হাওর পাড়ে কৃষকের কান্না

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ থেকে হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী ও মো. বুরহান উদ্দিন : ছায়ার হাওর পাড়ের কিষাণী আভা রানী দাসের চোখের জল আর হাওরের পানি যেন একাকার। শুধু আভা রানীই নয়-এই অবস্থা হাজারো কৃষকের। ফসলহারা কৃষকদের হাহাকারে হাওরের বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে।

বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, মদন, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন উপজেলার ফসল ডুবে গেছে। তাতে কৃষকদের কপাল পুড়েছে। হাওরপাড়ের মানুষ সারা বছরের খোরাকি হারিয়ে এখন হাহাকার করছেন। ছায়ার হাওরে ৪ হাজার ৬০০ হেক্টরে জমিতে এবার বোরো চাষ হয়েছিল। নিরুপায় হয়ে কৃষকেরা এখন পানিতে ডুবা ধান কেটে আনছেন। প্রশাসন বলেছে- বর্তমানে ২০০ হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি আছে।

ছায়ার হাওর পাড়ের কিষাণী আভা রানী দাস বলেন, ‘২৫ কেদার ধান চাষ করছিলাম। ৫ কেদার কাটছিলাম। কিন্তু এই কাটা ধানও ঘরে নিতে পারছি না, ডুবি যাইতেছে। এখন সারা বছর কিতা খাইমু।’শুধু আভা রানী দাস নয়-এই অবস্থা হাজারো কৃষকের। দুদিন আগেও ছায়ার হাওরটি ছিল ফসলে ভরা। এখন সেখানে বিষাদের সুর। কৃষকদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে হাওর এলাকা।

জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে- হাওরের ধান কাটা ৯০ ভাগ শেষ। কিন্তু কৃষকেরা বলেছেন, ধান কাটা ৫০-৬০ ভাগ শেষ হয়েছে।

কৃষক সালাম মিয়া বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজে গাফলাতি করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুণ কান্তি দাস বলেন, তদারকির অভাবে বাঁধ ভেঙেছে। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, কেউ বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এবার এপ্রিলের প্রথম থেকেই মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জির ঢল ভাটির জনপদের মানুষকে নাস্তা-নাবুদ করে তুলেছে। এপ্রিলের শুরুতেই তাহিরপুরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরের একাংশ, গুমরার হাওর, দিরাইয়ের চাতল, জগন্নাথপুরে নলুয়ার হাওরসহ জেলার ছোট-বড় ১৯টি হাওর, বাওর ও ফসলি বিল তলিয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে, ৫ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমির বোরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলেছেন ১০ হাজার হেক্টরেও বেশি জমির ফসল তলিয়েছে।

বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে।

এদিকে রবিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে সেটি এখন মেরামত করার চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘চেষ্টা করছি ভাঙন স্থানে আবার বাঁধ দিয়ে ভরাট করে দিতে। এতে অবশিষ্ট ধান হাওর থেকে তুলে আনা যাবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, সুরমার পানি দ্রুত নামছে। কিন্তু অন্যান্য নদীর পানি খুব ধীরে নামছে। এখনো কোনো কোনো জায়গায় বাঁধে চিপেজ হচ্ছে। দিরাইয়ের বরাম হাওরের কাদির খালে সোমবার সকালে চিপেজ শুরু হলে সেখানে বাঁশ পাইলিং করে বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *