ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় লেবার পার্টি ছাড়লেন নিউক্যাসলের প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ লর্ড মেয়র

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

গাজায় যুদ্ধবিরতি সমর্থন করতে স্যার কিয়ার স্টারমারের অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে লেবার দলের তৃণমূল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় লেবার পার্টি ছাড়লেন নিউক্যাসলের প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ লর্ড মেয়র কাউন্সিলর হাবিব রহমান। এর আগে লেবার পার্টির এমপি ইমরান হুসাইন সহ আরো অনেকে পদত্যাগ করেছেন।

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে সম্প্রতি দলের ফ্রন্টবেঞ্চ থেকে পদত্যাগ করছেনে লেবার পার্টির এমপি ইমরান হুসাইন। তিনি সংসদ সদস্য এবং কর্মসংস্থান অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ছিলেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পক্ষে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারের অবস্থানের কারণে তিনি এই পদত্যাগের সিন্ধান্ত নেন।

ইমরান হুসাইন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের শান্তির জন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের অংশ হিসেবে একটি স্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়ে কাজ করার কথা জানান। এই বিষয়ে লেবার পার্টির পেছনে থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি।

গত নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্রিটিশ আইনসভায় ভোটাভুটি হয়। অবিলম্বে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন লেবার পার্টির ৫৬ জন এমপি। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত নিয়ে দলনেতা স্যার কেয়ার স্টারমারের অবস্থান ও নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে তাঁরা এই ভোট দেন।

আইনসভায় স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির উত্থাপিত প্রস্তাবটিতে বলা হয়, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে লড়াইরত সব পক্ষের ওপর জরুরি ভিত্তিতে চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্যের যোগ দেওয়া উচিত। প্রস্তাবটি সমর্থন করা লেবারদলীয় এমপিদের মধ্যে স্টারমারের পলিসি টিমের অনেক সদস্য ছিলেন। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে তাঁরা ছায়ামন্ত্রীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে জেস ফিলিপস, আফজাল খান ও ইয়াসমিন কোরেশির মতো নেতা রয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদে যুক্ত হলেন নিউক্যাসলের প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ লর্ড মেয়র কাউন্সিলর হাবিব। তিনি ২০২১ সালে নিউক্যাসলের প্রথম নন-হোয়াইট লর্ড মেয়র হয়েছিলেন। তার নির্বাচনী শ্লোগান ছিল-‘শো রেসিজম দ্য রেড কার্ড’ বা ‘বর্ণবাদকে লাল কার্ড দেখাও’। মিস্টার স্টারমারকে ইসরায়েলের পক্ষ সমর্থনে “ফিলিস্তিনি জনগণের ধ্বংসের পক্ষে ওকালতি করার” অভিযোগ করেছেন তিনি।

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন- বিবিসির খবরে বলা হয়েছে সাবেক লর্ড মেয়র হাবিব রহমান শুক্রবার লেবার দলকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের সংস্কৃতি’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

হাবিব রহমান জানান, ‘আমি বর্ণবাদের শিকার হয়ে লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করছি। গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করার জন্য এবং শ্বেতাঙ্গ না হওয়ার কারণে আমি বর্ণবাদের সম্মুখীন হয়েছি। আমাকে সমর্থন করার পরিবর্তে উল্টো বাধা দেওয়া হয়। যেটি আসলে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি ভাঙতেই আমি পদত্যাগ করেছি।

জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম পলিটিকো.ইইউ লিখেছে- মিস্টার রহমান ৩০ জনেরও বেশি লেবার কাউন্সিলরদের সাথে যোগ দিয়েছেন, যারা নেতার অবস্থানের জন্য দল ছেড়েছেন।

মি. রহমান ঘোষণা করেছেন যে তিনি এখন নিউক্যাসল সিটি কাউন্সিলে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

সুত্র মতে, এক চিঠিতে মি. রহমান কিয়ার স্টারমারকে লিখেছেন- “ইসরায়েল সরকারের প্রতি ক্রমাগত সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের নিরীহ পুরুষ-মহিলা ও শিশুদের প্রতি মানবতার অভাব অগ্রহণযোগ্য। গাজায় ইসরায়েলি সরকারের বোমাবর্ষণের প্রতি আপনার অটুট সমর্থন ফিলিস্তিনি জনগণের ধ্বংসের পক্ষে সমর্থন করার চেয়ে কম কিছু নয়।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের হিজলশাহ গ্রামের কৃতি সন্তান হাবিবুর রহমান ১৯৮৫ সালে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। এখানেই লেখাপড়া করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে সমাজসেবা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন। ইতিপূর্বে নিউক্যাসল সিটি কাউন্সিলে ডেপুটি মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *