কুরআনের ছায়াতলে জীবন গঠন ।। আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুছ

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ করা

জাহিলিয়াত যুগে মানুষের অভ্যাস ছিল কোন কাজ শুরু করতে দেব-দেবীর নামে তারা শুরু করতো। এই প্রথা রহিত করে সকল কাজ আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য প্রথম অহীর নির্দেশনা হল; ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক- পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।

‘বিসমিল্লাহির রাহমানিররাহীম’ সূরা নামলের আয়াতের একটি অংশ এবং দুটি সূরার মাঝখানে একটি পুর্ণাংগ আয়াত হিসাবে কুরআনে উল্লেখ আছে।

সাবা রাণীর কাছে হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম ইসলাম গ্রহন করার দাওয়াত দিয়ে যে চিঠি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে প্রেরণ করেছিলেন তার শুরু করেছিলেন বিসমিল্লাহ দিয়ে।

মহাগ্রন্থ আলকুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তাওবা ছাড়া আর সকল সূরার শুরুতে বিসমল্লিাহ লিখা আছে। ইমাম শাফেয়ী বিসমিল্লাহকে সূরা ফাতিহার অংশ মনে করেন। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী তাঁর তাফসীর মাফাতেহ আল ঘায়বে বিসমিল্লাহকে সূরা ফাতিহার অংশ প্রমান করার জন্য ১৬টি যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু ইমাম আলুসী তাঁর তাফসীর রুহুল মাআনীতে উল্লেখ করেন বিসমিল্লাহ সূরা নামলে একটি আয়াতের অংশ; এটা সূরা ফাতিহার অংশ নয়।

রাসুলে কারীম (সা) বিইসমিকা আল্লাহুম্মা বলে প্রত্যেক কাজ শুরু করতেন এবং কোন কিছু লিখতে হলেও এই কথা প্রথমে লিখতেন। কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর সকল কাজের শুরুতে তা পাঠ করতেন।

খন্দকের পরিখা খনন করার সময় হযরত যাবির শুধুমাত্র আল্লাহর রাসুলকে দাওয়াত দেন। রাসুলে কারীম (সা) উপস্থিত সকল সাহাবাকে নিয়ে যাবের (রা) এর বাড়ীতে উপস্থিত হন। যেহেতু খাদ্য খুবই কম ছিল তাই যাবের খুব বিব্রত হয়ে পড়েন। রাসুল (সা) তাকে বললেন তুমি খাদ্য আমার সামনে নিয়ে আসো। যাবের (রা) খাদ্য এনে আল্লাহর রাসুলের সামনে রাখলে তিনি বিসমিল্লাহ বলে তা বিতরণ শুরু করেন। মাত্র দুএকজনের খাবার কয়েকশত সাহাবা তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পরেও আরও অবশিষ্ট ছিল।

হযরত জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আল্লাহর রাসুলকে বলতে শুনেছি যখন কোন মানুষ তার ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করে এবং আহার গ্রহনের আগে আল্লাহর নাম নেয় তখন শয়তান তার সাথীদের বলে তোমাদের জন্য এই ঘরে রাত অতিবাহিত করার কোন অবকাশ নেই এবং কোন খাদ্য নাই। আর যখন কোন মানুষ আল্লাহর নাম না নিয়েই ঘরে প্রবেশ করে তখন শয়তান তার সাথীদের বলে এখন এই ঘরে তোমাদের জন্য রাত অতিবাহিত করার ব্যবস্থা হয়ে গেল। তারপর সে ব্যক্তি যখন আহার গ্রহনের আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করলোনা তখন শয়তান বলে তোমাদের রাত কাটানো ও আহার গ্রহনের ব্যবস্থা এই ঘরে হয়ে গেল- মুসলিম।

হযরত হুযাইফা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে কারীম (সা) এর সাথে একদিন আহার করতে উপস্থিত হলাম। এমন সময় একটি ছোট্ট মেয়ে এসে এমনভাবে খাদ্যের উপর ঝুঁকে পড়লো যেন সে ক্ষুধায় অত্যন্ত কাতর। সে খাদ্যের দিকে অগ্রসর হতেই রাসুলে কারীম (সা) তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর একজন বেদুঈন এসে খাদ্যের উপর ঝুঁকে পড়তে আল্লাহর রাসুল তার হাতও ধরে ফেললেন। তারপর তিনি বললেন, যে খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয়না শয়তান এসে তা নিজের জন্য হালাল করে নেয়। শয়তান এই মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিলো এর মাধ্যমে সে তার নিজের জন্য খাদ্য হালাল করার জন্য। আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর শয়তান এই বেদঈনকে নিয়ে আসলো তার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য হালাল করার জন্য। আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ। এই দুজনের হাতের সাথে শয়তানের হাতও আমার হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ রয়েছে। তারপর তিনি আল্লাহর নাম নিলেন অর্থাত বিসমিল্লাহ বললেন এবং আহার শুরু করলেন- মুসলিম।

হযরত ইবনে আব্বাস বলেন নবী করীম (সা) বলেছেন যদি কেহ স্ত্রী সঙ্গমের পূর্বে বলে আল্লাহর নামে আরম্ভ করতেছি। হে আল্লাহ শয়তানকে আমাদের নিকট হতে এবং আমাদিগকে যা দান করবে তা হতে দূরে রাখ। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাহাদিগকে কোন সন্তান দিলে শয়তান কখনও তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা- বুখারী ও মুসলিম।

আল্লাহর রাসুল বলেছেন, যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতীত আরম্ভ করা হয় তাতে কোন বরকত থাকেনা। তাই আমরা অজু করার আগে, কোন জীবন যবেহ করার সময়, খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলি; কোন কিছু পান করতে, আরোহন করতে, খুলতে বা বন্ধ করতে বিসমিল্লাহ বলা প্রয়োজন।

কিন্তু এই ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আরবীতে বিসমিল্লাহির রাহমানিররাহীম পড়ার পরিবর্তে ‘পরম করূনাময়ের নামে শুরু করছি‘ বাংলা অনুবাদ উচ্চারণ করলে বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রে প্রতিটি বর্ণ তিলাওয়াতের যে নেকী রয়েছে তা পাওয়া যাবেনা। তাই আরবীতে ‘বিসমল্লিাহির রাহমানির রাহীম’ বলা প্রয়োজন।

রাসুলে কারীম (সা) বলেন, যে কোন বৈধ কাজ আল্লাহর নাম না নিয়ে শুরু করা হলে সে কাজ অবশ্যই অসম্পুর্ণ ও অকল্যাণে পরিপুর্ণ হবে।

আমরা একটুভাবি। সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে কিনা? মাওলানা মওদুদীর মতে, প্রত্যেটি কাজের আগে বিসমিল্লাহ বলা মুসলমানদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি রীতি। (চলবে)

* আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুছ লেখক ও গবেষক, চেয়ারম্যান হিউম্যান কেয়ার ইনিশিয়েটিভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *