অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. যেদিন আপনি সর্বশক্তিমানের সাথে দেখা করবেন সে দিনের জন্য প্রস্তুতি নিন। এটি করুন কারণ কেউ জানে না কে বিদায়ের পরবর্তী ব্যক্তি হবেন। এটা যে কোন সময় আসতে পারে। তাই প্রতিদিন এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, আপনার দিনটিকে নিখুঁত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন, যাতে সেই দিনটি যদি আপনার শেষ দিন হয় তবে আপনার ভয় পাওয়ার জন্য যেন কিছু না থাকে।
দুই. সর্বশক্তিমান। আমরা প্রার্থনা করি আপনি আমাদেরকে সরল পথে রাখুন। দুনিয়ার যাবতীয় মিথ্যা ও প্রতারণার দ্বারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমাদের সত্যকে সত্য হিসাবে দেখান এবং আমাদেরকে তা অনুসরণ করার সুযোগ দিন; আর আমাদের ভুলকে ভুল হিসাবে দেখান এবং আমাদের তা এড়াতে সহায়তা করুন। আমীন।
তিন. আপনি কি আধ্যাত্মিকভাবে দাম্ভিক? আপনি কি মনে করেন যে আপনার স্তরে যারা নেই তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে পৌঁছা ও তাদের সহায়তা করা মূল্যবাহী কিছু নয়! সবসময় মনে রাখবেন, আমরা সবাই কোন এক জায়গা থেকে শুরু করেছি। রাতারাতি কেউ পরহেজগার হয়ে উঠেনি! আপনার জ্ঞান আপনার হৃদয়কে শক্ত না করে যেন নরম রাখে!
চার. অন্ধভাবে অনুসরণ করবেন না। আমরা কেউ কেউ চাপে আছি কারণ আমরা এমন কাজ করছি যা অন্যদের আমরা করতে দেখি এবং আমরা সেই একই ফলাফল পাচ্ছি না। ছদ্মবেশি হবেন না। অন্য কারও জন্য যা কাজ করে তা আপনার পক্ষে কার্যকর নাও হতে পারে। সর্বশক্তিমান আপনার জন্য যা করতে চান তার দিকে মনোনিবেশ করুন। অন্যদের জন্য উদ্বিগ্ন হবেন না।
পূনশ্চঃ
এক. হাসির আড়ালে ব্যথা লুকানো সহজ নয়। এটা করা কঠিনতম এক জিনিস হতে পারে। আপনি এটি তখনই করেন যখন নিজের স্বার্থে আপনি অন্যের জন্য নিজের চেয়ে বেশি যত্নবান হন। তবে মনে রাখবেন, একটি হাসি অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে.. ভয়, ব্যথা, দুঃখ, কান্না। তবে এসব একটি প্রধান জিনিসকে প্রতিফলিত করে, শক্তি।
দুই. সর্বশক্তিমান যখন পথ দেখান, তখন কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। যে পরিবর্তনগুলি বাইরে থেকে চাপের কারণে না হয়ে ভেতর থেকে আসে কেবলমাত্র সেগুলোই টিকে থাকে। সঠিক সময় কোনটি সেটি আপনি জানতে পারবেন। এটা আপনার হৃদয় থেকে আসে। যখন আপনি যা কিছু করেন তার সবকিছুর মধ্যে সর্বশক্তিমানের সংকেত দেখতে পান। তিনিই যেন আমাদের পথ দেখান।
তিন. আপনি বিশ্বের জন্য সুখের অনুসন্ধান করতে পারেন তবে সর্বশক্তিমান যা আপনাকে দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া থেকে শুরু না করলে আপনি তা পাবেন না। মনে রাখবেন আপনার সম্পদ, পরিবার এবং নিজের সব কিছুই আপনার কাছে ঋণ দেয়া রয়েছে। এমন একদিন আসবে যেদিন এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি নিন। সবহারা হবেন না।
চার. যখন ঘটনা ঘটে তখন নিজেকে আঘাত করা বন্ধ করুন। ইতিবাচক দিকে আরও বেশি ফোকাস করুন। আপনার নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে। নিজের প্রতি সদয় হোন। আমরা সবাই ভুল করি। ভুলকে শেখার সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করুন। সর্বোপরি, আপনার নিজের বিষয়েও ধৈর্য ধরুন। এটি সর্বশক্তিমানের পছন্দের একটি গুণ!
পাঁচ. সর্বশক্তিমান যখন কোন কিছুর প্রতিশ্রুতি দেন, তখন তা হবেই। প্রক্রিয়ার প্রতি আপনার বিশ্বাস রাখুন। অধৈর্য হবেন না এবং সময় হবার আগেই শেষ করুন কারণ আপনি এখনও ফলাফল দেখছেন না। আপনার প্রার্থনায় সাড়া দেওয়া হবে যখন তাঁর হিসাবে সঠিক সময় আসবে, আপনার বিচারে নয়। তাঁর ঐশ্বরিক প্রজ্ঞায়।
ছয়. আপনার স্বাস্থ্যকে কখনই নিশ্চিত বিষয় মনে করবেন না। চোখের পলকে সব কিছু বদলে যেতে পারে। সর্বশক্তিমানের কাছে সব ধরনের ভোগান্তি ও অসুস্থতা থেকে নিরাময় চান। আর যখনই আপনি নিজের জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট হন তখন মনে রাখবেন যে অন্য অনেকে আপনার মতো জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখছে। তাই সর্বদা সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দিন। আর বিনীত থাকুন।
দ্রষ্টব্যঃ
কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’(সূরা লোকমান: ৩৪)
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থিগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা :২২২)
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, বনী আদম! তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে, আমার কাছে (ক্ষমার) আশা করতে থাকবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব; কোনো পরোয়া করব না। বনী আদম! তোমার পাপরাশি যদি মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দিব; কোনো পরোয়া করব না। বনী আদম! তুমি যদি পৃথিবী-ভর্তি পাপ নিয়ে আমার কাছে আস এবং শিরক থেকে মুক্ত হয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ কর আমি পৃথিবী-ভর্তি ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করব। (জামে তিরমিযী: ৩৫৪০)
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলেঃ আমি পাপকার্য করেছি। তারপর আমি তাওবা করেছি, পরে আবার পাপকার্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছি। আবার তাওবা করেছি, আবার পাপকার্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করতেই থাক, শেষ পর্যন্ত শয়তান পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআলা রহমত সৃষ্টির দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। নিরানব্বইটি তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমন্ত সৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। ঐ একভাগের কারণেই সৃষ্ট জগতে একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এ ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভ থেকে নিরাশ হবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে শাস্তি সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে বে-পরওয়া হবে না। (সহীহ বোখারী ৫৫৭৪/৬০২৫)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট