পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বাধীনতা পেলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবোঃ ফাহিম ফয়সাল

জীবনী-সাক্ষাৎকার ফিচার বিনোদন সময় সাহিত্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সংগীতশিল্পী ফাহিম ফয়সাল। মিডিয়ার নানা শাখায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করছেন গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে। শুধুমাত্র গান গাওয়াই নয়, একজন সুরকার ও সংগীতপরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন গুণী এই সংগীতশিল্পী। ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের স্বার্থে ফাহিম ফয়সাল গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছেন। আর তা হচ্ছে তিনি কপিরাইট, মিডিয়া ও ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির গবেষক-বিশ্লেষক-পরামর্শক। 

কপিরাইট সচেতনতায় দেশের সর্বপ্রথম ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করেছেন সংগীতশিল্পী ফাহিম ফয়সাল। ‘কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করুন, মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করুন’ এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশের পর দেশ-বিদেশ থেকে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন এই শিল্পী। অনলাইন মিডিয়ার প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহের কারণে ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশে প্রথম বিনোদন, ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল নিউজ পোর্টাল ‘বিনোদনবিডি.কম‘ প্রতিষ্ঠা করেন। যা তৎকালীন সময়ে দেশের শোবিজ অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলে দেয়।

কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি। নির্মাণে ফাহিম ফয়সাল
কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি। নির্মাণে ফাহিম ফয়সাল

গান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও কপিরাইটের বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা হয় তার সঙ্গে। উঠে আসে নানান প্রসঙ্গ। পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

কপিরাইট নিয়ে কাজ করার ভাবনাটা আপনার ভেতর কিভাবে আসে?
ফাহিম ফয়সালঃ আমি গানের মানুষ। গান গাওয়ার পাশাপাশি আমি সবসময় ভাবতাম আমাদের শিল্পীরা কেন এতো কষ্ট করেন। এই ভাবনাটি মাথায় আসার পেছনে মূল কারণ ছিলো, আমার মাথায় বিভিন্ন সময়ে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো, তা হচ্ছে আমি কি পেশা হিসেবে গান বা সংগীতকে বেছে নিতে পারবো? যেখানে অন্যদেশের শিল্পীরা তাদের মেধা বা ক্রিয়েটিভিটির জন্য অনেক সম্মান ও সম্মানী দুটোই পান। সেখানে আমাদের এখানে এতো চ্যালেঞ্জ কেন? কেনই বা এতো অনিশ্চয়তা? মূলত সে চিন্তা বা ভাবনা থেকেই আজ থেকে প্রায় ১৩/১৪ বছর আগে আমার মাথায় আসে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে কপিরাইট নিয়ে কাজ করার বিষয়ে।

বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল
বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল

কারণ, সৃজনশীল অঙ্গণের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কপিরাইট। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে তাই শুরুতে কপিরাইট নিয়ে অগ্রজদরে সাথে আলাপ করি, পড়ালেখা শুরু করি। এরপর ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির নানান শাখার মানুষদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করতে থাকি। তাদের ভেতরের কথাগুলো, তাদের দুঃখগুলো, ইন্ডাস্ট্রির সমস্যাগুলো শুনতে থাকি। বিষয়গুলো আমাকে আরও গভীরভাবে ভাবতে সাহায্য করে।

এর পরের গল্পটি শুনতে চাই?
ফাহিম ফয়সালঃ যেহেতু আমাকে গান, নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও মিডিয়ার নানান কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই কপিরাইট নিয়ে কাজ করাটা একটু কঠিন ছিলো। কারণ, এতে অনেক সময় দেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পড়ালেখা ও গভীরভাবে গবেষণার বিষয় রয়েছে। তাই অন্যান্য ব্যস্ততার পাশাপাশি এই কাজটিও আমি ধীরে ধীরে কিন্তু নিয়মিত চালাতে থাকি। পথ চলার এক সময়ে যখন আমার গান নিয়ে আমার সাথেই কপিরাইট লঙ্ঘনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেদিন খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করলাম আসলে সমস্যাটি কোথায়। তখন আমি খুব শক্তভাবে বিষয়টির সুরাহা করি। সুরাহা বলতে আমার গানের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করে কপিরাইট সার্টিফিকেট গ্রহণ করি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস থেকে। এরপর যিনি আমার সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিলেন তিনি আর কিছুই করতে পারেন নি। সে ঘটনার পর আমি বিষয়টি নিয়ে আরও সিরিয়াসভাবে কাজ করতে থাকি।

কপিরাইট নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণের কথা কেন চিন্তা করলেন?
ফাহিম ফয়সালঃ আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বিশ্বের নানা দেশের মিডিয়া বা ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম। তাদের ইন্ডাস্ট্রির সাথে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য কেন এতো তা বুঝার চেষ্টা করতাম। নানা পয়েন্ট বের করে মিলিয়ে দেখতাম সমস্যাগুলো আসলে কোথায়? তখন বুঝতে পারলাম আমাদের যোগ্যতার কোন কমতি না থাকলেও আমাদের মাঝে প্রচণ্ড রকমের সচেতনতার অভাব ও প্রফেশনালিজমের চরম ঘাটতি রয়েছে। যা নিজেদের জন্যই বিরাট ক্ষতির কারণ। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, তাহলে একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন শিল্পীদের বেলায় আসলে সবাই সব ফ্রিতে চায়। ফ্রিতে গান শোনা, মঞ্চ নাটক দেখার জন্য ফ্রিতে টিকেট চাওয়া ইত্যাদি।

এটিএন বাংলার অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল
এটিএন বাংলার অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল

অথচ যারা ফ্রিতে চাচ্ছেন তারা অন্য কাজে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করছেন। বিষয়টি এমন যে শিল্পীদের পেট নেই, ক্ষুধা কিংবা কোন চাহিদাও নেই। হাততালি দিয়ে কি শিল্পীদের চাহিদা মিটবে? আর উন্নত বিশ্বের শিল্পী বা সাধারণ মানুষের চিন্তা সম্পূর্ণ বিপরীত। এসকল চিন্তা থেকেই সিদ্ধান্ত নিলাম কপিরাইট নিয়ে এমন কিছু করতে হবে যা ইন্ডাস্ট্রির সকলেরই উপকারে আসে।

এর পরই কপিরাইট নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণের কথা মাথায় আসলো?
ফাহিম ফয়সালঃ আসলে এই চিন্তা মাথায় এসেছে বেশ কয়েকবছর আগেই। আমার চিন্তায় ছিলো এমন একটি পাবলিকেশন করতে হবে যা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবসময় ইন্ডাস্ট্রির সকলের কাজে লাগবে। তা হতে পারে বই কিংবা ডকুমেন্টারি। বিভিন্ন ধরনের চিন্তার এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম খুব দ্রুতই একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে ফেলবো। কিন্তু নানা কারণে ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করা হয়ে উঠেনি। ডকুমেন্টারির বিষয়, উপস্থাপনা, স্ক্রিপ্ট, বাজেট নানা বিষয়ে ভাবতে হয়েছে। পাশাপাশি ভাবতে হয়েছে এমনভাবে ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করতে হবে যাতে শুধু গান নয় ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থেই এটি কাজে লাগে। সব ভাবনা চিন্তা শেষে ২০১৯ সালের দিকে এটি নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০২০ সালে ভালোভাবে কাজে নেমে পড়ি। পরবর্তীতে কোভিড-১৯ চলে আসার পর হাতে বেশ সময় পাই। তখন এর নির্মাণে পূর্ণ মনোনিবেশ করি এবং ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে কপিরাইট সচেতনতায় দেশের সর্বপ্রথম ডকুমেন্টারিটি।

ডকুমেন্টারি মুক্তির পর সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
ফাহিম ফয়সালঃ যেহেতু আমি দীর্ঘদিন থেকে কপিরাইট সচেতনতায় কাজ করছি, নানান প্ল্যাটফর্মে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্লেষণ করছি সেহেতু অনেক আগে থেকেই ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির নানা শাখার মানুষজন আমার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করতেন। পরবর্তীতে যখন ডকুমেন্টারি নির্মাণ করলাম তখন পরিচিত-অপরিচিত, দেশ ও প্রবাসের সৃজনশীল অঙ্গণের নানা শাখার মানুষজন আমার নির্মিত ডকুমেন্টারিটি দেখে সচেতন হওয়ার কথা জানাতে থাকেন, প্রশংসা করতে থাকেন।

অনুকরণ নয়, সৃজনশীলতাকে প্রস্ফুটিত করুনঃ ©️ ফাহিম ফয়সাল
অনুকরণ নয়, সৃজনশীলতাকে প্রস্ফুটিত করুনঃ ©️ ফাহিম ফয়সাল

আর যে বিষয়টি না বললেই নয় তা হচ্ছে, কপিরাইট নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণে আমাকে সার্বিকভাবে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের তৎকালিন রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী মহোদয়। আমি উনার কাছে এবং বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের সকলের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, উনাদের সহায়তা ছাড়া এটি নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। আমার বিশ্বাস, ২ পর্বের এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে সৃজনশীল অঙ্গনের সকলেই কপিরাইট বিষয়ে সচেতনতা লাভের পাশাপাশি নিজস্ব সৃজনশীল কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে নিজের সৃজনশীল সকল কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনাও পাবেন।

বিএলসিপিএস-ওয়াইপো মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে উপস্থিত বাম পাশ থেকে- ডব্লিওআইপিও’র (WIPO) কপিরাইট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মিইউকি মোনরোয়িং , সিসাক এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক বেঞ্জামিন এনজি, কপিরাইট গবেষক-বিশ্লেষক-পরামর্শক ফাহিম ফয়সাল ও সিসাক উপদেষ্টা সাতোশি ওয়াতানাবে

কপিরাইট সচেতনতায় নির্মিত এই ডকুমেন্টারিটি সংগীতকর্ম, নাট্যকর্ম, চলচ্চিত্রকর্ম, সাহিত্যকর্ম, ফটোগ্রাফ, স্কেচ, কম্পিউটার-সফটওয়্যারকর্ম, কম্পিউটার গেইম, ডাটাবেইজ, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ সৃজনশীল অঙ্গনের বিভিন্ন শাখায় চলমান দীর্ঘদিনের বহু সমস্যা ও মতানৈক্যের সমাধান এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মাণ করেছি। ডকুমেন্টারিটি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ থেকে দেখা যাবে।

সতেনতা বৃদ্ধিতে ডকুমেন্টারিটি কেমন ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
ফাহিম ফয়সালঃ সৃজনশীল অঙ্গনের মানুষজন বিশেষ করে সংগীত সংশ্লিষ্টরা কপিরাইটের বিষয়ে এখন বেশ সচেতন হচ্ছেন। এটি খুবই আশার দিক। আমি আসলে কাজ করছি পুরো ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে। আর ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপমেন্ট হলে সবারই ডেভেলপমেন্ট হবে। উন্নতি চাইলে সামষ্টিক উন্নতি চাইতে হবে। কারণ, ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন রয়েছে শিল্পীরা আর তেমনই রয়েছেন প্রযোজকরা। কাউকে বাদ দিয়ে কিছু হবেনা। সকলেই সকলের পরিপূরক। উভয়পক্ষই যখন সচেতন হবেন, আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবেন, তখন এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রি উন্নতির দিকে যেতে থাকবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি জাতীর রুচিবোধ বা কৃষ্টিকালচার কেমন তা বুঝা যায় সে জাতির সৃজনশীল কর্মগুলো দেখেই। ইন্ডাস্ট্রি উন্নতির চাইলে, আমাদের রুচির উন্নতি চাইলে এককভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। সকলেরই অংশগ্রহণ লাগবে। কপিরাইট ও সকলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সকলকেই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ থেকে সামষ্টিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন ফাহিম ফয়সাল
মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন ফাহিম ফয়সাল

ডকুমেন্টারিটি দেখার পাশাপাশি সতেনতা বৃদ্ধিতে শিল্পীদের আর কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ফাহিম ফয়সালঃ প্রথমেই বলবো, সতেনতা বৃদ্ধির জন্য সকলেরই উচিত প্রামাণ্যচিত্রটি দেখা। এরপর সৃজনশীল অঙ্গনের প্রত্যেকেরই উচিত যার যার সৃজনশীল কর্মটির কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করে রাখা। কারণ, প্রতিটি সৃজনশীল কর্মই একেকটি সম্পদ। আর সম্পদের যদি কোন দলিল না থাকে তবে তা সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকে। কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব ও সুফল হচ্ছে- সৃজনশীল ব্যক্তি তার সৃজিত কর্মটিকে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি বেদখল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। তাই কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা উচিত। এর কোন বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় জায়গাতেই প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে। এখন যেহেতু ডিজিটাল মিডিয়ার যুগ সেহেতু এই বিষয়টির গুরুত্ব দিতেই হবে। এছাড়াও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রয়্যালিটি-এর সুবিধা ভোগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কর্মটির কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য করলে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা প্রসঙ্গে বলুন?
ফাহিম ফয়সালঃ আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগে অধ্যাপনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি সঙ্গীতায়োজন, অডিও-ভিডিও এডিটিং ও স্ট্রিমিং এবং সাউন্ড ডিজাইন নিয়ে পড়াচ্ছি। যেহেতু আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মজীবনে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবে সেহেতু তাদেরকে আমি মেধাস্বত্ব রক্ষায় কপিরাইট এর ভূমিকা ও গুরুত্ব নিয়েও পড়াচ্ছি।

গাজী টিভির অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল
গাজী টিভির অনুষ্ঠানে ফাহিম ফয়সাল

কারন, প্রতিটি অডিও-ভিডিওতে সাউন্ড বা মিউজিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ, আপনার কনটেন্ট যতো ভালো হোক না কেন, সাউন্ড বা অডিও ভালো না হলে সেটির মূল্য কমে যায়। পাশাপাশি নির্মাণ ও কপিরাইট সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম ও গবেষণা নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছি। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি মাল্টিমিডিয়া ডিপার্টমেন্ট আছে। যারা মাল্টিমিডিয়ার সকল শাখা নিয়েই শিক্ষাদান করে থাকে। তাই আমাদের ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী।

আপনি ‘ভার্সডসফট লিঃ’ নামে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কোন চিন্তা থেকে এমন একটি ডিজিটাল এজেন্সির সাথে যুক্ত হওয়ার চিন্তা করলেন।
ফাহিম ফয়সালঃ আমি মনে করি প্রত্যেক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীর ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের পাশাপাশি ব্যবসা করা উচিত। এতে সে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারে। কারণ, আমাদের দেশের ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি এখনও পুরোপুরি প্রফেশনাল হয়ে উঠেনি। অথচ বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে রেখেছে। সেই চিন্তা থেকেই আমি এই ডিজিটাল এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করি। আমরা ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে শুরু করে আইটি ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সকল সার্ভিস দিয়ে থাকি। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক ধরনের ক্লায়েন্ট আমাদের সার্ভিস নিয়ে তৃপ্ত। শুধু তাই নয়, আমরা শিল্পীদের জন্য ‘ডিজিটাল আর্কাইভ‘ ডেভেলপমেন্ট করে দিচ্ছি। আমাদের স্লোগান হচ্ছে- We Create Digital Identity. তাই যে কেউ চাইলে আমাদের কাছ হতে ডিজিটাল সার্ভিস নিয়ে তার ডিজিটাল আইডিন্টিটি ক্রিয়েট করতে পারবে।

বই এবং সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ থেকে আপনি ‘বইবার্তা’ নামক একটি বুলেটিন প্রকাশ করেন। একজন সংগীতশিল্পী হয়েও কেন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলেন তা জানতে চাই।
ফাহিম ফয়সালঃ আমি মূলত সংগীতশিল্পী হলেও ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপমেন্ট নিয়ে নিয়মিত গবেষণা, বিশ্লষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। ‘বইবার্তা’ নামক বুলেটিনটি প্রকাশ করি আমার বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘ইনসাইট কমিউনিকেশন’ থেকে। এটি মূলত সাবসিডি ওয়ার্ক। কোন লাভের জন্য আমরা এই বুলেটিন প্রকাশ করিনা। বই ও সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই ‘বইবার্তা’। পাঠকনন্দিত এই বুলেটিনটি আমরা গ্রন্থমেলা চলাকলীন সময়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করি।

মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ফাহিম ফয়সাল
মাল্টিমিডিয়া এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ফাহিম ফয়সাল
আমাদের স্লোগান হচ্ছে- ‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’।

গান ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
ফাহিম ফয়সালঃ বিভিন্ন লাইভ কনসার্ট করার পাশাপাশি নিয়মিত নতুন নতুন গান প্রকাশ করছি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রধান্য পাচ্ছে সূফি গান। সূফি গান করে আমি মানসিক তৃপ্তি পাই। সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের বা বান্দার সম্পর্কের নিগুঢ় তত্ত্বই উঠে আসে সূফি গানে। সাম্প্রতিক সময়ে আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘ফাহিম ফয়সাল অফিশিয়াল’ (https://www.youtube.com/c/FahimFaisalOfficial) থেকে প্রকাশিত সূফি গানের মধ্যে রয়েছে- ‘ক্ষমা’, ‘প্রাণ খুলে ডাকি তোমারে’, ‘কাবার দিকে মন আমার’, ‘অন্বেষণ’, ‘সিজদাহ করি তোমায় স্মরে’ ইত্যাদি। এছাড়া আমার নিজের গানের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও গান নির্মাণ করছি, সঙ্গীতায়োজন করছি। যেগেুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশ হচ্ছে আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেলে।

আমি মূলত পুরো ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থ চিন্তা করেই কাজ করছি। কপিরাইট সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমার আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো। যা ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপমেন্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরও একটি বিষয় সবাইকে জানিয়ে রাখছি, সেটি হলো আমি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। চলচ্চিত্রের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বাধীনতা পেলে শিঘ্রই চলচ্চিত্র নির্মাণেও হাত দিবো।

দাতব্য বা মানবিক কাজেও আপনাকে দেখা যায়…
ফাহিম ফয়সালঃ আমরা সাধ্য অনেক কম থাকলেও সাধ অনেক বেশি। তাই আমি আল্লাহর কাছে সবসময় প্রার্থনা করি আমি যেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমি দীর্ঘদিন থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছি। তবে মানুষের জন্য কিছু করতে হলে তা যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হয় তাহলে তার স্থায়িত্ব বেশিদিন থাকে। তাই ‘একিপ ফাউন্ডেশন‘ নামে একটি চ্যারিটি অর্গানাইজেশন করেছি। আমি এই অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান। ‘একিপ ফাউন্ডেশন’ এর মাধ্যমে আমরা সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য কাজ করি। মূলত আমার ও বিত্তবানদের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে এই অর্গানাইজেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *