স্বদেশের নান্দীপাঠ ।। আল মুজাহিদী

ছড়া-কবিতা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রিয় মৃত্তিকা আমার, মহান স্বদেশ
তোমার দেহের মণিমুক্তো জ্বলজ্বল করে একটি আকাশে
শ্যামল ছায়াসঙ্গিনী, আমি ভালোবাসি
আমি ভালোবাসি ধুসরাভ তোমার হৃদয়
আমার মৃত্তিকা, কী আশ্চর্য অর্ঘ্য অর্পণ করেছো তুমি
একখণ্ড সচ্ছল পৃথিবী শাশ্বত পৃথিবী
আমি তোমার স্তবগাথার নান্দীকার
আমার মৃত্তিকা, আমি তোমারই ভাষায় অনর্গল আবৃত্তি করি তোমার সৌন্দর্য
আমার স্বদেশ, তোমার প্রতিটি ধুলোকণা, ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করি
আমার এ পঙক্তিমালা।

প্রিয় মৃত্তিকা আমার, মহান স্বদেশ
তোমার সূর্যের তীর্যক উত্তাপে এ মানব দেহ গড়ে ওঠে
তোমার চন্দ্রিমা, কদলি পাতার ফাঁক দিয়ে গলে পড়া নিখাঁদ জ্যোৎস্না
তোমার দখিনা পলল বাতাস সিরসির করে বয়ে যায় আমার ওপর দিয়ে
এই বৃক্ষছায়া, লতাগুল্মময় ঋতুর বৈচিত্র্যে।

আমি বেড়ে উঠি। আমার উত্থান ক্রমাগত পৃথিবীর দিকে।

আমার দু’চোখের পাতাচেরা কুঁড়িগুলো মেলে দিচ্ছে দল দিগন্ত রেখায়,
আমার ঐশ্বর্য, কি মহান আমার মৃত্তিকা— এই সূর্যোদয়ে।

তোমার সমস্ত দেহবর্ণে-বিপুল বর্ণাঢ্য রেখা
মেখে, বজ্রে বৃষ্টির ধারায়, প্রবল প্লাবনে, কাল বৈশাখীর ধ্বংসনৃত্যে
আমি পেশিবন্ত হাতে মুখোমুখি হই সময়ের;
আমার মৃত্তিকা, তুমি আমার পাখসাটে ভাঙো
কালের সীমানা। দেখো, আমি বিদ্যুৎ প্রবাহে
ভাঙি অসংখ্য আকাশ, অন্তহীন দিগন্তের খেয়াপার মৃত্তিকা আমার
তুমি প্রতিটি পর্ণকুটিরে নক্ষত্রের হৃৎপিণ্ড জীবন্ত, উচ্ছল।

তুমি কেন তৈরি করেছিরে পৃথিবীতে ঈভের উদ্যান?
আমিতো আমার জন্মলগ্নের প্রথম প্রহর থেকেই আত্মমগ্ন হয়েছিলাম
ডুমুর পাতার আবরণে—
আমার পবিত্র, ‘ক্লেদজ-কুসুম’ ফোটে আমার রক্তের বৃন্তে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে
আমার পিঙ্গল পাহাড়ের চূড়োয় চূড়োয় সোনালি আগুন জ্বেলে দিই,
পাহাড়পুরে বৌদ্ধ মন্দিরগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো
ইতিহাসের চাকার নিচে
আমি আজ শাস্ত্রের সংস্কার ভেঙে প্রাত্নিক ঐশ্বর্য সংগ্রহ করি
তোমারই গহ্বর থেকে। গৌড়ীয় মন্দির যেন লোকায়ত জাদুঘর
হযরত শাহ জালালের পবিত্র দস্তানা ছুঁয়ে আবার আবাদ করি এই মাটি
আমাদের সংস্কৃতির দরোজা জানালা সব খোলা
ইতিহাসের সব পাত্রপাত্রী সচকিত।

আমার মৃত্তিকা, তুমি আমার জন্মমুহূর্তে বাঙ্ময় করো। তোমার বুকের
লতানো পত্রবল্লরীতে আমার উন্মেষ; দিগন্তের খণ্ডখণ্ড মেঘ ঝরে পড়ে
জোয়ান কৃষক বুকের জমিতে ফলায় শস্যকণা;
তুমি প্রাচীরের রাত শেষ করে নক্ষত্রের দীপমালা জ্বেলে দাও;
আর আমি চিত্রল মৃগকণ্যার বন্ধন উন্মোচন করি, অরণ্যে অরণ্যে
আমি জন্ম, মৃত্যু, সব বিবর্তনে
একখণ্ড মাটি চাই—
আমি স্বপ্নে, জাগরণে একখণ্ড মাটি চাই—
তুমি সেই মহান মৃত্তিকা, আমার স্বদেশ
তোমার বিষুব চোখের কোটরে কম্পমান
আমার অস্তিত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *