ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর তীরে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাতক সিমেন্ট কারখানা। বর্তমানে এটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) একটি প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর আগে ‘ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মোট ব্যয় হয় ৮৩১ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রধান কাঁচামাল গ্যাস ও চুনাপাথর সংগ্রহে ভারতের অসহযোগিতায় কারণে চালু করা যাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কারখানাটি। এছাড়া যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং বিগত সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
ভারত সরকারের সাথে সাবেক হাসিনা সরকারের দহরম-মহরমের কথা বলা হলেও বাংলাদেশের স্বার্থের ক্ষেত্রে তারা বরাবর নানা অজুহাতে অসহযোগিতা করে আসছে। ভারত থেকে চুনাপাথর আনার জন্য দুই দেশে রোপওয়ে তথা খুঁটি পুঁতে তারের মাধ্যমে পথ তৈরি করে চুনাপাথর আনার পদ্ধতি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। সুত্র মতে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত কোমোরাহ লাইমস্টোন মাইনিং কোম্পানি (কেএলএমসি) থেকে রোপওয়ের মাধ্যমে চুনাপাথর আমদানি করত ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি। এই রোপওয়ের ১১ কিলোমিটার অংশ পড়েছে বাংলাদেশে। ভারতে পড়েছে পাঁচ কিলোমিটারের একটু বেশি। ছাতক সিমেন্টের নতুন কারখানার জন্য যে পরিমাণ চুনাপাথর প্রয়োজন হবে, তা আগের রোপওয়ে দিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার বাংলাদেশ অংশের রোপওয়ে এরই মধ্যে ভেঙে বিক্রিও করে দেওয়া হয়। নতুন করে রোপওয়ে নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে থাকলেও ভারতের অনুমতি না পাওয়ায় সেটির কাজও এখনো শুরু হয়নি।
এমনকি সিলেট থেকে কারখানা পর্যন্ত গ্যাস নেওয়ার জন্য নতুন সঞ্চালন লাইনও স্থাপন করা হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে জং ধরছে হাজার কোটি টাকার ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। যদিও জং ধরা থেকে কারখানাকে রক্ষা করতে নিয়মিত ‘ট্রায়াল রান’ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
মুজিব শতবর্ষ প্রকল্প সমূহের মধ্যে এটিও অন্তর্ভুক্ত। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের পরিকল্পনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়। সেখানে ৪৩ কিলোমিটার নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। নতুন পাইপলাইন নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এত দিন ছাতক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের মূল লাইন থেকে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করত। কিন্তু নতুন কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগবে, তা এ লাইন থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কারখানাটি চালু করতে গ্যাস সরবরাহের জন্য আলাদা সংযোগ লাইন লাগবে। কিন্তু কারখানাটি স্থাপনে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তাতে গ্যাসলাইন স্থাপনের বিষয়টি ছিল না।
সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেখানে ৪৩ কিলোমিটার নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। বিসিআইসি জানায়, প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন দেড় হাজার মেট্রিক টন, যা আগের উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বেশী। নতুন পাইপলাইন স্থাপন, বর্তমান পাইপলাইন অপসারণ (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) এবং গ্যাস সংযোগ প্রদানের কাজটি জেজিটিডিএসএলের তত্ত্বাবধানে এবং তাদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পাইপলাইন স্থাপনের কাজটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জেজিটিডিএসএলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৭ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পেট্রোবাংলায় চিঠি দেওয়া হয়। পেট্রোবাংলার অনুমোদন পেলে জেজিটিডিএসএল দ্রুত নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।