খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ছাত্রদল ও যুবদলের সংঘর্ষে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আবাসিক হল ছেড়ে অনেক শিক্ষার্থী অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভিডিও: https://www.youtube.com/watch?v=r_gON5K3mE4
মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে আক্রমনকারী কয়েকজনের নেতৃত্ব দেওয়া যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয় বলে ছাত্র নেতারা দাবি করেছেন। তারা বলেন, ধারালো অস্ত্র হাতে যুবদলের লোকজনকে দেখে সাধারণ ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অবশেষে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল নেতা মাহবুবকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে কুয়েট শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা দাবি জানান। তারা বলেন, কোনো শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী কুয়েটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে, কোনো প্রকার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না বলে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। পাশাপাশি অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তি হিসেবে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের থেকে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মঙ্গলবার কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং তাদেরকে প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন থেকে হত্যার চেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সবাইকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা দেবে।
তারা আরো বলেন, আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আহত সবার চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। আহতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা দেবে। সব দাবি পূরণ করে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালককে (ছাত্র কল্যাণ) পদত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বুধবার দুপুর ১টার মধ্যে দাবি পূরণ করতে হবে। দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোনো ক্রমেই হল খালি করা যাবে না।
এদিকে কুয়েটে সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে থাকা মাহবুবুর রহমানকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা জেলা শাখার দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপরাধের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। ক্যাম্পাস গেটে পুলিশ মোতায়েন আছে। আর যাতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।