বিশ্বের শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সময় চিন্তা সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হয়েছেন লুই ভিইতোর প্রতিষ্ঠাতা বার্নার্ড আর্নল্ট। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আর্নল্ট ও তার পরিবারের মোট সম্পদ গত শুক্রবার পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬০ (২৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পায়। এরমধ্য দিয়ে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৭৮০ কোটি (২০৭ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) ডলারে।

অন্যদিকে ফোর্বস রিয়েল-টাইম বিলিয়নিয়ার্স তালিকায় উল্লেখ করা হয়, টেসলার সিইও ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০ হাজার ৪৫০ কোটি (২০৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন) ডলার।

শুক্রবারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে টেসলার বাজার মূলধন ৫৮ হাজার ৬১৪ কোটি (৫৮৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন) ডলার। অন্যদিকে আর্নল্টের লুই ভিটনের মোট বাজার মূলধন ৩৮ হাজার ৮৮০ কোটি (৩৮৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স ও লাইভ মিন্টের।

বিশ্বের ১০ ধনী ব্যক্তি
ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নিয়ার্স তালিকা অনুসারে, বিশ্বের ১০ ধনী ব্যক্তি ও তাদের সম্পদের পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

১. বার্নার্ড আর্নল্ট ও পরিবার
সম্পদের পরিমানঃ ২০ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার।
৭৪ বছর বয়সী ফরাসি নাগরিক বার্নার্ড আর্নল্ট লুই ভিইতো মোয়েত হোসেইয়ের (এলভিএমএইচ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। প্রতিষ্ঠানটিকে সংক্ষেপে লুই ভিইতোও বলা হয়। এটি মূলত ফ্রান্সের একটি বৃহৎ ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল কোম্পানি। ফ্যাশন, সুগার, ওয়াইন এবং প্রসাধনী শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্নার্ড আর্নল্ট তার সম্পদ অর্জন করেছেন।

২. ইলন মাস্ক
সম্পদের পরিমানঃ ২০ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি), মহাকাশ ভ্রমণ এবং সৌরশক্তির ক্ষেত্রে তার উদ্ভাবনী কাজের জন্য পরিচিত। এছাড়াও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার কিনে আলোচনায় আসেন।

৩. জেফ বেজোস
সম্পদের পরিমানঃ ১৮ হাজার ১৩০ কোটি ডলার।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোস। তিনি অনলাইন ই-কমার্স এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ক্ষেত্রে নেতৃত্বমূলক ভূমিকার জন্য পরিচিত।

৪. ল্যারি এলিসন
সম্পদের পরিমানঃ ১৪ হাজার ২২০ কোটি ডলার।
ওরাকল করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ল্যারি এলিসন বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তিনি কম্পিউটার সফটওয়্যার শিল্পে তার অবদানের জন্য পরিচিত।

৫. মার্ক জাকারবার্গ
সম্পদের পরিমানঃ ১৩ হাজার ৯১০ কোটি ডলার।
মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, জাকারবার্গ বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি। তিনি সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিকাশের জন্য পরিচিত।

৬. ওয়ারেন বাফেট
সম্পদের পরিমানঃ ১২ হাজার ৭২০ কোটি ডলার।
বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। তিনি বিনিয়োগ ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ সমাদৃত।

৭. ল্যারি পেজ
সম্পদের পরিমানঃ ১২ হাজার ৭১০ কোটি ডলার।
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ল্যারি পেজ বিশ্বের সপ্তম ধনী ব্যক্তি। তিনি অনলাইন অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞাপন শিল্পে তার কাজের জন্য পরিচিত।

৮. বিল গেটস
সম্পদের পরিমানঃ ১২ হাজার ২৯০ কোটি ডলার।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল গেটস বিশ্বের অষ্টম ধনী ব্যক্তি। এক সময় তিনি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষে ছিলেন। তিনি কম্পিউটার সফ্টওয়্যার শিল্পে তার অবদানের জন্য পরিচিত।

৯. সের্গেই ব্রিন
সম্পদের পরিমানঃ ১২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার।
সের্গেই ব্রিন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বর্তমানে বিশ্বের নবম ধনী ব্যক্তি। সের্গেই ব্রিন অনলাইন অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞাপন শিল্পে তার কাজের জন্য পরিচিত।

১০. স্টিভ বালমার
সম্পদের পরিমানঃ ১১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার।
ফোর্বসের সেরা ১০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় সবার শেষে রয়েছেন স্টিভ বালমার। মাইক্রোসফটের এই সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কম্পিউটার সফ্টওয়্যার শিল্পে তার নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য পরিচিত।

এদিকে, ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের (আরআইএল) চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১১তম স্থানে রয়েছেন। তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৪৪০ কোটি (১০৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) ডলার।

অন্যদিকে দেশটির আরেক ধনকুবের গৌতম আদানি রয়েছেন ১৬তম অবস্থানে। আদানির মোট সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৫৭০ কোটি (৭৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ প্রান্তিকে লুই ভিইতোর ব্যবসা পর্যালোচনাঃ
২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে এলভিএমএইচের বিক্রি ১০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির উচ্চমানের ফ্যাশন পণ্যের জন্য চীনসহ অন্য দেশের ক্রেতাদের কাছে চাহিদা ছিল। এই কারণে তাদের বিক্রি বেড়েছে। বিদায়ী বছরের শেষ তিন মাসে লুই ভিইতো, ডিওর এবং টিফানিসহ বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল গ্রুপের মালিকানাধীন ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি (২৪ বিলিয়ন) ইউরো (২৬ বিলিয়ন ডলার)।

এলভিএমএইচের ফ্যাশন ও চামড়াজাত পণ্য বিভাগে বিক্রি গত প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা কোম্পাটির প্রত্যাশিত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম।

খবরে বলা হয়, পারফিউম, প্রসাধনী, ঘড়ি ও গয়নাতেও বিক্রি বৃদ্ধি করেছে এলভিএমএইচ। তবে তাদের ওয়াইন ও স্পিরিট ইউনিটে বিক্রি কমেছে। ২০২৩ সালের পুরো বছরে কোম্পানিটির ওয়াইন ও স্পিরিট ইউনিটে বিক্রি কমেছে ৪ শতাংশ।

এলভিএমএইচ বলেছে, মোয়েত হোসেইয়ের নেতৃত্বে তার শ্যাম্পেন তৈরির কার্যক্রম বেড়েছে। তবে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-পরবর্তী স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার কারণে তাদের কগনাক (এক ধরনের মদ) খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোম্পানিটির সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভায় আর্নল্ট ঘোষণা করেছেন, তার ছেলে আলেকজান্দ্রে (৩১ বছর) এবং ফ্রেডেরিককে (২৯ বছর) বোর্ডে যোগদানের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো হবে।

এদিকে টেসলার শেয়ার বিপর্যস্তঃ
এদিকে ইলন মাস্কের টেসলার শেয়ার গত বৃহস্পতিবার ১২ শতাংশের বেশি কমে গেছে। চলতি বছরে কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির গতি ধীর হবে- ইলন মাস্কের এমন সতর্কতার পরে শেয়ারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধস নামে। গত বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম টানা এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে। এক দিনেই কোম্পানির বাজার মূল্য থেকে ৮ হাজার কোটি (৮০ বিলিয়ন) ডলার হারিয়ে গেছে। এই পতনের ফলে মাসের হিসাবে টেসলার বাজার মূলধন প্রায় ২১ হাজার কোটি (২১০ বিলিয়ন) ডলার কমে গেছে।

খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে টেসলা রাজস্ব আয়ে ২ হাজার ৫২০ কোটি (২৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার যোগ করেছে। এই রাজস্বের পরিমাণ ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস দেওয়া ডলারের চেয়ে কম। ওয়ালস্ট্রিট পূর্বাভাস দিয়েছিল টেসলা ২ হাজার ৫৯০ কোটি (২৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার রাজস্ব আয় যোগ করবে।

(ভাষান্তরঃ ইসমাঈল হোসাইন সোহেল)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *