ইফতার লগ্নে ব্রিটেনে যখন ঝলমল করে জ্বলে ওঠে হ্যাপি রামাদ্বান তখন বাংলাদেশ চলছে উল্টো গতিতে

ধর্ম ও দর্শন বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

আজ একজন রোগীকে সহায়তার জন্য লন্ডন কুইন্স হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ঢোকার সময় বিশাল আকারে রামাদ্বান করীম (Ramadan Kareem) লেখা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। আমি যখন সেদিকে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকাচ্ছি, তখন পাশে থেকে একজন দ্রুত এসে সালাম দিলেন। হাল খবর জেনে নিয়ে নামাজের ঘরের দিকে আহবান করলেন।

তখন আসর নামাজের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ৪/৫ জন মুসল্লি ততক্ষণে প্রেয়াররুমে প্রবেশ করেছেন।

এরইমাঝে একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। চার দিন আগে ‘সময়’ অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত “ইফতার লগ্নে ঝলমল করে জ্বলে ওঠে হ্যাপি রামাদ্বান” শীরোনামে আমার একটি লেখার দারুণ প্রশংসা করলেন। তিনি ব্রিটেনের মতো দেশে রামাদ্বান উদযাপনে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সহায়তার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ আমাদের জন্মভূমিতে এসব কী হচ্ছে জানেত চাইলেন। সেই সাথে বাংলাদেশে ইফতার আয়োজনে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে একটা কিছু লেখার অনুরোধ জানালেন।

আমি তাকে কি বলবো? তিনি যেখানে কাজ করেন এ ‘কুইন্স’ হল লন্ডনের একটি বিখ্যাত হাসপাতাল। এনএইচএস (NHS) ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত বার্কিং, হ্যার্ভিং এবং রেডব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব দ্য ক্যারিবিয়ান; বার্টস এবং লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রি অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে রামাদ্বানকে নানাভাবে স্বাগত জানােনা হচ্ছে। ইফতারের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সিয়াম পালনের সুবিধার্থে স্টাফদের কাজের সময় ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার নিষেধ কিংবা গরুর গোস্ত রান্না যাবেনা, এমন ফরমান জারি হয় কিভাবে?

শুরুতে আমার যে লেখার কথা এসেছে সেখানে আমি উল্লেখ করেছি, দিনের আলো ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটি ফুটে ওঠে। গোধূলি বেলার স্নিগ্ধ হাওয়ায় ইফতার লগ্নে ঝলমল করে জ্বলে ওঠে ‘হ্যাপি রামাদ্বান’। যারা সিয়াম পালন করেছেন তারা হন মুগ্ধ, সেই সাথে আকৃষ্ট হন বহুজাতিক পর্যটক। মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের দৃশ্য এটি নয়। বহু জাতি-গোষ্ঠীর প্রাণকেন্দ্র যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের দৃশ্য। এমন মনোরম ভাবে রামাদ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।

মেয়র বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ ২০২৪) ওয়েস্ট এন্ড লাইটের অফিসিয়াল সুইচ অন করেছেন সদলবলে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষকে সাথে নিয়ে। আনন্দঘন পরিবেশে ঘোষনা দিয়েছেন হ্যাপি রামাদ্বান। সমস্বরে উপস্থিত সকলে বললেন হ্যাপি রামাদ্বান, রামাদ্বান করিম, রামাদ্বান মোবারক। পিকাডিলি সার্কাস থেকে লিসেস্টার স্কোয়ার, নগরজুড়ে ৩০ হাজারের বেশি আলো এখন রাতের আকাশকে আলোকিত করছে। ৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এটি চলবে।

প্রায় এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই নগরীতে এক চতুর্থাংশ মুসলিম বসবাস করেন। এদের সম্মানে এবং বহুজাতিক সমাজে আনন্দঘন পরিবেশে রামাদ্বান ও ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার জন্য এই আয়োজন। ২০২৩ সালে রামাদ্বান উপলক্ষে এই বিরল আলোকসজ্জার সূচনা হয়। ২য় বারের মতো এবছরও ধর্মীয় আবহে মায়াময় আলোয় বর্ণিল সাজে রামাদ্বানকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সর্বত্র যেন সাজ সাজ রব। জ্বলজ্বল করছে ইউরোপের আলোকিত রাজপথ।

প্রথমবার সেন্ট্রাল লন্ডনের আইকনিক স্থান ও প্রধান প্রধান সড়কে মাহে রামাদ্বানকে স্বাগত জানান মেয়র সাদিক খান। ‘রামাদান মোবারক’ এবং ‘হ্যাপি রামাদান’ লেখা সাইন ও রঙিন বাতিতে বিরল এক ঘটনার সাক্ষী হয় রাজধানী লন্ডন। অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদ, তারা এবং ঐতিহ্যবাহী লণ্ঠনের মতো শো-পিস দিয়ে সড়কগুলো সাজানো হয়। মুসলিম কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এই আলোকসজ্জার উদ্বোধন করেন লন্ডন মেয়র। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এটা ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছবি শেয়ার করেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

বিলেতে বাংলাদেশী সংগঠক ও স্কলারদের দ্বারা পরিচালিত লন্ডন মুসলিম সেন্টারে (এলএমসি) বহু জাতিগোষ্ঠির মানুষ অংশ নেন। মাহে রামাদ্বানে এখানে এক অনন্য রূপ লাভ করে। কয়েক হাজার মহিলা জুমা ও তারাবি জামাতে সমবেত হন। প্রতিদিন শত শত মানুষ মুসলিম সেন্টারের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ইফতার করে থাকেন। শেষ ১০ দিনে শতাধিক মানুষের জন্য থাকে ইতেকাফের সুব্যবস্থা। জুমাবারে ৮/১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

শুধু লন্ডনে নয়, গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে রামাদ্বান উপলক্ষে এখন নানা রকম আয়োজন চোখে পড়ার মত। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে খতমে তারাবিহ, ইসলামী শিক্ষার বিশেষ আয়োজন, ইফতার মাহফিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশনে সারা মাসব্যাপী চলবে সেবা সংস্থা সমূহের চ্যারিটি ফান্ড রাইজিং। যেখানে অকাতরে দান করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা।

বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে সার্চ করতে গিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি।

বিলেতে একজন সাহসী সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল হাই সঞ্জু এফবিতে তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, লন্ডনের আন্তঃনগর এবং আন্তর্জাতিক ট্রেন স্টেশন ‘কিংস ক্রস এন্ড সেইন্ট প্যানক্রাস’। এখান থেকে ব্রিটেনের বড় বড় নগরীতে ছেড়ে যায় ট্রেন; ফ্রান্সে যায় ইউরোস্টার ট্রেন। এসব ট্রেনে অনেক মুসলিম যাত্রী থাকেন। এই স্টেশনের বিশাল ডিসপ্লেতে দ্বিতীয় রোজার দিন শোভা পায় ফজর ও মাগরিবের সময়সূচী এবং একটি হাদিস।

ইংরেজি ভাষায় হাদিস প্রদর্শনের পাশাপাশি রোজাদারদের যে কোনো প্রয়োজনে স্টেশনের স্টাফদের সহযোগিতা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়। স্টেশনের বিশাল ডিসপ্লেতে হাদিস প্রদর্শনের কারণে জামাত-শিবির ট্যাগ দিয়ে কেউ স্টেশন কর্তৃপক্ষকে মারতে আসেনি। ব্রিটেনে মুসলিম জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম চর্চাকে একোমোডেট করা হচ্ছে ব্রিটিশ সমাজে।

তিনি আরো লিখেছেন, আমার বড় মেয়ে ইয়ার নাইনের শিক্ষার্থী। রোজার মাসে সকালে স্কুলে প্রবেশের সময় ৩০ মিনিট পিছিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় মেয়ে ইয়ার ফাইভের শিক্ষার্থী। ইয়ার ফাইভ এবং ইয়ার সিক্সের শিক্ষার্থীদের রোজা পালন করতে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। রোজার মাসের জন্য তাদের বিশেষ প্রস্তুতিও আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এফবিতে তার প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোজা বিষয়ক এক সমাবেশে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে কয়েকজন। সমাবেশের আয়োজনকারীরা নাকি ‘জামাত-শিবির’।

আজকে কি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত। তবে আবাসিক সংকটের কারণে এখানে অনেক শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকে। এদের একটা অংশ আইন বিভাগের শিক্ষার্থী‍। রোজার মাসে আজ তাদের কয়েকজনের উদ্যোগে ‘প্রোডাক্টিভ রমদান’ নামক ধর্মীয় সভা আয়োজনের কথা ছিল টাওয়ারটির মসজিদে। কিন্তু সেখানকার সমিতি এতে সম্মতি না দিলে তারা টাওয়ার থেকে বের হয়ে যায়। এসময় মোটরবাইকে করে আসা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের উপর নির্বিচার হামলা করে। এতে আইন বিভাগের ছাত্র রাসেল ও তূর্য সহ কয়েকজন আহত হয়, রাসেলের পুরো চেহারা ভয়াবহভাবে রক্তাক্ত হয়।

এই বর্বরোচিত হামলার কোন বিচার হবে বলে মনে হয়না। বরং এরমধ্যেই ছাত্রলীগের কেউ কেউ বলা শুরু করেছে যে ভিকটিমরা ‘শিবির’ করে। যতোদুর জেনেছি, এটি পুরোপুরি অসত্য বয়ান। তবে এই মিথ্যে ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনকে লঘু বা জায়েজ করার রাজনীতি এদেশে নতুন নয়। গত দশ-বারো বছরে এই রাজনীতির শিকার হয়েছে বিরোধী দলের অনেকেই।

যাই হোক, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, দেশের বিচার ব্যবস্থা- আপনাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। ১) আক্রান্তরা যদি সত্যি শিবির-এর সদস্যও হতো, তাদের কি ধর্মচর্চার সাংবিধানিক অধিকার নেই? ধর্মীয় মাহফিল করার কারণে তাদেরকে মার খেতে হবে- এটা কি দেশের সংবিধান বা কোন আইনে আছে? ২) কে শিবির করে, কি জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ঢালাওভাবে এই অভিযোগ করে মারধোর করার অধিকার কি ছাত্রলীগকে কেউ দিয়েছে? যদি দেয় তাহলে তা কি সম্পূর্ণ বেআইনী নয়? ৩) গত কয়েকবছরে ছাত্র অধিকার, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বাসদের অনেককেও পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। যাকে খুশী পেটানোর অধিকার দেশের পুলিশেরই নেই, ছাত্রলীগেরও থাকার সম্ভাবনা নেই। তাহলে একের পর এক এসব ফৌজদারী অপরাধের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাদের কোন বিচার করা হচ্ছে না কেন? আরেকটা প্রশ্ন সবার জন্য। আমাদের আইন বিভাগের ছেলেগুলোকে কি সত্যিই শিবির ভেবে মারা হয়েছে, নাকি ধর্মচর্চার কারণে? যদি তাই হয় তাহলে এটা কিসের রাজনীতি, এর আসল লক্ষ্য কি?

ভয়কে জয় করে হলেও রাসেলদের মারার প্রতিবাদ আইন বিভাগের সহপাঠীরা করছে। তবে আইন বিভাগ শুধু না, ঢাবির সব ছাত্রদের উচিত এসব হামলার উপযুক্ত প্রতিবাদ করা। সব শিক্ষকদেরও তো আরো বেশী উচিত। তারা কেউ যদি না করে, আমি করবো। আর কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ কোনদিন ভিক্টিম হলে তারও প্রতিবাদ করবো একইভাবে।

ড. আসিফ নজরুল যে প্রশ্ন উত্তাপন করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভাবার বিষয়। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন রামাদ্বানে ইফতার এবং মাস শেষে ঈদ। ঈদ-উল ফিতরে মুসলমানদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী প্রদান করেন ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান। ইফতার মাহিফলের পাশাপাশি উন্মুক্ত ময়দানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘ঈদ ইন দ্য পার্ক’ অনুষ্ঠান ইউরোপের সর্বত্র ব্যাপকতা লাভ করেছে। মুসলিম সংস্কৃতির বিশ্বায়নে এটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। আর বাংলাদেশ চলছে উল্টো গতিতে। আশা করি সরকার বিষয়টি বিবেক দিয়ে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত ধর্ম বিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধ করবে।

লন্ডন ওয়েস্টমিনস্টারের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদুল ফিতরের উৎসব ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এবং লন্ডনের মেয়র কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০০৬ সালে ২৫ সহস্রাধিক মানুষ অংশ গ্রহন করেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভেন্টের অফিসিয়াল মিডিয়া পার্টনার ছিল জিটিভি। উৎসবের অংশীদারদের মধ্যে ছিল মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন, ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন, মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, ইসলাম চ্যানেল এবং ইউনিসন। অনুষ্ঠানে তৎকালীন মেয়র কেন লিভিংস্টোন বলেন, ঈদ-উল-ফিতর মুসলিম ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে শুভ দিন। এটি একটি মহান আনন্দের দিন এবং সকল ধর্মের লোকদের জন্য শান্তির অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। এটি সহানুভূতি, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের পরিচায়ক।

২০০৭ সালে কেন লিভিংস্টন জোর দিয়ে বলেছিলেন, ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উদযাপন মুসলিম এবং অমুসলিমদের একত্রিত হওয়ার এবং ইসলামের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ প্রদান করে। মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী ঈদ উৎসবে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, লন্ডনের সাফল্যের গল্পে মুসলিম লন্ডনবাসীরা যথার্থই গর্বিত এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হোক।

২০১৩ সালে লন্ডনের তৎকালীন মেয়র বরিস জনসন বলেছিলেন, আমি আশা করি লন্ডনবাসী সমস্ত সম্প্রদায় থেকে ট্রাফালগার স্কোয়ারে আমাদের উৎসবে যোগদানের সুযোগ নেবে। ২০১৪ সালে বরিস জনসন ইভেন্টটিকে রাজধানীর বৈশ্বিক বৈচিত্র্যে একসাথে যোগদান এবং আনন্দ করার একটি সুযোগ হিসাবে বর্ণনা করেন। জি নেটওয়ার্ক ইউরোপের সিইও নীরজ ধিংরা বলেছিলেন, বহু সংস্কৃতির লন্ডন জি নেটওয়ার্ক চ্যানেল জুড়ে আমাদের সমস্ত বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে। লেবারা মোবাইলের ইউকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন ককেরিল বলেছেন, আমরা লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উৎসবের সাথে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত।

অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কোরান তেলাওয়াত, নামাযের জন্য আযান, কবিতা ও সঙ্গীত পরিবেশনা, ঈদ বাজার, এবং সেলিব্রিটি অতিথির উপস্থিতি। প্রধান মঞ্চে ছিল লাইভ সংগীত, নাশিদ, শিশুদের গান ও নাট্য পরিবেশনা, বক্তৃতা, ইন্টারেক্টিভ কর্মশালা এবং ভিডিও শো। ঈদ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনী এলাকায় ছিল লাইভ বিনোদন, ঈদ প্রদর্শনী, ক্যালিগ্রাফি, মসজিদের স্থাপত্য, ইসলামিক শিল্প এবং খাবারের স্টল। শিল্প ও সংস্কৃতির প্রদর্শনীতে ছিল চারু ও কারুশিল্প প্রদর্শনী এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রদর্শনী, মেহেদি ব্যবহার, ফেস পেইন্টিং, স্যুভেনির বিক্রির স্টল। এছাড়াও একটি গ্লোবাল ফুড ফেস্টিভ্যাল আউটলেট সহ সমগ্র ইসলামী বিশ্বের খাবার পরিবেশন। তুর্কি, মিশরীয়, ইন্দোনেশিয়ান, লেবানিজ, মরক্কো, মালয়েশিয়ান, দক্ষিণ এশিয়ান, আরবি এবং আরও অনেক দেশীয় মজাদার খাবার। সামগ্রীক অনুষ্ঠানে আরবি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, বাংলা, স্প্যানিশ সহ বিভিন্ন ভাষায় পারফরমেন্স বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে মুগ্ধ করেছে।

ট্রাফালগার স্কোয়ারে ঈদ উৎসবে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় পার্কে ঈদের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর এসব অনুষ্ঠানে মানুষের অংশ গ্রহন বাড়ছে। ঈদ ইন দ্য পার্ক উৎসব মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ নিয়মক হিসেবে কাজ করছে। গত বছর ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহায় পার্ক সমূহে মানুষেল ঢল নেমে ছিল।

এভাবে মাহে রামাদ্বানে মুসলিম সংস্কৃতির বিশ্বায়ন ঘটছে। ধর্মের শাশ্বত বাণীতে আকৃষ্ট হচ্ছেন ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশ সমূহের বহু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামের জ্যোতি। মুক্তিকামী মানুষ উপলব্ধি করছেন, মানবতা ও সভ্যতার পরিপূর্ণ বিকাশ ইসলামী জ্ঞানের আলো ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *