সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এনডিজের প্রতিবাদ

বাংলাদেশ সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিস (এনডিজে) সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ৩৬ জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের বাস্তবতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান যে বক্তব্য প্রদান করেন, তার বেশ কিছু বিষয় অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এবং মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী বলে এনডিজে দাবি করেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ধরনের উস্কানীমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিসের (এনডিজে) প্রধান নির্বাহী ব্রি. জে. হাসান নাসির (অব.) ও এনডিজে’র নির্বাহী কর্নেল হাসিনুর রহমান (বরখাস্ত) বীর প্রতীক বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ, ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে এ বিবৃতি প্রদান করেন। এতে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মাননীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে তিনি পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আগামী সংসদ নির্বাচন, দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেনাপ্রধানের বক্তব্যের বেশ কিছু বিষয় ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এবং মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। বিষয়গুলো নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:

সেনাপ্রধান বলেছেন “এই বর্বরতা (বিডিআর হত্যাকাণ্ড) কোন সেনা সদস্য করেনি। সম্পূর্ণটাই তদানীন্তন বিজিবি সদস্য দ্বারা সংঘটিত, ফুলস্টপ। এখানে কোন ইফ এবং বাট নেই।” তিনি আরো বলেছেন “যে সমস্ত সদস্য (বিডিআর) শাস্তি পেয়েছে তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।”

উপরোক্ত বক্তব্য নিম্নলিখিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার পরিপন্থী:

ক) এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপরে সর্বপ্রথম যে বড় আঘাত করা হয়েছে (বিডিআর হত্যাকাণ্ড) তার মূল ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী, নেতৃত্বদানকারী এবং ঘটনা পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রমাণ বিনষ্টকারীসহ অপরাধের মূল হোতাদের বাঁচানো এবং বিচারের বাইরে রাখার জন্য পরোক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশনের কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় এ ধরনের বক্তব্য ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী।

খ) বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া থেকে আমরা জানতে পারি যে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে বিগত সরকার প্রধান এবং বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিবর্গ জড়িত ছিলো। একথা সর্বজনবিদিত যে, বিগত সরকার তার অত্যন্ত অনুগত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, প্রসিকিউশন এবং বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমান স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। কাজেই পূর্বের তদন্ত ও বিচারকে গ্রহণ করা ন্যায় বিচারের জন্য কোনভাবেই সমীচীন নয়।

গ) সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার না করে হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ দায় বিডিআর সদস্যদের উপরে চাপানোর অর্থ হলো বাংলাদেশের ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রধান দুই বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং তাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট তৈরি করে উল্টো দূরত্ব সৃষ্টি করা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা এটাই চেয়েছিল।

DGFI, RAB, NSI ইত্যাদি বিগত বছরগুলোতে অনেক ভালো কাজ করেছে বলে দেশ স্থিতিশীল ছিল বলে সেনাপ্রধান দাবি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে সকল বাহিনী বিগত বছরগুলোতে বিগত স্বৈরাচার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য গণহত্যা, হত্যা ও গুম, আয়না ঘর প্রতিষ্ঠা-সহ নানাবিধ মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো।

সেনাপ্রধান এই বক্তব্যের মাধ্যমে এ সকল অপরাধী ও অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। একই সাথে তিনি জানা সত্ত্বেও গণহত্যা এবং হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের নিজ বাহিনীতে কোন ন্যায়বিচার করেননি, বিচারের জন্য আদালতে ও কমিশনের কাছে উপস্থাপনে বাধাগ্রস্তও করেছেন। একই সাথে প্রকৃত অনেক অপরাধীকে অগোচরে সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন এবং অনেককে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।

সেনাপ্রধান ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা এবং ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলা

প্রথমত নির্বাচন কবে হবে বা কিভাবে হবে তা সেনাবাহিনীর বিষয় নয়, এটা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানে দেশের সকল মানুষের আকাঙ্ক্ষিত সংস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং পরোক্ষভাবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও চেতনা বিরোধী এবং বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন।

সেনাবাহিনী বাংলাদেশের আস্থা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে মানুষের শেষ ভরসা এবং সেনাবাহিনী কোনভাবেই দলীয় প্রতিষ্ঠান নয়। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যে বিগত বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগিতা এবং বিগত সরকারের সকল অপরাধীকে ন্যায় বিচার থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *