সাঈদ চৌধুরী
সিলেটি রন্ধনশৈলীতে নরম খিচুড়ি বেশ জনপ্রিয়। রমজানের ঐতিহ্যবাহী ইফতার হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত। শুধু কি সিলেট? লন্ডনেও এখন সিলেটি নরম খিচুড়ি পছন্দের শীর্ষ তালিকায়। কেউ কেউ এটাকেই বলে পাতলা খিচুড়ি। চিনিগুড়া চাল দিয়ে রান্না হয় সিলেটি খিচুড়ি। বাংলাদেশী চিনিগুড়া বেশ উপাদেয় চাল। এটি বাসমতির চেয়ে ছোট এবং জুঁই চালের মতো স্বাদযুক্ত। প্রকৃতিকভাবে এই চালে সুগন্ধি থাকে। ফলে কোন প্রকার কৃত্রিম ফ্লেভার ব্যবহার করা হয় না। মজাদার খিচুড়ি রান্না হলে ঘরের আশেপাশে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে।
উপকরণ: * চিনিগুড়া চাল ৪ কাপ * মসুর ডাল ২ কাপ * মুগ ডাল ২ কাপ * মটরশুঁটি ১ কাপ * তেল ২ টেবিল চামচ * ঘি ২ টেবিল চামচ * লবণ স্বাদমতো * আদা-রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ * কাঁচা মরিচ ৭-৮টি * গাজর ১ কাপ * সরিষার তেল ২/৪ কাপ * পেঁয়াজ কুচি ৩টি * শুকনো মরিচ ৪-৫টি * তেজপাতা ৩টি * এলাচ ৩-৪টি * দারুচিনি ২ টুকরা * গুঁড়া মশলা (১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১ চা চামচ জিরার গুঁড়া, ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়া, ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া)।
চাল ও ডাল ভালোভাবে ধুয়ে ঘন্টাখানেক পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর কড়াইতে তেল গরম করে জেতপাতা, গোটা ধনিয়া, শুকনা মরিচ ও আদা বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে সকল গুঁড়া মশলা মিশিয়ে দিতে হয়। কেউ কেউ টমেটো কুঁচিও ব্যবহার করেন। এই টমেটো সিদ্ধ করে মশলার সাথে মিশিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজলে ভাল। চাল-ডাল ভাজা হয়ে গেলে জ্বাল কমিয়ে দিয়ে ২০-২৫ মিনিট রাখতে হবে। নরম খিচুড়ির জন্য প্রয়োজন বুঝে আরও পানি দিতে হয়।
ইফতারে নরম খিচুড়ি শরীরকে সতেজ করে। মেঘলা দিনেও পাতলা খিচুড়ি বেশ মানায়। মনকে তাৎক্ষণিকভাবে চাঙ্গা করে তোলে। অভিজাত পরিবারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সন্ধ্যা বেলায় সকলে মিলে একধরনের নরম খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ আছে। গরম খিচুড়ির সাথে ঝাল আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি হলে বাড়তি আনন্দ মিলে।
এক সময় সিলেটি নরম খিচুড়ি মুঘলদের প্রিয় হয়ে ওঠেছিল। পরবর্তীতে মুঘল ঐতিহ্য হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে এই সুগন্ধি খাবার। চিনিগুড়া চাল দিয়ে খিচুড়ি ছাড়াও মান সম্পন্ন আখনি, বিরয়ানী, পোলাও, ফিরনী, পায়েশ ইত্যাদি রান্না করা হয়। এই চাল থেকে প্রস্তুতকৃত আটা বা গুড়া দিয়ে বেশ মজাদার পিঠা তৈরী হয়। চিনিগুড়া না থাকলে কালিজিরা চাল অথবা বাসমতি দিয়েও নরম খিচুড়ি হয়। তবে সুগন্ধ হয়না।
সিলেট নগরীর পাশাপাশি উপজেলা এমনকি গ্রামের বাজারেও ইফতারের জন্য নরম খিচুড়ি রান্না হয়। সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলা তথা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকাও এর প্রচলন বিপুল, ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত। বাসাবাড়ির পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁ সমূহে নরম খিচুড়ির চাহিদা প্রচুর। ফুটপাতের দোকনেও ইফতারির পসরা সাজাতে নরম খিচুড়ি আবশ্যক হয়।