ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের জন্য ছয় শতাধিক আইনজীবীর চিঠি

মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ছয় শতাধিক আইনজীবী। এরমধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও কয়েকজন বিচারক। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে।

লন্ডনে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষের মিছিল থেকে যুদ্ধ বিরতি ও ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজায় অব্যাহতভাবে বর্বর বিমান হামলায় তিনজন ব্রিটিশ ত্রাণকর্মী-সহ ওয়ার্ল্ড সেন্টার কিচেনের (ডাব্লিউসিকে) সাতজন সহায়তাকর্মী নিহত হওয়ার পর এই দাবি আরো জোরদার হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, সরকারের পদক্ষেপগুলিতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে দেওয়া চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লেডি হেল-সহ দেশ বরেণ্য আইনজীবীগণ স্বাক্ষর করায় তার সরকারের ওপর বিশেষ চাপ বেড়েছে। চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, গাজায় ‘গণহত্যার ঝুঁকির’ পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই তেল আবিবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, গাজার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের উপসংহারে “গণহত্যার যুক্তিসঙ্গত ঝুঁকি” যুক্তরাজ্যকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করতে বাধ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্য অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করলে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। কারণ, গাজায় চালানো ধ্বংসযজ্ঞের কারণে আন্তর্জাতিক তদন্তের কবলে পড়েছে ইসরায়েল।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে ১৭ পৃষ্ঠায় আইনি মতামতের আলোকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যদিও আমরা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আপনার সরকারের ক্রমবর্ধমান জোরালো আহ্বানকে স্বাগত জানাই এবং একই সাথে গাজায় অবিরত মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশকে স্বাগত জানাই। তবে, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা এবং ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সিকে যুক্তরাজ্যের সাহায্য স্থগিত করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আপনার সরকারের বাধ্যবাধকতার আওতায় পড়ে।

ডাব্লিউকেসির বহরে হামলার পর থেকে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে পড়েছেন ঋষি সুনাক। ওই ঘটনার পর সুনাক নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ত্রাণ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। নেতানিয়াহুকে সুনাক বলেন, ‘যদি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবর্তনের কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলে আমরা ঘোষণা দেব।’

কনজারভেটিভ দলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যান ডানকান বলেছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে আসছে। ডানকান ২০১০ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে একজন মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরায়েল কর্তৃক তিনজন ব্রিটিশ-সহ সাতজন সাহায্য কর্মীকে হত্যার ঘটনাকে “নির্দয়” হিসাবে বর্ণনা করে এই হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন।

দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে স্যার অ্যান ডানকান বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে ইসরায়েল এখন গাজাকে মানুষের জন্য অনুপযুক্ত জায়গা হিসাবে ধ্বংস করতে চায় বলে মনে হচ্ছে। তারা অন্তর্জাতিক আলোকিত নীতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে এবং কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক আচরণ করছে না।

রক্ষণশীল সংসদ সদস্য ফ্লিক ড্রামন্ড এবং ডেভিড জোন্সও অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। লেবার পার্টির সাবেক প্রধান জেরেমি করবিন যুদ্ধ বন্ধের দাবীতে সর্বদা সোচ্চার রয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা স্যার এড ড্যাভি বলেন, পার্লামেন্টে অধিবেশন ডাকা উচিত, যাতে এমপিরা ভোট দিয়ে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করাতে পারেন। এসএনপি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটরাও অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লর্ড রিকেটস বলেন, যুক্তরাজ্যের উচিত ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা।

উল্লেখ্য, আগ্নেয়াস্ত্রবিরোধী সংস্থা ক্যাম্পেইন অ্যাগেনস্ট আর্মস ট্রেডের (সিএএটি) তথ্য বলছে, ২০০৮ সাল থেকে ৫৭ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের অস্ত্র ইসরায়েলকে সরবরাহ করেছে যুক্তরাজ্য। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইম্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *