জালিম সরকারের শাসনে সাধারণ মানুষ সকল ন্যায্য অধিকার হারিয়েছে: মাওলানা মাসুম

বাংলাদেশ মতামত
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, আশুরা মুসলমানদের জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। আজকে আশুরাকে শুধুমাত্র কারবালার ঘটনার সাথে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এই দিন অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। হযরত আদম (আ:) এর আগমন থেকে শুরু করে, হযরত ইবরাহিম (আ:) এর আগুন থেকে মুক্তি, মুসা (আ:) এর ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তসহ অনেক ঘটনা। একদিকে ছিল তাগুতি শক্তি, যারা নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, অন্যদিকে ছিল নবী ও তার অনুসারীরা। এই লড়াইয়ের পরিণতিতে আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মারেন অন্যদিকে মুসা (আ:) কে বিজয়ী করেন।

তিনি কারবালার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) খেলাফত দখলের জন্য যাননি। যুদ্ধও করতে যাননি। বিবেকের তাড়নায় জাহেলিয়াতের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। তিনি ৩টি শর্ত দিয়েছিলেন। হয় তাকে সীমান্তের বাইরে রেখে আসা, নয়তো ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া অথবা মদীনায় ফিরে যেতে দেয়া। কিন্তু তাকে কোনটাই সুযোগ দেয়া হয়নি। সেখানেই তাকে শহীদ করা হয়। তিনি বলেন, কারবালার ঘটনা থেকে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা পেয়ে থাকি। সামর্থ্য যাই থাকুক, বিপদ-মুসিবতে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিগত ১৬ বছরে জালিম স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনে সাধারণ মানুষ তার ন্যায্য সকল অধিকার হারিয়েছে। আজকে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা ক্যারিকুলাম মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা ভেবে ছিলাম, গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ এখন কিছুটা নমনীয় আচরণ হয়তো করবে। কিন্তু না আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী আচরণের সামান্যতম পরিবর্তনও হয়নি। সম্প্রতি কোটা আন্দোলনে এই আওয়ামী লীগ সরকারের নগ্ন চেহারা আর সন্ত্রাসী বর্বরতা বিশ্ববাসী দেখেছে। তবে দেশের জনগণ তথা সাধারণ ছাত্র সমাজ আজ জেগে উঠেছে নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।

আজ ১৭ জুলাই ২০২৪ খ্রি. বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. কামাল হোসাইন ও ড. আবদুল মান্নান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসেন ও মো. শামছুর রহমান, মহানগরীর সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

এটিএম মাসুম তার বক্তব্যে বলেন, এই আওয়ামী লীগ কিছুদিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছিল। রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগ ব্যতিত সেই তালিকায় দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ দল বা বাহিরের কোনো সংগঠনের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আওয়ামী লীগের ইচ্ছায় লেখাপড়া করা ছাড়াই দেশের রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বের চেয়ারে আওয়ামীদের বসিয়ে দেওয়া হবে। মেধাহীন লোকদের কবলে পড়ে এদেশ মগের মুল্লুকে পরিণত হবে। ছাত্র সমাজ কোটার এই আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যেই রাখতে চেয়েছিল। এটাকে তারা ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী সরকারের উস্কানির কারণেই, তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণে, ছাত্রদের আন্দোলন আজ সারাদেশের রাজপথে ছড়িয়ে গেছে।

এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে যদি দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হয় মুসা আ. যেভাবে শাসক ফেরাউনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ঈশা আ. যেভাবে তার বিভ্রান্ত জাতির সাথে লড়াই করেছেন। ইউসুফ আ. যেভাবে মূর্তি পূজারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। মুহাম্মাদ রাসূল (সা) যেভাবে আবু জেহেল আবু লাহাবের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। ঠিক তেমনি ভাবেই আজকে আমাদেরকে এই বাংলাদেশে ন্যায়ের আন্দোলন দাবি পূরণে সেই লড়াই ছড়িয়ে দিতে হবে। এদেশে প্রতিটি অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লড়াইয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ড. খলিলুর রহমান মাদানি বলেন, সকল মাসের সম্মান আল্লাহ দিয়েছেন। হিজরি মাস বিষয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দেওয়া হয়, অথচ এটা পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জারি রেখেছেন। আজ দেশে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক সমাজের উদাহরণ চলছে। ইমাম হোসাইন ইয়াজিদের শাসনের বাইয়াত গ্রহণ না করে শাহাদাতের পথ বেঁছে নিয়েছেন। শহীদ হয়ে ইমাম হোসাইন রা. জানিয়ে দিলেন স্বৈরাচার বাতিলের কাছে হক কখনো মাথা নত করে না। এমনকি লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে মূলত কাবা শরীফকেও মহান আল্লাহ পবিত্র করেছেন। এই শিক্ষা দ্বীনে হক কায়েমের জন্য উদ্বুদ্ধ হওয়া আশুরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আশুরার প্রকৃত শিক্ষা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে উত্তীর্ণ হওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা যেদিন হবে সেদিন কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। আপনারা সচেতন ভাবে ময়দানে ভূমিকা পালন করুন। আজ বাংলাদেশে আওয়ামী গোষ্ঠী ভেবেছে আগামী ১০০ বছর তার বংশধরেরা কোটা দিয়েই পার পেয়ে শোষণ নিপিড়ন অব্যাহত রাখবে। কোটা আন্দোলনের ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করে এজন্যই তারা মেধাবীহীন জাতি গড়ে তুলতে চায়। গুলি করে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করছে। রাজনৈতিক দলের অফিসে তল্লাশি চালাচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অন্যায়ভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এসব কার স্বার্থে কোন কারণে জনগণ জানতে চায়। আওয়ামী লীগ যখন কোনো বিষয়ে চাপে পড়ে তখন তা আদালতের দিকে ঠেলে দেয়।

তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইমাম হোসাইন (রা:) আপোষহীন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আত্মসমার্পন করেননি, মাথানত করেননি, জীবন দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা আপোষ করেননি। কাপুরুষের মতো নিজের জীবন বাচাঁতে চিন্তাও করেননি। এসময় জেল, জুলুম, গুম, খুনের মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া যাবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *