আগামী ৭ দিন প্রবেশ ফি লাগবেনা
সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জন আটক, মামলা দায়ের
হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী
শুক্রবারও প্রচুর পর্যটক এসেছিলেন প্রকৃতি কন্যা জাফলং-এ দু‘দন্ড শান্তি পেতে। দেহ মন জুড়িয়ে নিয়েছেন জাফলং-এর পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলের স্পর্ষে। নয়নাভিরাম মেঘালয়ের দুই পাহাড়ের মাঝে ‘ডাউকী’ ঝুলন্ত ব্রীজ তার নিচ দিয়ে প্রবাহমান নদী বয়ে চলছে সাদা সাদা পাথরের গা ছুয়ে। অদূরেই ঝর্ণা ধারায় অনেকেই স্নান সাড়ছেন। ঈদের ছুটিতে দেশ বিদেশ থেকে আশা পর্যটকদের ঢল নামে দেশের অন্যতম এই ‘মায়াবি’ প্রকৃতি কন্যার কাছে।
এদিকে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলং এর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে একেবারে আতংক কাটেনি। এর আগে বৃহষ্পতিবার সেখানে টিকিট নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে পর্যটকদের মারধরের ঘটনা ঘটলে সেখানে আতংক ও অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। এই হামলার ঘটনায় সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন নিন্দা করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।
অন্যদিকে আগামী এক সপ্তাহ জাফলং স্পটে প্রবেশে কোনো টিকিট লাগবে না বলে বৃহস্পতিবার বিকালে ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। তিনি জানান, ওই হামলার ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে টিকেট কেনা নিয়ে পর্যটকরদের সঙ্গে কাউন্টারের লোকজনের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে কাউন্টারে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা লাঠি-শোটা দিয়ে পর্যটকদের পেটাতে শুরু করে। তখন পাশে থাকা একজন তরুণী ও কোলে থাকা শিশু বাচ্চা নিয়ে একজন মহিলা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালায় স্বেচ্ছাসেবকরা।এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ কাজ করছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশ সুপার আরও বলেন, পর্যটকদের ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সূত্র জানায় জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়ের করেন সুমন সরকার নামের এক পর্যটক। বৃহস্পতিবার কথাকাটাকাটির জেরেই পর্যটক দলের উপর হামলা চালায় জাফলংয়ের টিকিট কাউন্টারের কাছে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক । এতে সুমনসহ কয়েকজন আহত হন।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়েরের পর আটক ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় পর এই ৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃরা হলেন: গোয়াইঘাটের পন্ন গ্রামের লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস (২১), ইসলামপুর গ্রামের মো. সেলিম আহমেদ (২১), নয়াবস্তি এলাকার সোহেল রানা, পশ্চিম কালীনগর গ্রামের নাজিম উদ্দিন, ইসলামপুর রাধানগর গ্রামের জয়নাল আবেদীন।
এছাড়া হামলাকারী তিন স্বেচ্ছাসেবককে বরখাস্থ করেছে প্রশাসন। ঘটনায় সময়কার বেশকিছু ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ঐ দলে থাকা কিছু নারী পর্যটক তাদেরকে থামাতে গিয়ে লাঞ্চিত হন। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘আক্রান্ত পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। প্রশাসন থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।