সাঈদ চৌধুরী
ব্রিটেনের সমাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই)’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বিসিএ সভাপতি এম এ মুনিম। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৯৬তম জন্মদিন এবং সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ২ জুন ২০২২ তারিখে এই সম্মাননা ঘোষনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) ইউকের প্রেসিডেন্ট, নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ও সমাজসেবক এম এ মুনিম সহ আরো যারা মনোনীত হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
এম এ মুনিম একজন প্রতিশ্রুতিশীল বিসিএ নেতা। গোটা ইউকে জুড়ে সংগঠনের ব্যাপ্তি ঘটানোর জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছেন। কঠিন করুণাকালেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছার জন্য তার নেতৃত্বে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলেছে বিসিএ’র বিভিন্ন রিজিওনে।
কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সহায়তায় এনএইচএস ফ্রন্ট লাইন কর্মি যারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে বিসিএ’র পক্ষ থেকে প্রায় ১ মিলিয়ন মিল ফ্রি খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এটা মানবিক সহায়তার পাশাপাশি জাতীয় ভাবে কারি ইন্ডাস্ট্রির সুনাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া দেশের দুর্যোগকালীন সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের অনুরোধে বিসিএ’র পক্ষ থেকে মেয়র ফান্ডের ফুড ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
একান্ত আলাপচারিতায় বিসিএ প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম বললেন, বৃটেনের বাণিজ্যিক খাতে কারি ইন্ড্রাষ্টির অবস্থান ষষ্ঠ। জাতীয় অর্থনীতিতে রাজস্ব খাতে কারি শিল্প বাৎসরিক প্রায় ৪.২ বিলিয়নের বেশি অবদান রাখছে। করোনা পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ রেষ্টুরেন্ট খোলা সম্ভব ছিল না। ফলে রেষ্টুরেন্ট মালিক ও স্টাফ সহ এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা মারাত্নক অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জড়িত হন। ইন্ডাস্ট্রির সাথে লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত। এদের জীবিকা বন্ধ হলে লক্ষাধিক পরিবারের কয়েক লাখ মানুষ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে, এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তারা ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন।
আপদকালীন সময়ে ইমার্জেন্সি সাপোর্ট সহ সরকারি অনুদান প্রাপ্তির সুবিধা ও সংযোগ স্থাপনে সহায়তা প্রদান এবং আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সহ ব্যবসা সংক্রান্ত পরিবর্তিত বিধিমালা সকল সদস্য তথা কারি শিল্পে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদানের জন্য এম এ মুনিম সার্বক্ষনিক ভাবে তা তদারকি করেছেন।
সেই করুণ পরিস্থিতিতে বিসিএ’র পক্ষ থেকে বৃটেনে কারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মূল্য সংযোজন কর (VALUE ADDED TAX – VAT) ২০% এর স্থলে ৫% করার দাবি জানানো হয়। চ্যান্সেলর রিশি সোনাক এমপিকে (CHANCELLOR OF THE EXCHEQUER The Rt Hon Rishi Sunak MP) কারি ইন্ডাস্ট্রির অস্থিত্ব সংকটের কথা তুলে ধরে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা। লিখিত আবেদনে সরকারের জরুরি ব্যবস্থাপনার বিশেষ প্যাকেজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন বিসিএ নেতৃবৃন্দ।
প্রদত্ব স্বারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়, করোনা মহামারি সময়ে সার্বিক বিবেচেনায় জার্মানী তাদের কারি ইন্ডাস্ট্রির কর ১৯% থেকে কমিয়ে ৭% করেছে। বিসিএ মনে করে বৃটেনের ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেষ্টুরেন্ট খাত। এই সংকট সময়ে কারি শিল্পের মূল্য সংযোজন কর ২০% এর স্থলে ৫% করলে কারি ইন্ড্রাষ্টি মন্দা কাটিয়ে উঠা সহজ হবে। পাশাপাশি মহামারি সময়ে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা চালু রাখতে সংশ্লিষ্টরা অনুপ্রাণিত হবেন। যা সার্বিক ভাবে বৃটেনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতেও সহায়তা করবে বলে বিসিএ মনে করে।
মূল্য সংযোজন কর কমানোর জন্য বিসিএ নেতৃবৃন্দ বহুমুখি প্রয়াস চালিয়েছেন উল্লেখ করে সংগঠনের সভাপতি এম এ মুনিম বলেন, মিনিস্টার পল স্কলি এমপি (MINISTER OF STATE- LONDON Paul Scully MP, Parliamentary Under-Secretary- Department for Business, Energy and Industrial Strategy) সহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা লবিং করেছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও সে প্রচেষ্টা ছিল। ফলে সরকার মূল্য সংযোজন কর কমাতে বাধ্য হয়।
নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েও দমে যাননি এম এ মুনিম। সামান্য সুস্থ হয়েই আবার বিসিএ’র কাজে সক্রিয় হয়েছেন। গত ২২ মে রবিবার লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্ট সংলগ্ন অভিজাত শেরাটন স্কাই লাইন হোটেলে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে মিনিস্টার পল স্কলি এমপি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী অতিথি ছিলেন। সেখানে কারি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজন, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক ফ্রেন্ডস অফ কারি লাভার্স উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম বৃটেনের অর্থনীতিতে এই ইন্ডাস্ট্রির অবদান তুলে ধরেন। তিনি করোনা কাটিয়ে উঠা ব্রিটেনে কারি শিল্পের সংকট নিরসনে সরকারের কাছে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ দাবী উপস্থাপন করেন। হসপিটালিটি খাতে কমপক্ষে ১০% ভিএটি হ্রাস করা, বিজনেস রেইট ফ্রিজ করা, ভাউন্স ব্যাক লোন, রেন্ট প্রটেকশন ও ক্যাটারিং শিল্পের জন্য গ্রান্ট প্রদানে তিনি মন্ত্রীর সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানের অতিথি মিনিস্টার পল স্কলি এমপি কারি শিল্পের সমস্যা নিরসনে বিসিএ’র দাবী সমূহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে গুরুত্ব সহকারে অবগত করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে যে কোন সংকট মোকাবেলা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। করোনা পেনডামিক সময়ে বাংলাদেশী কারি ইন্ডাস্ট্রি ঐক্যবদ্ধভাবে কমিউনিটির পাশে থেকে অনুকরণীয় উদাহরণ দেখিয়েছে বলে বৃটিশ মন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেন। পল স্কলি বলেন, করোনা পরবর্তি সময়ে এধরণের অনুষ্ঠান কারি শিল্পের মন্দা মোকাবেলায় ব্যবসায়িদের অনুপ্রাণীত করবে।
বিসিএ‘র সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরীর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিসিএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বজলুর রশীদ এমবিই, পাশা খন্দকার এমবিই ও কামাল ইয়াকুব, বিসিএ এওয়ার্ড ও ডিনার কমিটির কনভেনার জামাল উদ্দিন মকদ্দস, স্বনামধন্য রেস্টুরেন্ট মাদুস এর এমডি সানজয় আনান্দ, সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান, বাংলাদেশ হাই কমিশনের কমার্শিয়াল কনস্যুলার এস এম জাকারিয়া হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বৃটেনে বাংলাদেশি কারি শিল্পের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের ধারাবাহিক কার্যক্রমের প্রসংশা করে বলেন, মেধা ও একাগ্রতার সাথে দায়িত্বের প্রতি সম্মান রেখে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করলে সাফল্য অনিবার্য, বিসিএ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বিসিএ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বৃটেনে কারি শিল্পের মাধ্যমে বাঙালি কমিউনিটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতিতে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে। কারি শিল্পের বর্তমান স্টাফ সংকট সহ নানা সমস্যায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লবিং করে সংকট উত্তোরণে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে।
প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের নেতৃত্বে বিসিএ নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি কনফেডারেশন অফ ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি (সিবিআই) এর প্রেসিডেন্ট লর্ড করণ বিলিমোরিয়া সিবিই, ডিএল, এফসিএ এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের ৫দফা দাবী বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছেন। সিবিআই প্রেসিডেন্ট লর্ড করণ বিলিমোরিয়া সরকারের উর্ধতন মহলে বিষয়টি তুলে ধরে ব্যবস্থা গ্রহনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
কারি ইন্ডাস্ট্রির বহুবিধ সমস্যা তুলে ধরে বিসিএ প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম আরো বলেন, বাংলাদেশি শেফদের বৃটেনে আনার সুযোগ আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে। কারি শিল্পের স্টাফ সংকট নিরসনে নতুন ভিসা চালুর ঘোষনা দিয়েছেন বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি প্রীতি প্যাটেল (HOME SECRETARY Priti Patel MP)। প্রস্তাবিত পয়েন্ট বেইজ সিস্টেমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে বর্তমানে চালু থাকা বহু শর্ত সহজ ও শিথিলের প্রস্তাব এনেছে বৃটিশ সরকার। এতে আরো কিছু শিথিলতার দাবি করেছে বিসিএ।
২০২১ সালের ২৪ মার্চ বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি প্রীতি প্যাটেলকে আন-ডকুমেন্টেড অভিবাসিদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে বৈধভাবে বসবাসের স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিসিএ নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, এই সকল অসহায় মানুষ বৈধ ভাবে কাজ করার সুযোগ পেলে কারি ইন্ডাস্ট্রি উপকৃত হবে। একই সাথে সরকার বিপুল পরিমান অয়কর আদায়েও সক্ষম হবে।
লন্ডনে কনজেশন চার্জে পরিবর্তন সম্পর্কেও বিশেষ বিবেচনার প্রস্তাব করেছে বিসিএ। লণ্ডন মেয়রের কাছে প্রেরিত পত্রে বলা হয়, সেন্ট্রাল লন্ডন হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা রয়েছে। এদের বাঁচাতে হলে সপ্তাহান্তে (শনি-রবি) সারাদিন এবং সপ্তাহ-দিনে সন্ধ্যা ৬টার পর কনজেশন চার্জ বৃদ্ধি সমীচিন হবেনা।
এম এ মুনিম বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা লন্ডনের অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। লকডাউন চলাকালীন সময়ে এমনিতেই বিশাল বাণিজ্য হ্রাস হয়েছে। এই ব্যবসা সমূহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন কনজেশন চার্জের বুঝা না বাড়িয়ে পর্যটক সহ সাধারণ মানুষকে নগরে আসার বহুমুখি সুযোগ করে দিতে হবে।
বিসিএ নেতা মরহুম এম এ রহিম থেকে শুরু করে সকল সভাপতি ও তাদের টিমের অবদান তুলে ধরে এম এ মুনিম বলেন, অতীতের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে আগামী দিনের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল ট্রাফালগার স্কোয়ারে বিশাল গণসমাবেশের উদাহরণ তুলে ধরে বিসিএ নেতা বলেন, তখন আমি সংগঠনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ছিলাম। তখনকার সভাপতি বজলুর রশিদ ও সেক্রেটারি পাশা খন্দকার সহ আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহে কারি শিল্পের স্টাফ সংকট নিরসনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লবিং করেছি। কারি ইন্ডাস্ট্রির বিবদমান সমস্যা কাটিয়ে উঠা ও বৃটেনের ‘কারি লাভারস‘দের কাছে এর স্বাদ পৌছে দেয়া ছিল আমাদের কাজ। আমাদের একটাই বক্তব্য ছিল, আমরা কারি ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও জোরালো অবদান রাখতে চাই।
সেদিন ট্রাফালগার স্কোয়ারে বহু জাতির হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহন করেছেন। বৃটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার ও পলিটিকেল লিডার সহ অসংখ্য রেস্তোরা শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। বাংলাদেশি ছাড়াও ছিলেন ভারতীয়, পাকিস্তানি, চীনা, তুর্কি ও থাই ক্যাটারিং ব্যবসার মালিক-শ্রমিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বিসিএ’র ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে আলোচিত গণসমাবেশ।
ট্রাফালগার স্কোয়ারে এথনিক ক্যাটারিং অ্যালায়েন্স এসোসিয়েশন (Ethnic Catering Alliance Association) নামে যেসব সংগঠন সমবেত হয়েছিল, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) তার অন্যতম। বৃটেনে এশিয়ান ১৮ হাজার রেষ্টুরেন্টের মধ্যে সাড়ে নয় হাজার বাংলাদেশী। অবশ্য অনেকে অনুমান নির্ভর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলেন।
আমার (সাঈদ চৌধুরী) সম্পাদনায় সংবাদ সংস্থা মিডিয়া মহল থেকে প্রকাশিত ২০০৭ সালে ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরিতে সকলের নাম-ঠিকানা প্রকাশিত হয়েছে। প্রমানিত হয়েছে ভারতীয়,পাকিস্তানি, চীনা, তুর্কি ও থাই মিলেও আমাদের চেয়ে কম রেষ্টুরেন্ট। ফলে ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের মানুষ বেশী এবং ট্রাফালগার স্কোয়ারেও বাংলাদেশী মানুষের উপসস্থিতি ও নেতৃত্বের অবস্থান শক্তিশালী ছিল।
এম এ মুনিম বিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল থাকাবস্থায় মাত্র কটি রিজিওন থেকে একে একে ১৫টি নতুন রিজিওন করা হয় এবং তিনি প্রত্যেকটি অঞ্চল সফর করেন। সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটে বৃটেনের সকল প্রান্তে। তখনকার নির্বাচনের সময় বিসিএ’র নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সংগঠনের ইতিহাসে এটা ছিল বিরল ঘটনা।
এম এ মুনিম বলেন, ২০১২ সালে বিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হবার পর অনেক কাজ করেছি। অবৈধ শ্রমিক সন্ধানের নামে রেস্তোরা গুলিতে বর্ডার এন্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সির পুলিশী অভিযান এক ভয়ংকর সমস্যায় রূপ নিয়েছিল। বিশেষ করে শুক্র ও শনি বার দিন। এটা ব্যবসাকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। আমরা কেন্দ্র থেকে এবং বিভিন্ন রিজিওনের মাধ্যমে তখন হোম অফিস ও বর্ডার এজেন্সির বিভিন্ন শাখায় পৃথক পৃথক সভা ও মতবিনিময় করেছি। ফলে এই বাড়াবাড়ি বন্ধ হয়েছে।
এম এ মুনিম প্রেসিডেন্ট হবার পর বিসিএ’র ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহন অনুষ্ঠানই ছিল ইউকে জুড়ে সংগঠনের ব্যাপ্তি ঘটানোর সাড়া জাগানো প্রয়াস। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ও বর্তমান বিসিএ সভাপতি এম এ মুনিম ১৯৫৮ সালে মৌলভী বাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কামার কান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মো: আবদুল বারী একজন প্রখ্যাত ঠিকাদার ও সফল ব্যবসায়ী। ৬ ভাইয়ের মধ্যে মো: আব্দুস শহীদ ব্যবসায়ী, মাওলানা মো: আব্দুল ওয়াহিদ প্রাক্তন শিক্ষক ও ব্যবসায়ী, মো: আব্দুল হক ঢাকায় ব্যবসায়ী, প্রিন্সিপাল মো: আব্দুর রউফ মরহুম ও হাফিজ মো: আব্দুল ওয়াদুদ বৃটেনে সিডকাপ মসজিদের ইমাম ও খতিব। কুলাউড়া বাজারে বারি প্লাজা নামে তাদের পারিবারিক মার্কেট রয়েছে।
শিক্ষা জীবনে এম এ মুনিম কুলাউড়া এনসি হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ৭৪ সালে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানেই উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে (অনার্স) অধ্যয়ন করেন।
এম এ মুনিম সিলেট সরকারি কলেজে (এমসি) দু’বার ছাত্রলীগের সভাপতি এবং দু’বার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রনেতা হিসেবে অবৈধ প্রতিপত্তির ছেয়ে সমতা ও মমতা দিয়ে তিনি ছাত্র জনতার মন জয় করেছিলেন। তিনি তখন শিক্ষা আন্দোলন বিশেষ করে সিলেটে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রচার কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। সিলেট বিভাগ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
এম এ মুনিম ১৯৮২ সালের শুরুর দিকে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে তার আরো দুই ভাইকে নিয়ে জেদ্দা ও মক্কায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বিলেত চলে আসেন। একই সালের ৬ আগষ্ট বৃটেনের ব্ল্যাকহিত নিবাসী সিলেটের বালাগঞ্জ গহরপুর কলুমা গ্রামের আলহাজ্জ মো: আব্দুল বারীর কন্যা মোসাম্মাৎ আনোয়ারা বেগম জেসি’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ১ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে সলিসিটর রাহাত মো: মুনিম ব্যবার্লি মরিস সলিসিটর ফার্মের পার্টনার, তাসনিম আক্তার অপটোমেট্রিস্ট, ফাবিহা আক্তার ইকোনমিক্স ও একাউন্টিংয়ে ফাস্ট ক্লাস ডিগ্রি নিয়ে এখন চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিমা) করছেন। সেই সাথে লন্ডনে একটি কোম্পানিতে কর্মরত। জান্নাহ আক্তার এলেভেল পরীক্ষার্থি।
বিলেতের কর্ম জীবনে এম এ মুনিম অল্পদিন কাজ করার পর নিজস্ব ব্যবসা চালু করেন। কয়েকজন বন্ধু মিলে ইস্ট লন্ডনের বৃকলেনে একটি রেষ্টুরেন্ট করে ছিলেন। কিন্তু রাজনীতি সংলিষ্ট ফ্রি পার্টির কবলে পড়ে ব্যবসাটি লাভজনক হয়নি। ১৯৯১ সালে সাউথ ইস্ট লন্ডনের গ্রোভ পার্কে সোনালী তন্দুরি নামে হালাল টেকওয়ে চালু করেন। এখনো পর্যন্ত এটি তার ব্যবসার চালিকা শক্তি। যদিও ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি প্রপার্টিতেও উল্লেথযোগ্য বিনিয়োগ করেছেন।
১৯৯৯ সালে এম এ মুনিম বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের সাউথ ইস্ট রিজিওনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিসিএ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অর্গানাইজিং সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এম এ মুনিম ২০১২ সালে বিসিএর সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নির্বাহী সদস্য এবং ২০১৯ থেকে সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
এম এ মুনিম কেন্টের ড্রাটফুটে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় কমিউনিটিতে অনেক সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। ক্রেফোর্ডে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে নর্থ ওয়েস্ট কেন্ট মুসলিম এসোসিয়েশনের (ক্রেফোর্ড মসজিদ) সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গ্রিনিচ বাংলা সাপ্লিমেন্টারি স্কুল ও গ্রিনিচ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত।
এম এ মুনিম ২০০০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত কনসোর্টিয়াম অব বেঙ্গলি এসোসিয়েশনের (সিবিএ) পরিচালক হিসেবে কমিউনিটির উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে সিএলএফ কর্তৃক কমিউনিটি লিডারশীপ এওয়ার্ড, ২০১৯ সালে হুজহু এওয়ার্ড সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
সেবাকর্মে সদা তৎপর এম এ মুনিম নিজ এলাকা কুলাউড়ায় ব্যাপক সহায়তা করেন। কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনি ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের একজন ট্রাস্ট্রি এবং তার ছোট ভাই এম এ রউফ আজীবন প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১৫ মার্চ তিনি ইন্তেকাল করেন।
এম এ মুনিম বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিম খানায় নিয়মিত দান করে থাকেন। তিনি প্রতি বছর গরিবদের জন্য ঘর তৈরী করে দেন। গরীব ও মেধাবী অনেক শিক্ষার্থির সম্পূর্ণ খরচ বহন করেন। অসহায় ভাল মানুষ যারা কারো কাছে চাইতে পারেনা তাদেরকে নিরবে সহায়তা করেন তিনি। বিশেষ করে উপজেলার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য তার নিরব অনুদান প্রশংসার দাবি রাখে।
আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার