“বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে এইটুকু বলতে পারি ‘উই আর কমিটেড টু রিফর্ম’। অর্থাৎ সংস্কারের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপি দুই বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সেই সংস্কারগুলোর সঙ্গে আজকের যে সংস্কার প্রস্তাব উঠে আসছে, সেখানে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা তুলে দিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।”
রোববার (১৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত যৌথ ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা আজ বিচলিত হয়ে যাই। হত্যা, খুন, ধর্ষণ এমন একটি জায়গায় চলে যাচ্ছে যে জায়গাটা আমাদের পীড়িত করছে। অন্যদিকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আবার দেখছি, যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তারাও তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসছে। আমাদের সবারই এই ব্যাপারে ধৈর্য ধরার ব্যাপার আছে।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারকে পরাজিত করে একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন আমাদের প্রয়োজন নিজেদের ঐক্যকে আরো সুসংহত করা। হাসিনার সরকার রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে রেখে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই আর অক্ষত নেই। এই যে ধ্বংসের স্তুপ এখান থেকে দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়। আমি মনে করি, নতুন দেশ গড়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের একার নয়, সব রাজনৈতিক দল সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলতে হবে।”

দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এখন অন্তত আন্তরিকভাবে চাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাবেন। কারণ, আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে যেটা দেখছি, নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করার জন্য ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যারা উগ্র, জঙ্গি তারাও এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা তাই মনে করি, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে এসে একদিকে দেশ পরিচালনা করবে, অন্যদিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো আমরা সবাই এক সাথে করতে পারব।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার জন্য দাবি তুলেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা গণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সবাই একটি ক্ষেত্রে একমত যে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশের প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দলই একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিছু ছোট খাট বিষয়ে মতৈক্য থাকতেই পারে। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে সবাই একমত পোষণ করেছে। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে যারা দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে হত্যা করেছে, দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, দেশে বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিচার দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা করছি আমরা। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার কাজের অগ্রগতি দেখতে চাই আমরা। তা না হলে সেই ফ্যাসিস্টরা আবারো ফিরে আসতে পারে। আসুন আমরা হাতে হাতে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। ফ্যাসিস্টরা যাতে আবার ফিরতে না পারে সেই ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকি। সমাজ থেকে চাঁদাবাজি, দখল, নৈরাজ্য দূর করে একটি মানবিক দেশ গড়ে তুলি।

মাহে রমযানের তাৎপর্য তুলে ধরে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পবিত্র মাহে রমযান আমাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি পাশবিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করে কিভাবে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গড়তে হয়, সেটি আমাদের শিক্ষা দেয়। রমযান থেকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা নিয়ে জন্মভূমি বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে সবাইকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ। ইফতার মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, কামাল উদ্দিন সবুজ, ইলিয়াস খান, বিএফইউজে ডিইউজের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় প্রেসক্লাব ডিআরইউ’র নেতৃবৃন্দ সহ সাংবাদিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।