একটি মেরুদণ্ডের গল্প ।। জাকির আবু জাফর

ছড়া-কবিতা শিল্প-সংস্কৃতি
শেয়ার করুন

মর্যাদার রাজমহল প্ররোচিত করলো আমাকে
বললো- দেখো মেরুদণ্ড নির্মাণের লোয়াজিমা বিক্রি হয় কোথাও?

আমি জগতের হাটগুলো খতিয়ে বাজারগুলোর তলপেট ঘাটলাম।
শহরের আনাচ কানাচ চষে খুঁজলাম পৃথিবীর আধুনিক শপিংমল
কর্পোরেট হাউজের বুকও হাতালাম
নাহ্ কোথাও নেই শিরদাঁড়া সোজা রাখার ইট সুরকি
বরং মেরুদণ্ড গুঁড়ো করার হাজারটি উপকরণ একদমই সুলভ
বলুন তো কি করি এখন!

হঠাৎ মনে পড়লো জনাব শিক্ষা সাহেবের কথা
হ্যা তাইতো! সবার মুখে মুখে ওই এক কথা- শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড
সহসাই পৌছালাম শিক্ষা সাহেবের দরবারে
বললাম- মেরুদণ্ড সোজা রাখার দাওয়াইটি আমার ভীষণ দরকার!
আমাদের সব আছে শুধু মেরুদণ্ডটি ঋজু নেই।

মলিন হাসলেন তিনি, বললেন- তোমরা দেখছি আচ্ছা বোকা!
দেখছোনা বহুদিন আমার নিজেরই মেরুদণ্ড নেই। বেঁচে আছি বড় কষ্টে শিষ্টে
কেমন করে তোমাদের দণ্ড সোজা রাখার দাওয়াই দেই!

ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে রইলাম আমি
মুখ দেখে মনে হলো শিক্ষা সাহেবের ডায়াবেটিস
ভাঙাচোরা গাল, ফ্যাকাসে মুখ! উদাস দৃষ্টি অনেকটা ঘোলা!
সারা দেহে পরদেশী সংস্কৃতির জ্বর! কপালে জাতি বিভক্তির নকশা
চোখের মণিটি কোনোভাবেই দেশীয় নয়
চেনাচেনা হলেও অচেনার অংশ বৃহত্তর
আমি কী করে তার কাছে মেরুদণ্ডের ঔষধ চাই!

আকষ্মিক চোখে পড়লো একটি বিজ্ঞাপন- এখানে আত্মসম্মান বিক্রি হয়
ভাবলাম মেরুদণ্ড সোজা রাখার বিষয়টি তো আত্মসম্মানের সাথেই ওতোপ্রোতো
বললাম- মেরুদণ্ড সোজা রাখার কিছু দিন
পলকেই জবাব – সব আছে ওটি ছাড়া
চোখ ঘোরালাম চতুর্দিকে, দেখলাম- আত্মসম্মানের মোড়কে সাজানো যাবতীয়
সম্মানহানির মশলা!
মেরুদণ্ড খুঁজতে এখন কোথায় যাই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *