তাঁকে আপনার ভার নিতে দিন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ:মাসুম খলিলী

এক. আপনার সাথে খারাপ আচরণ করা হলে অথবা আপনি গুজব ইত্যাদির বিষয় হয়ে থাকলে ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন, কিছু জিনিস আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। প্রতিটি উদ্বেগ, ভয় ও উতকণ্ঠাকে প্রার্থনায় পরিণত করুন। এটিকে সর্বশক্তিমানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার আরেকটি কারণ হিসাবে দেখুন। তাঁকে আপনার ভার নিতে দিন।

দুই. কম কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমরা অন্যের প্রতি যা কিছু করি তার ব্যাখ্যা দেয়া বা তা ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করি? এর কোনও প্রয়োজন নেই। আমাদের অনেককে সেই পথেই লালিত করা হয়েছে। এই রীতি থেকে মুক্তি নিন। প্রত্যেকেরই সব কিছু জানার দরকার নেই। মনে রাখবেন, কমই হলো সব সময় বেশি!

পূনশ্চঃ

এক. অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যখন সন্দেহ, ক্রোধ এবং উদ্বেগের অন্ধকার ঝড়ো মেঘ জমতে শুরু করে, সর্বদা নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে কোন কিছুই স্থায়ী হয় না। প্রতিটা ঝড় কেটে যাবে। সর্বশক্তিমান আপনাকে পরীক্ষা করছেন এবং যতক্ষণ না আপনি তাঁর উপর ভরসা করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই পরীক্ষা করতে থাকবেন।

দুই. আমরা যখন রমজানের অর্ধেক চিহ্ন অতিক্রম করছি, আপনি কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তার হিসাব নিন। এজন্য খুব দেরী হয়েছে এমন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শেষ দশ রাতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তা শক্তিশালীভাবে শেষ করা। চলতে থাকুন। সর্বশক্তিমান আপনার সমস্ত প্রচেষ্টা তা যতই ছোট হোক না কেন জানেন এবং দেখেন। তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।

তিন. আপনি যদি ইতিবাচক পরিবর্তন চান, আপনার আয়েশের বলয় থেকে বেরিয়ে আসুন এবং আজই শুরু করুন। এ সম্পর্কে কথা বলে কোনও পার্থক্য আনা যাবে না। পরিবর্তন ভীতিকর হতে পারে; আসলে, অজানার সঙ্গে কিছু করার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রভাব রয়েছে। আপনার সেরা প্রচেষ্টাটি চালান। আপনার যাত্রায় সর্বশক্তিমানকে দৃঢ আস্থায় রাখুন!

চার. অন্যের জন্যও প্রার্থনা করুন। শুধু নিজের জন্য প্রার্থনা করবেন না। অনেকে নিরবে কষ্ট পাচ্ছেন। দুঃখের বিষয় হল আমাদের সমাজ অন্যদেরকে সবসময় মনে করতে উৎসাহ দেয় যে তারা সবাই ঠিক ঠাক মতো রয়েছেন। অবশ্যই আপনাকে অন্যভাবে বলার সুযোগ দেয়া উচিত এবং আপনার এক্ষেত্রে সাহায্যের দরকার। ভুলে যাবেন না যে, হাসি নিরব কষ্টের লক্ষণও হতে পারে!

পাঁচ. আমরা এক রকম তাৎক্ষণিক সমাজে থাকি। আপনি যা চান, আপনি তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পাবেন। তাৎক্ষণিক তৃপ্তি হয় মূল বিষয়। আমরা অনেকটা সেভাবেই সংযুক্ত। কিন্তু বাস্তব জীবন সে রকমটি নয়। আমাদের পরীক্ষার জন্য ধৈর্য প্রয়োজন। সাফল্য রাতারাতি আসে না। যাত্রাপথের প্রশংসা করুন। সংগ্রামেই রয়েছে সৌন্দর্য।

ছয়. জীবনের বিষয়টি হ’ল এটি আপনাকে নিয়ে অথবা আপনাকে ছাড়া বয়ে চলবে। আপনার যাত্রা পথে যা আসে তার জন্য প্রস্তুত থাকুন। আপনি যখন বৈরিতার প্রত্যশা কম করেন, এটি আপনাকে পরীক্ষা করবে, আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। আপনি কীভাবে এর প্রতি সাড়া দেন তা আপনার সারাজীবনের জন্য প্রভাব তৈরি করবে। কোন কিছুকে নিশ্চিত হিসাবে গ্রহণ করবেন না। সব সময় সতর্ক থাকুন!

সাত. মানুষকে অগ্রাধিকার দেবেন না। তাতে আপনি হতাশ হবেন। হ্যাঁ, আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন এবং ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন তবে তাদের উপর আপনার আশা জড়িয়ে রাখবেন না। তারা মানবিক এবং তাদের দুর্বলতা রয়েছে। সর্বদা সর্বশক্তিমানকে তালিকার শীর্ষে রাখুন। তিনি আপনাকে আপনার ভ্রমণের বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞা দেবেন!

দ্রষ্টব্য:

তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে?’ বলুন, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের নিকটেই আছে। কেবল তিনিই যথাকালে তা প্রকাশ করবেন। তা হবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের নিকট আসবে। আপনি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করেই তারা আপনাকে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকটেই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (আল আরাফ:১৮৭)

তোমরা সেই দিনকে (শেষ বিচারের) ভয় কর, যেদিন কেউ কারো উপকারে আসবে না, কারো নিকট হতে কোন ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না, কোন সুপারিশ কারো পক্ষে লাভজনক হবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না। (সূরা আল বাকারা:১২৩)

সেদিন কতকগুলো মুখমন্ডল সাদা (উজ্জ্বল) হবে এবং কতকগুলো মুখমন্ডল কালো হবে। যাদের মুখমন্ডল কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), বিশ্বাসের পর কি তোমরা অবিশ্বাস করেছিলে? সুতরাং তোমরা অবিশ্বাস করার পরিণামে শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আলে ইমরান:১০৬)

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা আলে ইমরান:১৮৫)

বলুন, আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তা কার? বলুন, আল্লাহরই, তিনি তার নিজের উপর দয়া করা লিখে নিয়েছেন। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই একত্র করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবে না। (সূরা আন নিসা:১২)

যারা আল্লাহর সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, হায়! এটাকে আমরা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ। আর তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে। সাবধান, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা আল আনআ’ম:৩১)

তিনি যথাবিধি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ সেদিন তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।(সূরা আল আনআ’ম:৭৩)

তারপর (সেই তোমরাই তো) একে অন্যকে হত্যা করছ এবং তোমাদের এক দলকে (তাদের) আপন গৃহ হতে বহিষ্কার করে দিচ্ছ, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে পরস্পরের সহযোগিতা করছ এবং তারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের কাছে উপস্থিত হচ্ছে, তখন তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে মুক্ত করছ; অথচ তাদের বহিষ্কারকরণও তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা ধর্মগ্রন্থের কিছু অংশে বিশ্বাস আর কিছু অংশকে অবিশ্বাস কর? অতএব তোমাদের যেসব লোক এমন কাজ করে, তাদের প্রতিফল পার্থিক জীবনে লাঞ্ছনাভোগ ছাড়া আর কি হতে পারে? আর কিয়ামতের (শেষ বিচারের) দিন কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা যা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ অনবহিত নন। (সূরা আল বাকারা:৮৫)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *