ওসমানী বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন

প্রবাসী যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীবহুল সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি জানানো হয়েছে। সেইসাথে প্রবাসীদের অবদান বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে প্রবাসী প্রতিনিধি থাকাও সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ গাজীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সভাপতি আব্দুল মুকিত। তিনি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে কাজে লাগাতে প্রবাসীদের সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহনের আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান সেলিম এই দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের নতুন উপদেষ্টা পরিষদ বিপ্লবের চেতনায় জাতি গঠনের পক্ষে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে জাতিসংঘ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-সহ ৯২ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০৬ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের নেতারাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশের জনগণের মতো ড. ইউনূসও স্বৈরাচারীতার শিকার। গণতান্ত্রিক এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচার উৎখাত হয়েছে। ড. ইউনূস যেমনটা বলেছেন, বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় স্বাধীনতা উপভোগ করছে এবং জাতি হিসেবে তার পূর্ণ সম্ভাবনা পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকের সভাপতি আব্দুল মুকিত আরো বলেন, আমরা প্রবাসীদের পক্ষ থেকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি। পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে প্রবাসীরাও নানা ভাবে সহায়তা করতে সক্ষম। স্বৈরাচারি সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আমরা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলাম। হাসিনার পদত্যাগের পর আবার অর্থ পাঠানো শুরু করেছি। শুধু আগস্ট মাসেই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় ২০০ কোটি (২.২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

আব্দুল মুকিত বলেন, দেশে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য নতুন প্রচারণা আমরা চালু করছি। এতে আগামী দিনে ধারনাতীত ভাবে প্রবাসী আয় বেড়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে ইউকে এবং আমেরিকা থেকে অন্তত দুইজন প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকার বিষয়টি গুরুত্বেকর সাথে বিবেচনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে লন্ডন-সিলেট- লন্ডন ফ্লাইটের ভাড়া কমানো জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি।

এখানে উল্লেখ্য যে, বহু কালের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে লন্ডন-সিলেট- লন্ডন রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর কিছুদিন পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ প্রায় নয় বছরের প্রতিক্ষার পর ২০২০ সালে আবারো চালু হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিমান লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকা গেলেও সিলেটের যাত্রীদের অনেক বেশী ভাড়া দিতে হয়। এমন বৈষম্যমূলক আচরণ অন্য কোন দেশে কল্পনাও করা যায় না। প্রবাসীদের দাবি, ওসমানী বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সুবিধায় সমৃদ্ধ করা হোক। সেই সাথে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-সহ বিদেশী বিমান ওঠানামার সুযোগ দেয়া হোক। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বিপ্লবের পর আমাদের সাথে যেন আর কোন বৈষম্য করা না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য।

নতুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্রজনতার বিপ্লবকে ধ্বংস করে দিতে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর নানা চক্রান্ত চলছে। জুডিশিয়াল ক্যু ছিল ষড়যন্ত্রের প্রথম অপচেষ্টা। তারপরই পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আনসারকাণ্ড, রিকশা মিছিল, উদীচী গোষ্ঠী-সহ নতুন নতুন নামে ও অবয়বে রাস্তায় নামছে। আমরা মনে করি, সচিবালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসারদের মারামারির ঘটনা প্রশাসনকে আরো দ্রুত গতিতে মোকাবেলা করা উচিত ছিল। কারণ এভাবে সুযোগ পেলে ফ্যাসিস্ট শক্তি ভয়াবহ কিছু ঘটাতে সক্ষম হবে। অতীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তারা মহান স্বাধীনতার ঘোষককে তখন নির্মমভাবে হত্যা করে সক্ষম হয়েছিল। একারণে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এবং গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের সাথে জড়িত পুলিশ, র‌্যাব-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অপরাধিদের জবাবদিহির আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ভিডিও লিংক : https://www.facebook.com/100082959350902/videos/527849066309245

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *