খাবারের জন্য বের হয়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা

মধ্যপ্রাচ্য
শেয়ার করুন

ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেও গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ক্ষুধার জ্বালায় খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়ানো গাজাবাসীর যেন কোথাও নিস্তার নেই। প্রতিদিনই ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন তারা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯২ ফিলিস্তিনি। এ দিন ভোর থেকে হামলায় গাজা শহরে ও উত্তর গাজার নেতজারিম করিডোরের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় আরও ১৬ জন নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দেওয়া খাবারের আশায় প্রতিদিনই এই এলাকায় জড়ো হন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা। এখানে হামলার ঘটনাকে ‘ত্রাণের সামরিকীকরণ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এখানে ইসরায়েলি হামলার প্রত্যক্ষদর্শী বাসাম আবু শার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ রাতভর খাবারের আশায় সেখানে অবস্থান করছিলেন। বুধবার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা আমাদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। ট্যাংক, বিমান ও কোয়াডকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণের মাধ্যমে গোলাগুলি তীব্র হয়ে ওঠে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, এমনকি নিজেরাও পালাতে পারিনি।’ সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, এতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে।

প্রাণঘাতী হামলাগুলো যেন ‘দৈনন্দিন রুটিন’

কেন্দ্রীয় গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজযুম জানান, ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে হামলা এখন যেন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত ক্রসিংগুলো সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখার ফলে গাজা এখন এক বিশাল ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানবিক সহায়তার সব উপকরণ ফুরিয়ে গেছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে ওই কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে এক বস্তা ময়দা, এক বোতল পানি বা খাদ্যসামগ্রীর জন্য, যেগুলোর পুষ্টিমান খুবই কম বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।

তারেক আবু আজযুম বলেন, ইসরায়েলের এসব হামলা অব্যাহত থাকায় মানবিক করিডোরগুলো হত্যার ময়দানে পরিণত হয়েছে। এদিকে, নেতজারিম করিডোর এলাকায় কিছু ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি সেনাবাহিনীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, যেটি তাদের কাছে হুমকি মনে হয়েছিল— এমন দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাই তারা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। যদিও নিজেদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখায়নি তারা।

অন্যদিকে, আল শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ১৩ জন নিহত হন। সেখানে ফিলিস্তিনিরা তাদের বৈদ্যুতিক ডিভাইস চার্জ দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে জাবালিয়ার বহু বাসভবনে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার আরেক প্রতিনিধি হিন্দ খোদারি জানান, আল শাতি শিবিরে চার্জিং পয়েন্টে ইসরায়েলি হামলা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন গাজা অঞ্চলের বাস্তবতার প্রতিফলন।

তিনি জানান, গাজার পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়েছে যে, সেখানে মানুষ খাবারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। হিন্দ খোদারি বলেন, ‘প্রতিদিন খুবই সীমিত সংখ্যক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, আর মানুষ চরম হতাশায় যা পাচ্ছেন, তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।’

গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯টি লাশসহ ২২১ জন আহত ব্যক্তিকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৫ হাজার ৭০৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু। ইউএনবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *