প্রখ্যাত সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারে ৭৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত হাসান শাহরিয়ারের ৭৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল ২০২৪) জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সেগুন বাগিচার বাসভবন ও জন্মস্থান সুনামগঞ্জের হাসননগরস্থ বাসায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৪৬ সালের ২৫ এপ্রিল বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের হাসন নগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন হাসান শাহরিয়ার। তাঁর পারিবারিক নিবাস ছিল তাহিরপুরের লাউড়েরগড়ের বিন্নাকুলি গ্রামে। বাবা মকবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন তদানীন্তন আসামের প্রথম মুসলিম সম্পাদক। তিনি কলকাতার দৈনিক ‘ছোলতান’, সিলেটের সাপ্তাহিক ‘যুগবাণী’, ‘যুগভেরী’ ও ‘সিলেট পত্রিকা’ সম্পাদনা করেন। তিনি ছিলেন খেলাফত নেতা, আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এমএলএ) ও ভাষাসৈনিক। বাবাকে অনুসরণ করে সাংবাদিকতায় আসেন হাসান শাহরিয়ার।

সাংবাদিকতার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী ‘নিউজউইক’,পাকিস্তানের ডন, মধ্যপ্রাচ্যের খালিজ টাইমস, চট্টগ্রামের ‘ডেইলি পিপলস ভিউ’-এর প্রধান সম্পাদক ও দক্ষিণ ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ড্যাকান হেরাল্ড’-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন হাসান শাহরিয়ার। এছাড়া ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি দেশে-বিদেশে সমাদৃত ছিলেন। বৈদেশিক সংবাদদাতা সমিতি ওকাব-এর সাবেক সভাপতি, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ)-এর ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন হাসান শাহরিয়ার।

সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাঁকে ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি ‘অতীত অতীত নয়,’ ‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’, ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’, ‘ নিউজ উইক’-এ ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তি যুদ্ধ ও বিজয় শীর্ষক বই লিখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল তাকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করেছে। তিনি সিলেট প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। এছাড়া সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী ও কলামিস্ট হোসেন তওফিক চৌধুরী সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারের অগ্রজ।

হাসান শাহরিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আই.এ এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে বহু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ন্যায় ও সত্যের পথ বেছে নিয়ে তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছেন। নীতির প্রশ্নে কখনো আপোস করেননি। এজন্য তিনি কয়েকবার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। সম্পাদকের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *