পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ভারতের, পাঁচ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন নিহত এবং পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে ১০ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পাঁচ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের নয় জায়গায় ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র  হামলার পর বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে ভারত শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন সাধারণ মানুষ মারা গেছেন এবং ৩২ জন আহত হয়েছেন।

দিল্লির বিমান হামলার জবাবে দেশ দুটির মধ্যে কার্যত সীমান্ত হিসেবে পরিচিত এলাকায় পাকিস্তান যখন ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে, তখন এই ঘটনা ঘটে ।

স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গুলিবর্ষণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে পুঞ্চ এবং মেন্ধার এলাকায়। বাড়ি এবং দোকানপাট সহ অনেক ভবন গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুঞ্চের স্থানীয় সাংবাদিক জামরুদ মুঘল ফোনে বিবিসিকে বলেন, “বুধবার রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি”।

“মানুষ পুরো রাত ঘুমাতে পারেনি। সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে গেছে,” বলেন মুঘল। “আমাদের স্থানীয় হাসপাতাল এখন আহত মানুষে ভরে গেছে।”

এর আগে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের নয় জায়গায় ক্ষেপনাস্ত্র  হামলা চালানোর দাবি করেছে  ভারত সরকার। এদিকে ভারতের দুইটি বিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান।

ভারতের সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডেলে দেয়া এক পোস্টে দাবি করেছে, ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকার ভিম্বার গলিতে কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তান।

গত ২২শে এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এ হামলা চালানো হলো। সবশেষ খবরে জানা যাচ্ছে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছে, দেশটির তিনটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত, এবং হামলায় দুইজন শিশুসহ এ পর্যন্ত মোট আট জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নাম দিয়ে চালানো এই হামলায় ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’কে নিশানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। যেসব স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেখান থেকে ভারতের ওপরে ‘সন্ত্রাসী’ হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ভারতের সরকার দাবি করেছে। তবে, পাকিস্তানের কোনও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয় নি বলে দাবি করেছে ভারত।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা সময়মতো এ হামলার জবাব দেবে। তাদের বিমান বাহিনীর জেট বিমানগুলি ইতিমধ্যেই আকাশে রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে যে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করছে যে পাকিস্তান থেকেও ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলের ভিম্বর গলিতে গুলি চালানো হচ্ছে।

সাধারণ নাগরিক ও মসজিদকে লক্ষ্যবস্তু করেছে ভারত: পাকিস্তান

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিক ও মসজিদকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছিলো ভারত।

ভারতের আঘাত হানা ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ভারত পাকিস্তানের মসজিদগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এটি মোদী সরকারের আমলে বেড়ে ওঠা সংকীর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন— যেখানে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে।”

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন, “এটি মনে রাখা জরুরি যে যেসব স্থানে হামলা হয়েছে, সেগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম আগের দিন গিয়েছিলো। তারা দেখেছে যে ওই স্থানগুলোতে বেসামরিক মানুষজন অবস্থান করছিলো।”

তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান এবং একটি কমব্যাট ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা

ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন।

পরে হোয়াইট হাউজে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, “এটা লজ্জর ঘটনা”।হোয়াইট হাউজে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমি শুধু চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সংঘাত শেষ হোক।”

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, “মহাসচিব দুই দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তানের আরও একটি সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন

যেসব এলাকায় ভারতীয় হামলা হয়েছে, সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে বিবিসি কথা বলতে পেরেছে। পাকিস্তানের মুজাফফরাবাদের বাসিন্দা শাহনওয়াজ বলেন, ‘আমরা তখন বাড়িতে গভীর ঘুমের মধ্যে ছিলাম, বিস্ফোরণের শব্দে আমরা কেঁপে উঠি।এখন আমরা আমাদের পরিবার, নারী ও শিশুদের নিয়ে কোনও একটা নিরাপদ স্থানের খোঁজে ঘুরছি।”

শহরে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে, আরও হামলার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের পাশে যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে, সেখানকার এক বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, “প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়ি যখন কেঁপে ওঠে, তখন আমি গভীর ঘুমের মধ্যে ছিলাম। “আমি পরিস্থিতিটা ঠিক বুঝে উঠতে পারার আগেই আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ল,” বলছিলেন মি. ওয়াহিদ।

গত ২২ শে এপ্রিল পহেলগাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত বৈসারণে পর্যটন স্পটে বন্দুকধারীদের হামলায় মােট ২৬জন নিহত এবং ১৭জন আহত হয়েছিলেন।

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ইতিহাস

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। তার বেশিরভাগই ঘটেছে কাশ্মীর ঘিরে।

ভারতবর্ষ ভাগের কয়েক মাস পরেই প্রথম সংঘর্ষের সূচনা হয়। পরে ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মীরকে দুইভাবে বিভক্ত করে একটি যুদ্ধবিরতি হলেও উভয় পক্ষই পুরো কাশ্মীরের অধিকার দাবি করতে থাকে।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তানি বাহিনী সীমানা অতিক্রম করে ভারত শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করার পর তাদের মধ্যে স্থলে ও আকাশে পুরাদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে আবার দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সেই সময় ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাপন্থীদের সহায়তা করে, যার ফলে পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্ম হয়।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সেনারা আবার ভারত শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার পর এটিই প্রথম দুই দেশের মধ্যে বড় আকারের সংঘর্ষের ঘটনা, যা সারা বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২০১৬ সালে উরি হামলার পর পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত।

২০১৯ সালে পুলওয়ামা বোমা হামলার ঘটনার জেরে বালাকটের কাছে বিমান হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা বিমান হামলা করে তার জবাব দেয়। কারগিল যুদ্ধের পর সেবারই দুই দেশের মধ্যে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *