পলাতক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। গত ১০ এপ্রিল রেড নোটিশ জারি করা হলেও তা প্রকাশ্যে আসে ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার। ‘রেড নোটিশ’ এর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর। তবে ইন্টারপোলের নিজস্ব ওয়েবপেইজে রেড নোটিশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের নাম নেই।
বর্তমানে সংস্থাটির পেজে রেড নোটিশের তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জনের নাম রয়েছে। ইন্টারপোলের নিজস্ব ওয়েবপেজে বেনজীরের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা ইনামুল হক বলেন, ‘রেড নোটিশের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই বেশির ভাগ রেড নোটিশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনায় প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে। আবেদন পর্যালোচনার পর রেড নোটিশ জারি করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি ইন্টারপোলে পর্যালোচনাধীন আছে। ওই সূত্র জানায়, যেহেতু বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে, তাই দ্রুত তার অবস্থান নিশ্চিত করে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়। বেনজীর কোন দেশে আছেন তা এখনো আমরা নিশ্চিত নই। তবে তিনি স্পেন আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ওই কর্মকর্তা বলেন, বেনজীরের অবস্থান শনাক্ত করার পর নোটিশটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হতে পারে। তবে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে। শেখ হাসিনাসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের বিষয়ে তিন দফা ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে।
ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে গত বছরের ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন তিনি। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করা বেনজীর ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। এর আগে কয়েক বছর ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের তদন্ত চলছে।
ইন্টারপোল যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন পর্যালোচনা করছে তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত।