হাওর বিলাস-পাহাড় বিলাস হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের

পর্যটন
শেয়ার করুন

তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ সুনামগঞ্জ

দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে দিগন্ত বিস্তীর্ণ যে জলাভূমি রয়েছে, বছরের ছয় মাস সেখানে জলের রাজত্ব আর ছয় মাস ফসলের আনন্দ। এখানকার হিজল-করচ বাগে বসে অতিথি পাখির মেলা। পাহাড়ঘেরা আর হাওরবেষ্টিত এই জনপদের নাম সুনামগঞ্জ। দেশের আট-দশটা জনপদ থেকে একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বেশির ভাগই আসে এই অবহেলিত সুনামগঞ্জ থেকে। প্রবাদ আছে, ‘বালু-পাথর, মাছ-ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ’। হাওর-নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে।
এশিয়ার সর্ব বৃহৎ রামসার সাইড টাঙ্গুয়া হাওর, রূপের রানী জাদুকাটা নদী, দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান, নিলাদ্রী লেক, ডলুরা শহীদ স্মৃতিসৌধ, বাঁশতলা শহীদ মিনার, হাওর বিলাস, পাহাড় বিলাস, চ্যাং বিল, পরিবেশবাদী সংস্থা সিএনআরএস এর হিজল-করচ বাগানসহ জেলার অনেক এলাকা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। কিন্তু এখনো সরকারিভাবে এসব পর্যটনস্পটের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সুনামগঞ্জে পর্যটনের উন্নয়নে বিশেষ কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। তবে স্বল্প সময়ে হাওরকেন্দ্রিক জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি পর্যটনস্পট গড়ে তোলায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন হাওর বিলাস ও চেংবিলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পাহাড় বিলাসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন।

সীমান্ত ও হাওর-নদী বেষ্টিত ২৪৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর। এক লাখ ৫৩ হাজার জনসংখ্যার কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যই এলাকার প্রধান ফসল। মো: সাদি উর রহিম জাদিদ গত বছরের ১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে যোগদানের পর মুজিববর্ষের ঘর তৈরির জমি খুঁজতে গিয়ে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নজরে পড়ে তার। এরপর ওই এলাকায় পর্যটন বিকাশের উদ্যোগ নেন তিনি। সীমান্তের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে আন্তর্জাতিক সীমা রেখার পাশে সলুকাবাদ ইউনিয়নের চ্যাংবিল এলাকায় পাহাড় বিলাস নামে পর্যটনস্পট গড়ে তোলা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে এলাকার আবু সুফিয়ান নামের এক ব্যক্তি পর্যটন স্পটের জন্য ১০ শতক জমি সরকারকে দান করেন। সাদা রঙের দৃষ্টিনন্দন কাঠের বেড়া দিয়ে পাহাড় বিলাসে পর্যটকদের বসার জন্য আটটি বেঞ্চ, পর্যটকদের হালকা খাবারের দুইটি দোকান, ছনের দুইটি গোলঘর নির্মাণ করা হয়। এরপর প্রতিদিনই শত শত মানুষ এই গোল ঘরে উঠে হাওরের ঢেউ ও মৃদুমন্দ বাতাস অনুভব করছেন।

গ্রাম থেকে আসা বিভিন্ন দফতরে সেবাপ্রার্থীদের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনে গাছের নিচে পাঁচটি গোলঘর করে সেবাচত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গোলঘরে সাত-আটজন করে মানুষ বসতে পারে। উপজেলা সদরে যাত্রীদের জন্য নিকুঞ্জ নমে একটি যাত্রী ছাউনি ও সাধারণ মানুষের হেঁটে চলার জন্য থানার সামনে থেকে উপজেলা পরিষদের শেষ সীমানা দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। হাওর বিলাস ও পাহাড় বিলাস গড়ে তোলার পর পর্যটকদের উৎসাহে উপজেলা সদরের পাশে করচার হাওরের পরিবেশ উপভোগ করার জন্য বিশ্বম্ভরপুরের চিরাচরিত প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য এখন অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অনেক সৌন্দর্যপিপাসু পরিব্রাজক এখন বিশ্বম্ভরপুরমুখী হয়েছেন। পানির ওপরে ভাসমান দুইটি গোলঘর নির্মাণ করে হাওর বিলাস, উপজেলার প্রবেশদ্বার কারেন্টেরের বাজার এলাকায় করচার হাওরের বোয়াল মাছের মতো মাছের ভাস্কর্য দিয়ে বোয়াল চত্বর ও সরকারি জমিতে করচার হাওরের নামে করচারপাড় মাকের্ট নির্মাণের পর পুরো এলাকা দর্শনীয় হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *