পদত্যাগ করছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

নিউজিল্যান্ডের ব্যাপক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আসছে ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনেও আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি আমি শেষ অফিস করবো।’ তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা নির্ধারণের জন্য ভোট হবে। নিউজিল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ অক্টোবর।

২০১৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী সরকারপ্রধান হয়েছিলেন জেসিন্ডা আরডার্ন। এরই মধ্যে তিনি এই পদে ৬টি বছর কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে যেসব প্রাণহানি হয়েছে তার বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে ক্রাইস্ট চার্চে মুসলিমদের ওপর সন্ত্রাসী টেরেন্টের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে তিনি যেভাবে মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তা বিশ্বের কাছে এক নজির হয়ে আছে।

পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর এ ঘোষণায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজ। তিনি জাসিন্দাকে বুদ্ধিমতী, শক্তিশালী এবং সহানুভূতিশীল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

জাসিন্দা আরডেনের বয়স এখন ৪২ বছর। তিনি বলেছেন, গ্রীষ্মের অবকাশের সময় ভবিষ্যত নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন জাসিন্দা। পরের বছরই তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সন্তানের জন্ম দেন। নির্বাচিত কোনো বিশ্ব নেতার মধ্যে সন্তানের মা হওয়ার দিক দিয়ে তিনি দ্বিতীয়।

করোনা মহামারির মধ্যে তিনি নিউজিল্যান্ডকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করেছেন। অর্থনৈতিক মন্দা, ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে গুলি এবং হোয়াইট আইল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মধ্য দিয়ে দেশকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেছেন, শান্তির সময় দেশ পরিচালনা এক রকম। আর সংকটের সময় তা অন্যরকম।

২০২০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে লেবার পার্টি ভূমিধস জয় পায়। জাসিন্দা আরডেন বলেছেন, সামনের চ্যালেঞ্জ নতুন কারো কাঁধে নেয়া দরকার। ওদিকে নতুন নেতা নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী রোববার। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না দলের উপনেতা গ্রান্ট রবার্টসন। সেখানে যদি দলীয় নেতা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দলের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন আদায় করতে না পারেন, তাহলে এই ভোট লেবার সদস্যদের কাছে ফিরে যাবে।

জাসিন্দা আরডেন সরকার যেসব অর্জন সম্পন্ন করেছে তার মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক গৃহায়ণ, শিশু দ্রারিদ্রতা কমানো।

নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন দয়ালু নারী হিসেবে। বিশেষ করে ক্রাইস্টচার্চে যখন সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টেরেন্ট নামাজ আদায়রত মুসলিমদের ওপর নিষ্ঠুরের মতো পাশবিকভাবে গুলি চালিয়ে বাংলাদেশি সহ কমপক্ষে ৫১ জন মুসলিমকে হত্যা করে, তখন শোকাহত মুসলিমদের কাতারে মিশে গিয়েছিলেন জাসিন্দা। তিনি মুসলিমদের জড়িয়ে ধরে আপন করে নিয়ে সান্তনা দিয়েছেন। এ দৃশ্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *