দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ, অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি

পর্যটন সময় চিন্তা
শেয়ার করুন

ফয়সাল আমিন কাজি (ফাহিম ফয়সাল): ভারত মহাসাগরের সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। শান্ত, মনোরম পরিবেশ ও পুরোনো সমুদ্র সৈকত মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ, যেখানে পানির রঙ নীল আর বালির রঙ সাদা। এখানকার দ্বীপগুলোর চারদিকে ঘিরে আছে সাগরের অফুরন্ত জলরাশি।

এশিয়ার সবচেয়ে ছোট এবং পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ মালদ্বীপ। দেশটিতে প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন। সূর্যাস্তের পর ঢেউয়ের তালে তালে জ্বলজ্বল করতে থাকে দেশটির বালুময় সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের পানি থেকে বিচ্ছুরিত হয় অদ্ভুত আলো। সে এক অসাধারণ দৃশ্য যা দেখে চোখ বিস্ময়ে আটকে থাকে। এ জন্য অনেকের কাছেই হানিমুনের জন্য সবচেয়ে পছন্দের এ দেশ।

একমাত্র মালদ্বীপেই বিশালাকার সাবমেরিনে করে সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়ানো যায়। পর্যটকরা প্রায় ১৮০ ফুট পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে যেতে পারেন। গভীর সমুদ্রের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে। যেখান থেকে পর্যটকরা সমুদ্রের বিভিন্ন রঙের মাছ খুব কাছ থেকে দেখতে পারেন, শুনতে পারেন সামুদ্রিক পাখির ডাক।

মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণগুলোর একটি হলো পানির নিচে রেস্টুরেন্ট যা সমুদ্রের ৬ মিটার গভীরে স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে নির্মিত। এতে একসঙ্গে ১০ থেকে ১২ জন অতিথি বসতে পারেন। নানা রঙের সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে দেখা যায় নানা প্রজাতির সামুদ্রিক বড় মাছ।
👉আপনার ব্যবসা বা কোম্পানি প্রোফাইল ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনার পাশে সবসময় আছে ‘ভার্সডসফট’।

সাধ্যের মধ্যে ভ্রমণের সব সুখ মালদ্বীপে
দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অন্যতম পর্যটনের দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগর বেষ্টিত অপরূপ সুন্দর এই দেশ ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম প্রিয় স্থান।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ ভ্রমণ তুলনামূলক কিছুটা ব্যয়বহুল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মালদ্বীপ মানেই কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। মাঝারি ব্যয়ে পরিকল্পনা করে মালদ্বীপ ঘুরে আসা যায়।

ঢাকা থেকে মালের ফ্লাইটের ভাড়া কিছুদিন আগেও ছিল ৫০-৬০ হাজার টাকার ঘরে। তবে এখন বাংলাদেশের প্রবাসী ও পর্যটকরা ৪৫ হাজারে মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে পারছেন।

মালদ্বীপ ভ্রমণ না করা অনেক পর্যটকের ধারণা মালদ্বীপ মানেই হোটেলে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয়। রিসোর্টে থাকলে এক রাতে গুণতে হয় ১০০ থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত।

তবে রাজধানী মালে শহরে রয়েছে স্বল্প মূল্যের হোটেলেও। ৩০-৫০ ডলারের মধ্যে ডাবল/ফ্যামিলি বেডের রুম পাওয়া যায়। এর চেয়েও কম ভাড়ার হোটেল রয়েছে কিছু। মান কিছুটা কম হলেও স্বল্প-মধ্যম আয়ের ভ্রমণকারীদের জন্য হোটেলগুলো চমৎকার। শিক্ষা সফর করা ব্যক্তিরা এমন হোটেল বিবেচনা করতে পারেন। প্রায় সব হোটেলের মালিক মালদ্বীপিয়ান হলেও অধিকাংশ হোটেলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বাংলাদেশিরা।

খাবার-দাবারে অন্তত বাংলাদেশিদের তেমন কোনো সমস্যাই নেই। মালেতে বাংলাদেশি হোটেল আছে কয়েকটি। গরুর মাংস থেকে ভাত- দেশি অনেক খাবারই পাওয়া যায় মালদ্বীপের হোটেলগুলোতে। বাংলাদেশের গরু মালদ্বীপের রুপিতে ৪০, ভারতের গরুর মাংস ৩৫, বাংলার রুই মাছ ৩০-৩৫ রুপি।
👉ডায়নামিক ওয়েবসাইট দিয়েই গড়ে তুলুন আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি।
সেবা দেয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে আছে ‘ভার্সডসফট’।


মালদ্বীপের আয়তনে ভূখণ্ড খুবই কম। খাদ্য-ফসলের জন্য মালদ্বীপ অনেকটাই নির্ভরশীল শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশের ওপর। মালদ্বীপের খাবারের স্বাদ নিতে হলে সামুদ্রিক মাছই শ্রেয়। সামুদ্রিক মাছ ভেদে দাম ৫০-১০০ রুপি। মালদ্বীপের এক রুপি বাংলাদেশের পাঁচ টাকার মতো।

মালে খুবই ছোট্ট শহর। মালদ্বীপের অধিবাসীদের প্রায় সবারই স্কুটি বা বাইক রয়েছে। পর্যটকরা মালে শহরে যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করেন ট্যাক্সি। মালে শহরের যেই জায়গায় নামেন ৩০ রুপি ভাড়া দিতে হবে। রাজধানী মালেকে ব্রিজ দিয়ে হনুমালের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। মালে থেকে হনুমালেতে সাগর পাড়ি দিয়েও যাওয়া যায় আবার ব্রিজ দিয়েও যাওয়া যায়। ব্রিজ দিয়ে গেলে ট্যাক্সিতে পড়বে ৭৫ রুপি আর বোটে গেলে দশ রুপি। হনুমালে মালদ্বীপের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠছে। ঢাকার বারিধারার মতো আবাসিক এলাকা। বড় বড় বিল্ডিং, বিভিন্ন দ্বীপ থেকে হনুমালেতে অনেক ফ্ল্যাট কিনছেন।

ছোট্ট শহর মালে এক-দুই দিনেই ঘুরে দেখা যায়। মালের বাইরে অন্য কোনো দ্বীপে যেতে হলে স্পিডবোট, স্টিমার প্রধান মাধ্যম। সেক্ষেত্রে দ্বীপ ভেদে স্পিডবোটে আসা-যাওয়ার ভাড়া ২০০-৮০০ রুপি।

অনেক প্রবাসী পর্যটক মালদ্বীপ বিমানবন্দরে নেমেই স্পিডবোটে রিসোর্টে যান। যারা অনেক অর্থশালী তারা বিমানে নেমে আবার ডমেস্টিক ফ্লাইটে বড় বড় রিসোর্টে যান। মালদ্বীপের মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে রিসোর্টে যেতে হয়। রিসোর্ট একটু বেশি ব্যয়বহুল। একদিন-রাত রিসোর্টে কাটাতে হলে সর্বনিম্ন ২০০ ডলার গুণতে হবে। এরপর রিসোর্ট ভেদে কয়েক হাজার ডলারও ব্যয় হতে পারে এক রাতের জন্য।

মালদ্বীপের আয়তনের অধিকাংশই ভারত মহাসাগর জুড়ে। মালদ্বীপের বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গও এই মহাসাগর। ভ্রমণপিপাসুদের অনেকেই সার্ফিং, বোটিং করতে পারেন ভারত মহাসাগরের বুকে। এজন্য খুব বেশি অর্থ গুণতে হয় না।

এক ঘণ্টা সার্ফিংয়ের জন্য ৩০-৪০ রুপি খরচ হবে। সার্ফিং, বোটিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি রাইড নিলে প্যাকেজে ২০০-৩০০ রুপির মধ্যেও সম্ভব। মালদ্বীপের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় প্যারাগ্লেডিং এবং সাবমেরিন।
👉আপনার ব্যবসা বা কোম্পানি প্রোফাইল ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনার পাশে সবসময় আছে ‘ভার্সডসফট’।

শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৪৫০ মাইল পশ্চিম-দক্ষিণে ১ হাজার ২০০টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। এর মধ্যে ২৫০টি দ্বীপ ব্যবহারযোগ্য। এতে রয়েছে ২৮টি অ্যাটোল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। বিষুবরেখার কাছে অবস্থিত হওয়ায় মালদ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে মাত্র একটি ঋতু। সারাবছরের গড় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৯৮ বর্গ কিলোমিটারের শতভাগ মুসলিম দেশ মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় ভাষা ধিবেহী আর মালদ্বীপীয় রুপাইয়া হলো মুদ্রার নাম।

দেশটির মাথাপিছু আয় ৯ হাজার ১২৬ ডলার। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। আদিম কাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূলভিত্তি। মালদ্বীপ টুনা মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে দেশটির বড় শিল্প হলো পর্যটন। বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৬৫ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে। বর্তমানে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে ‘সালাতানাতে মালদ্বীপ’ থেকে ‘রিপাবলিক মালদ্বীপে’ পরিণত হয়।

ভ্রমণপ্রেমীরা অনিন্দ্য সুন্দর এই দেশটিতে ঘুরে আসতে পারেন বছরের যেকোনো সময়। চমৎকার আতিথেয়তা, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর অপার সৌন্দর্যের এই দেশ স্মৃতিতে রেখে দেবে একরাশ মুগ্ধতা।

আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *