স্বাধীনতার আবৃত্তি ।। নাসিম আহমেদ

শিল্প-সংস্কৃতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাপর সময়ে যে সব কবিতার আবৃত্তি গণমানুষের চেতনাকে জাগ্রত করেছিল তাকে আমরা স্বাধীনতার আবৃত্তি বলি। দেশের আপামর জনসাধারণকে একটি রক্তক্ষয়ি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য অসীম সাহসী করে তুলেছিল স্বাধীনতার আবৃত্তি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় প্রাক মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এর কাল পরিধি সুদীর্ঘ। আমাদের মুক্তির আন্দোলনে শিল্পকলা ও সাহিত্য সমান্তরাল ভূমিকা পালন করেছে রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে। মুক্তিকামী মানুষের চেতানাকে জাগরুক রেখেছে এবং অভীষ্টে চলার পথে প্রেরণা দিয়েছে।

বাঙালির সভ্যতার ইতিহাসে এর প্রমাণ শত সহস্র। মানুষের ইতিহাস মূলত অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিরন্তর যাত্রার ধারাক্রম। বন্ধনমুক্তির স্বপ্ন, শৃঙ্খল ভাঙ্গার গান। যুগে যুগে বাংলাদেশের স্বাপ্নিক মানুষেরা নতুন সমাজকাঠামো গড়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিপ্লবের সহায়ক শক্তি হিসেবে শরণ নিয়েছে গল্প উপন্যাস, কবিতা, নাটক, চিত্রকলা, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, চলচ্চিত্র, ইত্যাদি শিল্প মাধ্যমের।

শিল্প সাহিত্য বিপ্লবকে দেয় ভাষা আর বিপ্লব শিল্প সাহিত্যকে দেয় মুক্তি। বিপ্লব এবং শিল্প সাহিত্য পরস্পর পরিপূরক শক্তি। এই পরিপূরক শক্তি হিসেবে শিল্প-সাহিত্যের একটি শাখা আবৃত্তি শিল্প আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিল। আবৃত্তিশিল্প গণমুখি চরিত্র নিয়ে বাংলার হাটে মাঠে বাটের সাংস্কৃতিক মজলিসে, জনসমাবেশে সাধারণের বৈপ্লবিক চেতনাকে উদ্দীপ্ত করেছিল পুঁথি পাঠ ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব কটি আন্দোলনের সাথে আবৃত্তি শিল্পের সহযোগ ছিল। কখনো কবিরা তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন, কখনো আবৃত্তি-অভিনয় শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি করেছেন বিক্ষুব্ধ সমাবেশে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, রেডিও, টেলিভিশনে, শহীদ মিনারে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শিল্পী সংগ্রাম পরিষদের বিরামহীন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি শিল্পের ঈর্ষণীয় পরিবেশনা জাতীয় জাগরণের সঞ্জিবনী হিসেবে উপস্থিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চের অনুষ্ঠানগুলোতে যে সব কবিতার আবৃত্তি হতে দেখা যেত তার কয়েকটির কথা লিখছি :

কাজী নজরুল ইসলাম – বিদ্রোহী, মানুষ, সাম্যবাদী, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার, আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম, প্রলয়োল্লাস, চল্ চল্ চল্, এক বৃন্তে দুটি কুসুম ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, সুপ্রভাত ইত্যাদি।
জীবনানন্দ দাশ – রূপসী বাংলা
জসীম উদ্দীন– নিমন্ত্রণ
সিকানদার আবু জাফর– বাংলা ছাড়, সংগ্রাম চলবেই।
সুকান্ত ভট্টাচার্য– উদ্যোগ, দুর্মর, ছাড়পত্র
সৈয়দ আলী আহসান– আমার পূর্ববাংলা

ঢাকা বেতারের নিয়ন্ত্রণ ভার তখন পরোক্ষ ভাবে শিল্পী সংগ্রাম পরিষদের হাতেই ছিল। বেতারেও এই সব কবিতার আবৃত্তি শোনা যেত। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত এই ধারা অব্যহত ছিল। সে রাতে শুরু হয় পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। আবৃত্তির মঞ্চ, বেতার টেলিভিশন স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সম্প্রচার শুরু করে ২৬মার্চ ১৯৭১ থেকে। এই বেতার কেন্দ্র স্বাধীনতার ঘোষণা, ভাষণ বারবার সম্প্রচার করেছে ৩০মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত। তারপর পাকিস্তান বাহিনীর বোমা বর্ষণের ফলে তা বন্ধ হয়ে যায়। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপি আর) এর সহযোগিতায় সংগ্রামী জনতা ১ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটার সরিয়ে এনেছিল মুক্তাঞ্চলে এবং ‘বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নাম নিয়ে ০৩ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত এই কেন্দ্র অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিল।

তবে এই কেন্দ্র থেকে আবৃত্তি প্রচারিত হয়েছিল কিনা তার কোন তথ্য প্রমাণ এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তখনকার বাস্তবতায় আবৃত্তি প্রচার করা দুরূহ ছিল বলেই মনে হয়। তথ্য প্রমাণে জানা যায় এই বেতার কেন্দ্র রেকর্ডকৃত ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার আহ্বান ও গান সম্প্রচার করেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগরে ৫০ কিলোওয়াট মধ্যম তরঙ্গ শক্তি সম্পন্ন ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে ২৫ মে ১৯৭১ সাল থেকে। দিনটি ছিল কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। মুজিবনগরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এম আর আখতার মুকুলের ব্যঙ্গ রচনা ‘চরমপত্র’ পাঠ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। পাকিস্তানীদের প্রতি ঘৃণা শ্লেষ বিদ্রুপ হাস্যকৌতুকের মধ্য দিয়ে তিনি এক বিশেষ ঢং এ পরিবেশন করতেন ঢাকাইয়া ভাষায়।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে স্বরচিত গল্প-কবিতা-কথিকা পাঠ করেছেন সিকান্দার আবু জাফর, সৈয়দ আলী আহসান, আবদুল গাফফার চৌধুরী, টি এইচ শিকদার, মাহবুব তালুকদার, বুলবুল ওসমান, আসাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, বিপ্লব দাস, বিপ্রদাস বড়ুয়া, রফিক নওশাদ, অরূপ তালুকদার, ফতেহ্ লোহানী, আশরাফুল আলম, উম্মে কুলসুম, মুজিব বিন হক, নিখিলরঞ্জন দাশ, মোস্তফা আনোয়ার, আশফাকুর রহমান খান, কাজী রোজী, প্রমুখ। পুঁথি পাঠ করতেন মোহাম্মদ শাহ বাঙালী।

কাজী সব্যসাচী অতিথি আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে প্রায়ই আবৃত্তি করতেন কাজী নজরুল ইসলামের উদ্দীপনামূলক কবিতা। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয়ী হবার পরও ১৯৭২ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছিল।

একথা সত্য যে আবৃত্তিশিল্প স্বাধীনতা আন্দোলনের সমগ্র অংশ জুড়ে অবদান রেখেছে কিন্তু আবৃত্তি করার জন্য পৃথক আবৃত্তিশিল্পী ছিল না। যারা অনুষ্ঠানে, বেতারে আবৃত্তি করেছেন তারা সকলেই ছিলেন কবি, অভিনেতা, ঘোষক, উপস্থাপক এবং কথক। স্বাধীনতার পরেও বিভিন্ন মঞ্চে, বেতারে, টেলিভিশনে প্রচারিত আবৃত্তিও তাঁরাই করতেন। শুধু আবৃত্তি শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পী সমাজ তখনো গড়ে ওঠেনি।

স্বাধীন বাংলা বেতারে কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি বাংলাদেশের মানুষকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল। আবৃত্তি ছিল কাজী সব্যসাচীর নেশা ও পেশা। নজরুল তনয় ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে কাজী সব্যসাচী বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। আবৃত্তি যে একক শিল্প হতে পারে তারও জানান দিয়েছিলেন কাজী সব্যসাচী।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষের আমন্ত্রণে কাজী সব্যসাচী কয়েকবার ঢাকা আসেন এবং বিশাল বিশাল অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন। তাঁর জলদ গম্ভীর কণ্ঠে কাজী নজরুলের বিদ্রোহী, আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, সাম্যবাদী, প্রলয়োল্লাস, এক বৃন্তে দুটি কুসুম, আগমনী, নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম, শামসুর রাহমানের স্বাধীনতা তুমি, ইত্যাদি কবিতার আবৃত্তি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় উল্লাসে উজ্জীবিত মানুষের আশা আকাক্সক্ষার সমার্থক হয়ে ওঠে। কাজী সব্যসাচী আবৃত্তিকে নেশা ও পেশা করেছিলেন। বলা চলে তাঁর প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আবৃত্তিকে পৃথক শিল্প মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করার প্রেরণা লাভ করে।

১৯৭৫ সালে ঢাকায় ‘আবৃত্তি সংসদ’ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় একে একে গড়ে উঠতে থাকে আবৃত্তি সংগঠন এবং শুরু হয় ব্যাপক আবৃত্তির চর্চা, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে। সর্বত্র আবৃত্তি অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে দেশের সব মঞ্চে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবৃত্তির অনুষ্ঠান হয়। বিশেষ দিবস ছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আবৃত্তির অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে।

স্বাধীনতা দিবসের আবৃত্তি অনুষ্ঠানগুলোতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধই বিবৃত হতে থাকে কবিতায় কবিতার কণ্ঠে কণ্ঠে অজস্রধারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কবিতা বিজয় দিবসের কবিতা এবং স্বাধীনতা দিবসের কবিতা বিষয় আঙ্গিকে প্রকরণে সমধর্মী। বাংলাদেশের এমন কোন কবি নেই যিনি একুশে, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা লেখেননি। কারণ এই ঐতিহাসিক মহান ঘটনাগুলো আমাদের জাতিসত্তা বিনির্মাণে ভ‚মিকা রেখেছে, বিজয়ের অভ‚তপূর্ব গৌরব দান করেছে। আর সেই সব বীরগাথা আমাদের শিল্প সাহিত্য ধারণ করে চলেছে বিচিত্র মাধুর্যে বিবিধ মাত্রিকতায়।

স্বাধীনতার আবৃত্তিতে আমাদের আবৃত্তিশিল্পীরা কবিতার হিরন্ময় পংক্তিমালা দেশের মানুষকে শুনিয়ে যাচ্ছেন শিল্পসম্মত নান্দনিকতায়। নিরক্ষর আর অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন সকলেই তৃপ্ত হচ্ছেন শিল্প সুষমায়। প্রবীণেরা স্মৃতিকে করছেন শাণিত আর নবীনেরা হচ্ছেন চেতনায় উদ্দীপ্ত। প্রত্যেকে পরিণত হচ্ছেন স্বাধীন সার্বভৌম মাথা নত না করা বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী রূপে ।

স্বাধীনতার কবিতা আবৃত্তি এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার মধ্যে সীমিত নেই। পরিসীমা বেড়ে দেশের কবিতা, মানুষের কবিতা, অধিকারের কবিতা, সাম্যের কবিতা, ঐক্যের কবিতা, শান্তির কবিতা, মানবাধিকারের কবিতায় স্থান করে নিয়েছে এবং তা যাচিত ও কাক্সিক্ষত। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলোতে যে সব কবিতা আবৃত্তি করা হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ পেশ করা যাক :

কাজী নজরুল ইসলাম : বিদ্রোহী, আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, মানুষ, সাম্যবাদী, প্রলয়োল্লাস, নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম, কুলি মজুর, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার, আগমনী, একবৃন্তে দুটি কুসুম, কামাল পাশা, চল্ চল্‌ চল্‌, সংকল্প, অগ্রপথিক, সাত ভাই চম্পা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : সুপ্রভাত, প্রশ্ন, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, ত্রাণ, ন্যায়দণ্ড, ওরা কাজ করে।
জসীম উদদীন : দগ্ধগ্রাম, মুক্তিযোদ্ধা, আমার বাড়ি, নিমন্ত্রণ,
গীতারা চলিয়া যাবে, গীতারা কোথায় গেল।
সুফিয়া কামাল : উদাত্ত বাংলা, আজকের বাংলাদেশ
আবুল হোসেন : পুত্রদের প্রতি
আহসান হাবীব : সার্চ, স্বাধীনতা, আমি কোন আগন্তুক নই।
সিকান্দার আবু জাফর : বাংলা ছাড়, সংগ্রাম চলবেই।
শামসুর রাহমান : স্বাধীনতা তুমি, গেরিলা, তুমি বলেছিলে, তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, অভিশাপ দিচ্ছি।
হাসান হাফিজুর রহমান : তোমার আপন পতাকা
সৈয়দ আলী আহসান : আমার পূর্ববাংলা, দেশের জন্য
আবদুল গাফফার চৌধুরী : আমার দুখিনি বাংলা
আলাউদ্দিন আল আজাদ : স্বাধীনতা ওগো স্বাধীনতা
সৈয়দ শামসুল হক : গেরিলা, জগন্নাথ হল
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ : আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান : জর্নাল ১৯৭১, সহজে নয়, শহীদ স্মরণে
আবু হেনা মোস্তফা কামাল : ছবি, আমার সত্তা এই দেশ
ফজল শাহাবুদ্দিন : বাংলাদেশ একাত্তরে, এপ্রিলের একটি দিন ১৯৭১
আল মাহমুদ : ক্যামোফ্লাজ, কারফিউ, নোলক, ঊনসত্তরের ছড়া, কৃষ্ণচ‚ড়ার পাতা ফাঁকে
শহীদ কাদরী : নিষিদ্ধ জর্নাল থেকে, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, ব্ল্যাক আউটের পূর্ণিমায়
বেলাল চৌধুরী : মর্মে মর্মে স্বাধীনতা, একদিন চির দিন জয়-বাংলা
আবদুল মান্নান সৈয়দ : মুক্তিযুদ্ধ
আসাদ চৌধুরী : রিপোর্ট ১৯৭১, শহীদদের প্রতি, তখন সত্যি মানুষ ছিলাম, বারবারা বিডলার-কে
রফিক আজাদ : নেবে স্বাধীনতা, একজন মুক্তি যোদ্ধার আত্মসমর্পণ
মুস্তফা আনোয়ার : বৈশাখের রুদ্রজামা
খালেদা এদিব চৌধুরী : স্বাধীনতা কোমল পাথর
নির্মলেন্দু গুণ : আগ্নেয়াস্ত্র, হুলিয়া, স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হল, স্বাধীনতা উলঙ্গ কিশোর, আমাকে কি মাল্য দেবে দাও
মহাদেব সাহা : তোমার জন্য, একজন মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরিতে
আবুল হাসান : উচ্চারণগুলি শোকের
রবিউল হুসাইন : প্রিয়তম বাংলাদেশ
হুমায়ুন আজাদ : মুক্তিবাহিনীর জন্যে
আবু কায়সার : জার্নাল ’৭১
মুহম্মদ নূরুল হুদা : আমরা তামাটে জাতি
অসীম সাহা : পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মঘাতি রক্তপাত
মাহবুব সাদিক : যুদ্ধভাষণ
খোন্দকার আশরাফ হোসেন : বাউসী ব্রিজ ’৭১
হেলাল হাফিজ : নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, অস্ত্রসমর্পণ
আবিদ আজাদ : গ্রেনেড, আমার অক্ষমতার গল্প. এখন যে কবিতাটি লিখব আমি
জাহিদ হায়দার : খোলা জানালার দিন
হাসান হাফিজ : না, মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথোপকথন, রক্তে রচিত নতুন পাতাকা
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ : বাতাসে লাশের গন্ধ
নাসিমা সুলতানা : যুদ্ধে যাওয়ার গল্প
কামাল চৌধুরী : ক্রাচের যুবক
নাসির আহমেদ : বুকের ভেতরে বাজে
মিনার মনসুর : কী জবাব দেব
মাশুক চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধের কবিতা
ইকবাল আজিজ : বাঙালির অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ
মারুফ রায়হান : সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ
রেজাউদ্দিন স্টালিন : একজন মুক্তিযোদ্ধার মহত্তম ক্ষমা
আল মুজাহিদী : আমারই বাংলাদেশ, মাটি বড় প্রিয়
ফরহাদ মজহার : আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে
মাহবুব হাসান : টগর তোর স্বাধীনতা, বিজয় আমার স্বাধীনতা
আবদুল হাই শিকদার : আমি হাজির, কসম
নাসিমা সুলতানা : যুদ্ধে যাওয়ার গল্প
সুকান্ত ভট্টাচার্য : উদ্যোগ, দুর্মর, ছাড়পত্র
ফয়েজ আহমদ : শ্রীনগরে যুদ্ধ
জাকির আবু জাফর : অতঃপর বাংলাদেশ, সবুজ বাংলাদেশ

স্বাধীনতা দিবসের কবিতা মূলত মুক্তিযুদ্ধ-কথা ও দেশপ্রেমের আবেগে সঞ্জাত বীর রসের এক বাণী ভুবন। আবৃত্তি শিল্পীরা তেজদীপ্ত স্বরে উদাত্ত কণ্ঠে দৃঢ়চিত্তে তা আবৃত্তি করে থাকেন। স্বাধীনতার কবিতা সুআবৃত্তি যোগ্য। শ্রোতা-দর্শক গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনে থাকেন।

উত্তর প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার মূল্যবোধ পৌঁছে দিতে স্বাধীনতার আবৃত্তি এক জরুরি বিষয়। এই সব আবৃত্তি শুনে বর্তমান এবং আগামীর মানুষ স্বদেশকে ভালবাসবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে প্রাণিত হবে। বাংলা সাহিত্যের কয়েকজন কবি স্বাধীনতার কবিতা লিখে অমর হয়ে আছেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যে সব গান গাওয়া হয়েছে সেগুলো যেমন সিডিবদ্ধ দলিলে পরিণত করা হয়েছে তেমনি স্বাধীন বাংলা বেতারের আবৃত্তিগুলো সিডিতে সংরক্ষণ করা জরুরি। এখনো স্বাধীনতার উৎসব পূর্ণাঙ্গ হয়না স্বাধীনতার আবৃত্তি ছাড়া।

* নাসিম আহমদ আবৃত্তি শিল্পী ও লেখক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *