ফয়সাল আমিন কাজি (ফাহিম ফয়সাল): ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতজুড়ে চলছে হইচই। জনপ্রিয়তার কারণেই বিপুল টাকার বাণিজ্য করে ফেলেছে ছবিটি। প্রতি দিনই বাড়ছে সেই অঙ্ক।
কিন্তু এর মধ্যেই ছবিটি নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক উঠে আসছে। এক শ্রেণির দাবি, ছবিটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আবার আরেক শ্রেণির মতে, এটি নিখাদ ইতিহাস। এরই মধ্যে ছবিটি নিয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ওমর বলেছেন, এই ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তার অনেক কিছুই সত্যি নয়।
তিনি বলেন, “এটি কি তথ্যচিত্র? তাহলে তো এতে সত্যি ঘটনা দেখানো উচিত। ছবিটি সম্পর্কে তো বলা হচ্ছে যে এটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে নির্মিত ফিচার ফিল্ম।”
তিনি আরও বলেন, “যখন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ঘরছাড়া হন, তখন ফারুক আবদুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। তখন জগমোহন ছিলেন জম্মু এবং কাশ্মীরের রাজ্যপাল,”
ওমরের প্রশ্ন, তাহলে এটিকে ইতিহাস কেন বলা হচ্ছে? তবে এখানেই থামেননি তিনি। ওমর বলেন, এই ছবিতে নানা রকম ভুল দেখানো হয়েছে।
তার কথায়, “যখন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ঘরছাড়া হন, তখন ফারুক আবদুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। তখন জগমোহন ছিলেন জম্মু এবং কাশ্মীরের রাজ্যপাল। আর তখন ভিপি সিংয়ের সরকার ছিল কেন্দ্রে। সেটি ছিল বিজেপি সমর্থিত সরকার।”
কিন্তু এতসব বিতর্কের মাঝেও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর জনপ্রিয়তায় ঘাটতি পড়েনি বরং ছবির প্রশংসায় মাত বলিউডের একাংশ। আর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিবেক অগ্নিহোত্রি পরিচালিত ছবিটি। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বক্স অফিসে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর আয়। কোনও প্রোমোশন, বড় তারকামুখ না থাকা সত্ত্বেও এই ছবি যেভাবে সাড়া ফেলেছে গোটা ভারতে, তা এক কথায় বিস্ময়কর।ছবিটিকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে রাজনৈতিক বিতর্ক। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’কে ‘বিজেপির ছবি’ হিসেবে তকমা সেঁটে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ারই বড় একটা অংশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় দর্শকেরা একে-অপরকে অনুরোধ করছেন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখতে, কেউ আবার শেয়ার করছেন ভারতের কোন এক হলে নাকি এ সিনেমার টিকিট কিনলেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে খাবারে। কোম্পানির মালিক নাকি তার কর্মীদের ফ্রিতে দিয়েছেন ছবির টিকিট!
আবার একই সাথে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’কে ‘বিজেপির ছবি’ হিসেবে তকমা সেঁটে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ারই বড় একটা অংশ। ইতিমধ্যে ছবিটিকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
কারও কারও মতে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি-র পক্ষ থেকে এই ছবি বানানো হয়েছে। স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টুইট করে এক পরিচালক লিখেছেন, তিনি গুজরাট ফাইলসের উপর ছবি বানাবেন এরপর। সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, সেই ছবি মোদি মুক্তি পেতে দেবেন তো?
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমার নাম না করেই কটাক্ষ করতে দেখা গেছে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকেও। মমতা বলেছেন, “কেউ সিনেমা দেখতে যাবে না। ভাইরাল ভিডিও দেখবেন না। সিনেমায় যা দেখায় তা কখনোই সত্যি নয়। তাই সেগুলো বিশ্বাস করবেন না। এগুলো সব বানানো। সিনেমা সিনেমাই। কোনও দিন সত্যি হবে না।’
এবার এই ছবির ভূয়সী প্রশংসা করলেন জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা আর মাধবন। টুইট করে এই ছবির উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন তিনি।
তরণ আদর্শ নামে ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় ফিল্ম ট্রেড আ্যানালিস্ট প্রতিদিন এই ছবির বক্স অফিস কালেকশনের অঙ্কটি সবার সামনে তুলে ধরছেন। তার সেই টুইটে মাধবন লিখেছেন, ‘এককথায় অবিশ্বাস্য এবং অভূতপূর্ব! সত্যি বলতে কী হিংসেও হচ্ছে আবার একই সঙ্গে এই ছবির গোটা টিমের জন্য গর্বও হচ্ছে। দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’
এর আগে কিরণ খের থেকে শুরু করে কঙ্গনা রানাওয়াত, মুকেশ খান্নার মতো বলিউডের বিভিন্ন পরিচিত মুখ এই ছবির প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন অক্ষয় কুমারও। কিছুদিন আগে টুইট করে জানিয়েছিলেন যে তিনি এখনও এই ছবি দেখার সময় বের করে উঠতে পারেননি বটে, তবে খুব জলদি তা করবেন। তিনি আরও লেখেন যে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-কে দারুণভাবে দর্শক গ্রহণ করেছেন এবং তার ফলাফল টের পাওয়া যাচ্ছে এই ছবির বক্স অফিস কালেকশনে। রীতিমত গর্জে উঠেছে এই ছবি। পাশাপাশি ফের একবার দল বেঁধে হলমুখী হওয়ার জন্যও দর্শকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন ‘খিলাড়ি’।
অক্ষয় ছবির অন্যতম মুখ্য অভিনেতা অনুপম খেরের পারফরমেন্সের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। বর্ষীয়ান অভিনেতার উদ্দেশে অক্ষয়ের টুইট, ‘এই ছবিতে আপনার অভিনয়ের ব্যাপারে দুর্দান্ত সব কথা শুনছি।’
নিজভূম থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়ন এবং উচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবিটি।