সিরাজুল ইসলাম শাহীন
জীবন্ত কিংবদন্তী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশে ফিরে গেছেন। ২৫ ডিসেম্বর বুধবার কুয়েত এয়ারওয়েজে বিকাল ৫টা ৪৮ মিনিটে হিথ্রো ত্যাগ করেন এবং পরেরদিন রাতে ঢাকায় পৌঁছেন। তিনি ফ্যাসিবাদী হাসিনার আক্রোশের শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১১বছর দেশান্তরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। ৫ আগস্ট বিপ্লবের খবর পেয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন এ দিনটির। রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের বেডে থেকে সেদিন লিখেছিলেন, ‘ভ্রমণের জন্য ডাক্তার যেদিন ক্লিয়ারেন্স দেবেন, ঠিক তার পরবর্তী ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকায় আসছি ইনশাআল্লাহ। ঢাকা, যে শহরটিকে অত্যন্ত ভালোবাসি। তার আগ পর্যন্ত এই ৫০০০ মাইল দূরের লন্ডন থেকে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে যাচ্ছি’।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অপারেশন হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতিতে নানা জটিলতা ছিল। তখন যে আকুতি সবসময় দেখেছি। বলতেন, ‘আমার জন্য দোআ কর, আল্লাহ যেন আমাকে পরিপুর্ন সুস্থতা দান করেন এবং বাকি জীবনটা আল্লাহর দ্বীনের কাজে লাগাতে পারি’। এক সময় দর্শনার্থী বন্ধ ছিল। কঠিন এই সময়ে নীরবে চোখের পানি আটকানোর লড়াই করতে হয়েছে প্রতিদিন। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। তাই নিরন্তর কামনা ছিল যেন রাজ্জাক ভাই বাংলাদেশে ফিরে যান আর নিজ চেম্বার, সুপ্রিম কোর্ট ও বহু স্মৃতি বিজড়িত কেন্দ্রীয় জামায়াত অফিস একটি বার দেখে আসেন।
মহান মালিক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। রাজ্জাক ভাই সুস্থ হতে থাকলেন। দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। ২১ ডিসেম্বর শনিবার তাঁর সম্মানে দায়িত্বশীলদের আয়োজিত বিদায় অনুষ্টানে একটি দারুণ বক্তব্য রাখেন। এই ভূখণ্ডে দ্বীনের দায়ীদের আত্মগঠন এবং নিকট ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ নির্দেশনামূলক বক্তব্যটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্মৃতিচারণে সবাই বিলেতে আমাদের কাজের সূচনালগ্নে বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের জন্য তাঁর অসামান্য অবদান তুলে ধরেন। আশাবাদ ব্যাক্ত করা হয় বাংলাদেশেও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নে তাঁর এ ফিরে যাওয়া নতুন ইতিহাস রচিত হবে ইনশা-আল্লাহ। এর আগের দিন লন্ডনে বাংলাদেশী লইয়ার্স কমিউনিটিও বিদায় সম্বর্ধনা জানান। সেখানে আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারন-সহ গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন প্রদান করেন।
১৯৮৮ সালে সিলেটে বহুল আলোচিত ঘটনার প্রেক্ষিতে আটককৃতদের মুক্তির জন্য আইনী লড়াইয়ের ফাইল নিয়ে গিয়েছিলাম মতিঝিল মালেক ম্যানশনে তাঁর চেম্বার ‘দি লো কাউন্সিলে’। এটাই প্রথম সরাসরি দেখা। সেই থেকে এ পর্যন্ত যখনই আলাপ হয়েছে মনে হয়েছে মূল্যবান কিছু পেয়েছি। সেটা চেম্বারে, প্রোগ্রামে, হোটেল লবিতে, বাসায়, মসজিদের বারান্দায়, পার্কে অথবা হাসপাতালের বেডে হউক। রয়েল লন্ডন হাসপাতালে একদিন আমার বড় ছেলে ‘নাসিফ’ সাথে গেলে কঠিন অসুখ অবস্থায়ও তাকে বলেছেন, ‘Be ambitious’।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ার প্রেরণা সঞ্চারী। নিজেকে গড়ার দুটি প্রধান উপায়, অধ্যয়ন ও সোহবত নেয়া। আজ বড় আফসোস হচ্ছে, কাছে পেয়ে কেন যে আরো সোহবত নেয়া হয়নি। সেদিন রাতে আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন, ‘তুমি অনেক করেছো’। কি করে যে বুঝাই, আসলে কিছুই করিনি। আমাদের উপর অনেকে বেশি তাঁর হক ছিল। নিজেকে উজাড় করে দেয়া এমন বিরল ব্যক্তিত্বের অনেক পাওনা থাকে। আমরা হয়তো পারিনি। দেশের ভায়েরা নতুন বাংলদেশে যেন তা পুষিয়ে দিতে পারেন। অঞ্জলি ভরে নিয়ে নিজেদের ধন্য করেন।
আলহামদুলিল্লাহ। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দেশে আছেন। এটি অনেক আনন্দের। এ যে পাখির আপন নীড়ে ফিরে যাওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বর্তমান অবস্থান কল্যাণময় করুন। ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য তাঁকে কবুল করুন। তাঁর চাওয়া মতে, হায়াতে জিন্দেগীর বাকি সময়টুকু দ্বীনের জন্য কাজে লাগানোর তাওফিক এনায়েত করুন। আমীন।