দেশের ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
ছালাহউদ্দিন আরব আমিরাত থেকে জানিয়েছেন, তার মৃত্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা করার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।