ধানমন্ডি ৩২ সহ সারাদেশে ভাংচুরের সবশেষ পরিস্থিতি

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। ড. ইউনুস ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্যের ফলে সারাদেশে ক্রোধের আগুন জ্বলেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুজিব ম্যুরাল ও নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। শেখ পরিবারে স্মৃতিফলক সর্বত্র গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবাদী জনতা। জুলুম ও নিপীড়নের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত আওয়ামী কার্যালয় ও নেতাদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী গ্রাফিতিগুলোও মুছে ফেলা হয়েছে। বিবিসি-সহ দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে সচিত্র খবর প্রকাশ করেছে।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছাড়াও হাসিনার সুধা সদন ভাংচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা খুলনায় শেখবাড়ি, নোয়াখালিতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি, কুষ্টিয়ায় হানিফের বাড়ি, বরিশালে আমির হোসেন আমু ও সাদেক আবদুল্লাহর বাড়ি, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের বাড়ি, ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাড়ি-সহ নিপীড়নের কেন্দ্র সমুহ ঘুড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচারের ক্ষত চিহ্ন মুছিয়ে ফেলার এই ক্ষোভ ও উল্লাস থামানোর সাহস করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার।

৩২ নম্বরে শত শত মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভাঙচুর করেছে। তারপর ক্রেন, এক্সকাভেটর ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ক্ষুব্ধ জনতা পলাতক হাসিনার বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দিতে দিতে ভাংচুর চালিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। কাউয়া কাউয়া শ্লোগানে মুখরিত হয়ে তারা সেখানে ভাংচুর চালায়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে কাদেরের বাড়ি ছাড়াও তার ছোট ভাই শাহাদাতের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।

গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে খুলনার ‘শেখবাড়ি’। বুধবার রাত নয়টার দিকে নগরীর শেরেবাংলা রোড এলাকার ওই বাড়িতে হামলা চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। পরে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাড়িত ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ মানুষ। ভোলা সদরের গাজীপুর রোডের ‘প্রিয় কুটির’ নামে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িটি ভেঙ্গে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে।

বরিশালে দুই আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি ঘুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বুধবার রাতে শহরের কালীবাড়ি রোডে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি এবং জীবনানন্দ দাশ সড়কে আমির হোসেন আমুর বাস ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা ভেঙে ফেলা ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কুষ্টিয়ায় মাহাবুব উল আলম হানিফের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার রাতে নগরীর পিটিআই রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফের বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ মানুষ।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার চকসিংগা এলাকায় হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।

প্রতিবাদী মানুষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের নামফলক ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক ভেঙে ‘বিজয়-২৪’ নাম লিখে দেয়া হয়। সেইসাথে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলসহ মুজিব পরিবারের নামের বিভিন্ন গ্রাফিতি আর দেয়াল লিখন মুছে ফেলে উত্তেজিত জনতা। শহীদ কামারুজ্জামানের নামে নির্মাণাধীন হলের নামও পরিবর্তন করা হয়।

এছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে থাকা স্থাপনা। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামের বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল বুধবার রাতে ভেঙে উপড়ে ফেলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

বরিশাল প্রেস ক্লাবের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫ই অগাস্ট ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়েছিল। পরে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী প্রয়াত সাহান আরা বেগমের নামে নির্মিত পার্কটিও ভাঙচুর করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে’ নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজলাল কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর নগরীর প্রেসক্লাব মোড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নগরীর সার্কিট হাউস মাঠ সংলগ্ন শেখ মুজিবের পৃথক দুটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে প্রাঙ্গণে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। সাতক্ষীরা শহরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালেও চলে ভাঙচুর।
পরে জেলা পরিষদ ও সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও জেলা কমিটির সভাপ‌তির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি ম্যুরাল ও স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়।

পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সেইসাথে মাদারীপুর শহরের আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। যশোর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলায় ম্যুরাল ভাঙার খবর পাওয়া গিয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *