ইস্তিগফার কি?
ইস্তিগফার হলো, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইস্তিগফারের বিষয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ❝আল্লাহর ক্বসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও অধিক ইস্তিগফার করি (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) এবং তাওবাহ করি।❞ (বুখারী ৫/২৩২৪)
আমরা কীভাবে ইস্তিগফার করবো?
ইস্তিগফার যে কোন শব্দেই করা যায়। এমনকি ❝ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন!❞ – বলে দু’আ করলেও হবে।
তবে রসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বাক্যে ইস্তিগফার করেছেন, সে বাক্যে ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে অতি উত্তম! নিম্নে হাদীসে বর্ণিত কিছু ইস্তিগফার দেয়া হলো! মুখস্থ করে নিতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
১| ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ (আস্তাগফিরুল্লাহ)। শুধু ❝আস্তাগফিরুল্লাহ❞ বলা।
রসূল (ﷺ) নামাজ শেষে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন। (মুসনাদে আহমদ- ২২৪০৮)
২| ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻻَّ ﻫُﻮَ، ﺍﻟﺤَﻲُّ ﺍﻟﻘَﻴُّﻮﻡُ، ﻭَﺃﺗُﻮﺏُ ﺇﻟَﻴﻪِ
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ❝যে ব্যক্তি এই দু’আ পাঠ করবে সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে।❞ (আবু দাঊদ ১৫১৭)
৩| ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻰَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ
রসূলুল্লাহ (ﷺ) মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু’আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছি। (আবু দাঊদ ১৫১৬)
৪| ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻪ
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ❝আমি রাসূল (ﷺ)-র চাইতে কাউকে অধিক এই ইস্তিগফার বলতে শুনি নি – ❝আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি❞!❞ (নাসায়ী কুবরা ১০২১৫)
৫| ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খুব বেশি বেশি এই দু’আ পড়তেন। এমনকি রাসূল (ﷺ) ইন্তিকালের আগেও এই দু’আটি অনেকবার করেছেন। (সহীহ মুসলিম ৪৮৪)
তবে, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইস্তিগফার হলো, ❝সাইয়িদুল ইস্তিগফার❞।
৬| ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ، ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ، ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ، ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
এই বিষয়ে হাদীসে এসেছে- যে কোন ব্যক্তি সাইয়িদুল ইস্তিগফার সকালে পড়লে ওই দিন সন্ধ্যার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল হওয়ার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬)
ইস্তিগফারের ১৭ টি উপকারিতাঃ
১। অধিক ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২। ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করেন।
৩। দ্বীন পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।
৫। ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়।
৬। মানব ও জীন-শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়।
৭। দ্বীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯। বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০। দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর হয়।
১১। বেকারত্ব দূর হয়।
১২। আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩। মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪। হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫। কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬। মন্দ কজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭। আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু’আ করেন।
আল্লাহ্ আমাদেরকে নিয়মিত ইস্তিগফারের আমাল করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।