যুদ্ধবিরতি ভেঙে এবার লেবাননে ইসরায়েলের রকেট হামলা

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে লেবাননে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর এটিই সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বিমান হামলায় একজন শিশুসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছে আরও অন্তত ৪০ জন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়। এর জবাবেই তারা দক্ষিণ লেবাননে ইরান-সমর্থিত রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালাতে শুরু করে। লেবাননে হেজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনপন্থি কোন সংগঠন যুদ্ধবিরতি ভেঙে শনিবারে ইসরায়েলে রকেট হামলার দায় স্বীকার করেনি।

ইসরায়েলি প্রথম দফার হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, রাতে দ্বিতীয় দফার হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার, অবকাঠামো এবং একটি অস্ত্র ভাণ্ডার লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে।

শনিবারে ইসরায়েলে রকেট হামলার ঘটনা এমন এক সময় ঘটেছে যখন ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। আগে থেকেই হামাস হিজবুল্লাহর মিত্র হিসেবেই পরিচিত। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তরের মেতুলা শহরে তিনটি রকেট প্রতিহত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

যদিও হিজবুল্লাহর দাবি তারা ইসরায়েলে হামলার সাথে জড়িত নয় এবং যুদ্ধবিরতির প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লেবাননের সেনাবাহিনীর দাবি, তারা দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি প্রাথমিক রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন যে হামলার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এক বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটায়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করবে, যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে হামলা চালাতে না পারে।

চুক্তি অনুযায়ী, এর আগে হেজবুল্লাহকে তাদের যোদ্ধা ও অস্ত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যুদ্ধের সময়ে যে এলাকাটি দখল করে রেখেছিল সেটি থেকে সরে যাওয়ারও কথা ছিল। তবে, ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা এই ধরনের হামলা চালিয়ে যাবে যাতে হেজবুল্লাহ পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনও দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি স্থানে দখল করে আছে। লেবাননের সরকার বলেছে যে এটি দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং একই সাথে চুক্তিরও লঙ্ঘন।

শনিবারের হামলা লেবানন সেনাবাহিনীর জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ তারা দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি ও সমর্থন রয়েছে। গত জানুয়ারিতে লেবাননের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন জোসেফ আউন। দায়িত্ব নেয়ার পরই তিনি বলেছিলেন যে, শুধুমাত্র রাষ্ট্রেরই অস্ত্র রাখার অধিকার রয়েছে। যা তিনি মূলত হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারের ইঙ্গিত করেই বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শনিবার তিনি লেবাননকে এই সংঘাতের মধ্যে টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেছেন, এই উত্তেজনা লেবাননের জন্য নতুন করে ঝুঁকি তৈরি করছে।

লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন (ইউনিফিল) বলেছে, তারা সম্ভাব্য সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। যে কারণে তারা ইসরায়েল ও লেবাননকে তাদের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *