তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে পালিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইরানের রাজধানী শহর তেহরানের অভিজাত হোটেল ‘পারসিয়ান আজাদি’র অত্যাধুনিক লবিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই চমৎকার আয়োজন।
তেহরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম খান এবং তাঁর সহধর্মিনী ফারজানা নাসরিনের আমন্ত্রণে আনন্দমুখর ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শতশত অতিথি।
প্রধান অতিথি ছিলেন ইরানের খনিজ সম্পদ, শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী সাইয়্যেদ হামিদ আমেলি। উপমন্ত্রীর উপস্থিতির জন্য রাষ্ট্রদূত গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এটিকে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম খান ইরানের বন্দর আব্বাসে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিস্ফোরণে ইরানের সরকার ও জনগনের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানান।
২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত এই দিনটিকে জাতীয় মর্যাদা এবং জনগণের অদম্য ইচ্ছার এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। নয় মাসব্যাপী চলা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী অসংখ্য শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন: রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানারকম চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বিপর্যয় কেটে উঠেছে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সূচকগুলোতে আঞ্চলিক সমকক্ষদের ছাড়িয়ে গেছে।
রাষ্ট্রদূত ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন: যুব-নেতৃত্বাধীন ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটে।
রাষ্ট্রদূত চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম খান প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সংস্কার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশংসা করেন।
ইরান-বাংলাদেশের মধ্যকার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন। উভয় দেশ জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
ইরানের খনিজ সম্পদ, শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী সাইয়্যেদ হামিদ আমেলিও দু’দেশের মধ্যকার সুসম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইরান-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রসহ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিনিময়ের ওপরও জোর দেন তিনি।
বহু দেশের কূটনীতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক বহু সংস্থার দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি ইরানের শিল্প, খনিজ, বাণিজ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্ববর্গ এবং ইরান প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
নুজাবা মাহমুদ অর্মিতার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই আনন্দমুখর উৎসব জাতীয় দিবসের কেক কাটার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
নাসির মাহমুদ সিনিয়র সাংবাদিক। ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, রেডিও তেহরান