স্ক্যামার বলে..গুলশান-২ থানা থেকে এস আই আবদুল মান্নান বলছি

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে সরাসরি কল আসে। কিন্তু মোবাইল সাইল্যান্ট থাকায় কলটি রিসিভ করতে পারি নাই। কারণ, রাত ৯টার পর সাধারণত খুব জরুরি না হলে কেউ কল দেয় না। তাই প্রশ্নবোধক চিহ্ণ দিয়ে জানতে চাই, তিনি কে? এর পরপরই আবার কল আসে। আমি কল রিসিভ করি।

-হ্যালো, আপনি সঙ্গীতশিল্পী ফাহিম ফয়সাল বলছেন?
-আমি: জ্বি।
-ভালো আছেন?
-আমি: জ্বি। কিন্তু আপনাকেতো আমি চিনতে পারি নাই।
-আমি গুলশান-২ থানা থেকে বলছি, এসআই মান্নান।
-আমি: জ্বি বলুন।
-আচ্ছা, আপনার সেট কি বাচ্চাদের হাতে থাকে?
-আমি: না, কিন্তু কেন? (আমার কোন প্রশ্নের জবাব সে দেয় না)।
-আচ্ছা, ছাত্রদের আন্দোলনের সময় আপনি কি ‘ভিপিএন’ ব্যবহার করেছেন?
-আমি: না তো। কিন্তু কেন এই কথা জিজ্ঞেস করছেন?
-স্ক্যামার: তাহলে পুলিশের সাথে আপনার এই নম্বর লিংক হলো কি করে? (এই পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি সে একজন স্ক্যামার) কিন্তু ঘটনা বুঝতে কথা চলিয়ে যাই।
-আমি: পুলিশের সাথে আমার নম্বর লিংক হতেই পারে। কারণ, নানা কাজে উনাদের সাথে আমি মোবাইলে কথা বলি।
-স্ক্যামার: কেন, কিসের কথা?
-আমি: সেটা আপনাকে বলতে হবে কেন?

ছবি: স্ক্যামার এর হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রীনশট

-স্ক্যামার: আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে আমাকে কো-অপারেট করছেন না।
-আমি: বলুন কি করতে হবে?
-স্ক্যামার: দেখুন আপনার নম্বরটি আমাদের ডিভাইস থেকে রিমুভ করতে হবে।
-আমি: ও আচ্ছা (সে কোন কথা না বলে তার নির্দেশনা অনুস্মরণ করতে বলে)।
-স্ক্যামার: দেখুন আপনার সেটে একটি লিংক ডিভাইস এর নোটিফকেশন গিয়েছে।
-আমি: জ্বি এসছে।
-স্ক্যামার: সেখানে ক্লিক করুন।
-আমি: কিন্তু আমার যতদূর ধারণা, পুলিশতো এভাবে কাজ করেনা। আপনি আসলে কোথা থেকে বলছেন?
-স্ক্যামার: আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে কেন এমন করছেন? লিংকে ক্লিক করুন। আমিতো আপনাকে কোন ‘ওটিপি’ বা ‘পাসওয়ার্ড’ দিতে বলছিনা।
-আমি: আচ্ছা, ঠিক আছে। আমাকে একটু সময় দিন।
-স্ক্যামার: দেখুন, নোটিফিকেশনটি আবারও গেছে। সেখানে ক্লিক করুন প্লিজ। আমাদের ডিভাইস থেকে আপনার নম্বরটি রিমুভ করতে হবে।
-আমি: আচ্ছা আমি একটু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলে চেক করে দেখি উনারা এমন কোন নির্দেশনা পুলিশকে দিয়েছে কিনা।

এই কথা বলে আমি লাইন কেটে দেই। এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গুলশান থানায় কল দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হই। উনারা আশ্বস্ত করে যে, এটি হচ্ছে একজন স্ক্যামারের ফাঁদ। সুতরাং, নম্বরটি চেক করা এবং জনস্বার্থে প্রচারের জন্য কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা নম্বরটি টুকে রাখেন।

আমি লক্ষ্য করেছি গত কয়েকদিন যাবত আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন আমার কাছে টাকা চেয়েছে। আমি খুব অবাক হই এই ভেবে, আমার মতো একজন সচেতন মানুষকে এই স্ক্যামাররা টার্গেট করলে অন্য মানুষরা কিভাবে এদরকে সামাল দেবে। তারাতো পুলিশের কথা শুনে ভয় পেয়ে যা বলবে তাই করতে থাকবে।

উল্লেখ্য, ‘গুলশান-২’ বলে কোন থানা নেই। তবে গুলশান থানাটি গুলশান-২ নং এ অবস্থিত।

পরামর্শ, পরিচিত বা অপরিচিত কেউ কল দিলে তাকে কোন পাসওয়ার্ড, ওটিপি, কোন ডিভাইসে লিংক করা বা তথ্য-প্রযুক্তিগত কোন তথ্য ভুলেও শেয়ার করবেন না। লক্ষ্য করবেন, এই অবস্থায় মানুষকে তারা সম্মোহিত করে তথ্য হাতিয়ে বিপদে ফেলে দেয়। এমনকি রাস্তাঘাটে চলাচলের সময়েও অপরিচিত কারো বিপদে এগিয়ে গিয়ে আপনার ফোনটি তাকে ব্যবহারের সুযোগ দেবেন না। এবং তার ফোনটিও আপনি ব্যবহার করবেন না। একটু অসচেতনতায় আপনি পড়তে পারেন মহা বিপদে। এমনকি আপনার জীবন নাশও হতে পারে। সুতরাং, মস্তিষ্ককে সবসময় ‘অটো রিমাইন্ডার’ দিয়ে রাখুন। যেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে অন্ততঃ নিজেকে সামাল দিতে পারেন।

জনস্বার্থে স্ক্রীনশটগুলো শেয়ার করা হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *