ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে তুলছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকটি বকেয়া ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সম্পত্তি নিলামে বিক্রির নোটিশ দিয়েছে। রবিবার (২৩ মার্চ) একটি জাতীয় দৈনিকে সম্পত্তি বিক্রির জন্য নিলামের নোটিশ প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে এস আলম গ্রুপের বন্ধকি সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায়ের জন্য নিলাম নোটিশ দিয়েছিল জনতা ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০ মার্চ পর্যন্ত সুদ ও আসল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের মোট পাওনা ২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এই টাকা আদায়ের জন্য ইসলামী ব্যাংক ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজের বন্ধকি ২০১ দশমিক ৭৫ শতক জমি ভবন স্থাপনাসহ বিক্রি করবে। জমিগুলো চট্টগ্রামে অবস্থিত। আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আগ্রহী ক্রেতাদের বিডিং (দামের প্রস্তাব) করতে বলা হয়েছে নোটিশে।
২০১৯ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে এর বোর্ডের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। এরপর নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয় এস আলম গ্রুপ। বর্তমানে এস আলম গ্রুপের কাছে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৮৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে জব্দ আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডও ভেঙে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপের কর্তৃত্বের অবসান হয়।
এর আগে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বন্ধকি সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায়ের জন্য নিলাম নোটিশ দিয়েছিল জনতা ব্যাংক।
এই গ্রুপের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দেয়।
গত ১ নভেম্বর জনতা ব্যাংক পত্রিকায় নিলামসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, এ ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এ দাম পাওনা টাকার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ কম। এ সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়। বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে সাধারণ বীমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদে-আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
এর মধ্যে ৬১৭.৪৭ কোটি টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩.১৮ কোটি টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯.৯৯ কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ। সুদাসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।